মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

যেন মৌচাকের মধু

গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীর পদ পেতে ৪ জনের দৌড়ঝাঁপ

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

গণপ‚র্ত অধিদপ্তর হলো দুর্নীতিবাজদের জন্য মৌচাক। ওই মৌচাকের মধুর নহর এতো বেশি যে সুন্দরবনের মধুর মিষ্টিকেও হার মানিয়ে দেয়। এই অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী পদ যেন মৌচাক। দেশব্যাপী সরকারি আবাসিক ও দাফতরিক ভবন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান এই গণপ‚র্ত অধিদপ্তর। এখানে উন্নয়নমূলক কাজের প্রবল্প বরাদ্দের টাকা বাতাসে উড়ে। আর এই কাজ ও প্রকল্প বরাদ্দের প্রধান হর্তাকর্তা হচ্ছেন প্রধান প্রকৌশলী। ওই লোভনীয় পদটির জন্য সরকারি চাকরিতে কর্মরত সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে দৌঁড়ঝাপ শুরু হয়ে গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এ পদের জন্য যারা দৌঁড়ঝাপ করছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ড. মো. মঈনুল ইসলাম, মোসলেহ উদ্দীন আহাম্মদ, মো. সামছুদ্দোহার, আশরাফুল আলম। এরা সবাই অতিরিক্ত প্রকৌশলী পদে কর্মরত রয়েছেন।

সুত্র জানায়, বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী সাহাদাত হোসেনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরের ৩০ ডিসেম্বর। কে হচ্ছেন পরবর্তী প্রধান প্রকৌশলী তা নিয়ে অধিদপ্তরে চলছে আলোচনা-গুঞ্জন। এই আলোচনায় চার কর্মকর্তার নাম উঠে এসেছে। এরা ইতোমধ্যে প্রভাবশালী মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের অফিস-বাসায় দৌড় ঝাপ শুরু করেছেন। অনেকেই মোটা অংকের টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছেন। আবার অনেকই দুদকের ভয়ে দায়িত্ব নিতে চান না বলেও জানা গেছে। কারণ পাবনার রুপপুর বালিশকান্ডে গণপ‚র্ত অধিদপ্তরে কয়েকজন প্রকৌশলী এখন কারাগারে রয়েছেন। এসব কর্মকর্তাদের বিষয়ে বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী সাহাদাত হোসেন এবং মন্ত্রণালয় থেকে কিছুই করতে পারেনি। এজন্য অধিদপ্তরের কর্তকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, স¤প্রতি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বালিশ কেলেঙ্কারির ঘটনা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ানোর কারণে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত হলেও গণপূর্ত অধিদপ্তরের বেশ কয়েকজন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি মন্ত্রণালয় থেকে। এমনকি জাতীয় সংসদের তদন্ত কমিটি সংসদ ভবন এলাকার দায়িত্বে থাকা কয়েকজন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করলেও তা মানেনি গণপ‚র্ত অধিদপ্তর। বরং তাদের কয়েক দফা পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দুদক ১৩ জন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে।

অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা বর্তমানে প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেনকে শুদ্ধি অভিযানে গ্রেফতার হাওয়া জিকে শামীমের টাকা দিয়ে প্রধান প্রকৌশলী বানিয়েছেন। যে কারণে অধিদপ্তরে যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির কারণে অধিদপ্তরের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে বলে কর্মকর্তারা দাবি করেছেন। এছাড়া পাবনার বালিক কান্ডের মতো ঘটানায় প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেন প্রশাসনিকভাবে কিছু করতে পারেনি। সে কারণে কর্মকর্তারা তার উপর ক্ষুব্ধ। তিনি আর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ আর পাচ্ছেন না।

রংপুর গণপ‚র্ত জোনের মো. আশরাফুল আলমকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগের জন্য সুপ্রীম কোর্ট রায় দিয়েছেন। সেই রায় বাস্তবায়ন হলে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রংপুর গণপ‚র্ত জোনের মো. আশরাফুল আলম গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী হতে পারবেন। এ ছাড়া বিসিএস পাবলিক ওয়ার্কাস ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশনের সিনিয়রিটির ভিত্তিতে প্রধান প্রকৌশলী পদে পদায়নের জন্য সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ দুদক তদন্ত করে অভিযোগ নিম্পত্তি করেছে। যার দুদকরে উপ-পরিচালক সৈয়দ মোমিন হোসেন চিঠি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। সব কিছু ঠিক থাকলে তিনি হতে পারেন প্রধান প্রকৌশলী। ভাল কাজের জন্য পুরুস্কার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সউদী আরবে হজ্জ পালন করিয়েছেন মো. আশরাফুল আলমকে।
অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ঢাকা মেট্রোপলিটন জোনের কর্মকর্তার ড. মো. মঈনুল ইসলাম। স¤প্রতি গণপ‚র্ত ঠিকাদার সমিতির পক্ষে সোহেল রানা নামে এক ব্যক্তি গণপ‚র্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন ও ড. মইনুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ করা হয়। দুদকে দায়েক করা অভিযোগপত্রে সোহেল রানা বলেন, গণপ‚র্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন এবং ড. মইনুল ইসলামের সীমাহীন দুর্নীতির ফলে প্রতিষ্ঠানটি নিমজ্জিত হতে বসেছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ও গণপ‚র্ত মন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতির কোনো তোয়াক্কাই করেননি গণপ‚র্ত অধিদপ্তরের এই দুই প্রকৌশলী। তারা বিভিন্ন ঠিকাদার থেকে পার্সেন্টেজ নিয়ে কাজ পাইয়ে দিতেন। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মঈনুল ইসলাম অতীতে উচ্চশিক্ষার জন্য ৩ বছরের ছুটি নিয়ে বিদেশ গমন করেন। পরে তিনি বিনা ছুটিতে আরো ৬ বছর বিদেশে ছিলেন। চাকরি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। দীর্ঘ প্রায় নয় বছর পর দেশে ফিরে তিনি গণপ‚র্ত মন্ত্রণালয় ও গণপ‚র্ত অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তাকে বিশেষ উপঢৌকনের মাধ্যমে ‘ম্যানেজ’ করে আদালতে জাল কাগজপত্র জমা দিয়ে চাকরিতে স্ব-পদে ফিরে আসেন। ড. মঈনুল ইসলাকে প্রধান প্রকৌশলী বানাতে বরিশালের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী কাজ করছেন। আবার গণপূর্ত অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা এক জোট হয়েছে তাকে প্রধান প্রকৌশলী বানাতে।

অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ঢাকা গণপ‚র্ত জোনের মোসলেহ উদ্দীন আহাম্মদ। তিনি একজন সৎ অফিস। তিনি প্রধান প্রকৌশলী হতে দৌড় ঝাঁপ শুরু করেছেন। তিনি নোয়াখালীর হওয়ার তার জন্য একজন মন্ত্রী কাজ করছেন। তিনি একজন ভাল কর্মকর্তার বলে অধিদপ্তরে সকলেই বলেন।
ময়মনসিংহ গণপ‚র্ত জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো.সামছুদ্দোহার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ। তিনি সংস্থাপনে থাকা অবস্থায় ভাল কাজ করেছেন। তিনি সব সময় অধিদপ্তরের কাজ করছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, অষ্টম সংসদ আমলে গণপ‚র্ত শেরে বাংলা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মহসিন মিয়া এবং দুজন উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান ও মোসলেহ উদ্দিন দায়িত্বে ছিলেন। তদন্ত কমিটি কেনাকাটা ও সংস্কারকাজে অনিয়মের পাশাপাশি সংসদ লেকের সঙ্গে হাঁসের শেড নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণ পায়। এছাড়া উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিনকে তিন দফা পদোন্নতি দিয়ে বর্তমানে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও জিল্লর রহমানকে দুই দফা পদোন্নতি দিয়ে তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী করা হয়েছে।

দেশব্যাপী সরকারি আবাসিক ও দাফতরিক ভবন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান গণপ‚র্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। গণপ‚র্ত অধিদফতর সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন নতুন প্রধান প্রকৌশলী পদে প্রতিদ্বন›িদ্ব প্রার্থীদের মধ্যে যাকেই নিয়োগ দেয়া হোক সরকারের উচিত অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা। কোনো দুর্নীতিবাজ ও বিতর্কিত কর্মকর্তাকে এ পদে চান না তারা। সবকিছু বিবেচনা করে সরকার সঠিক ব্যক্তিকেই নিয়োগ দেবেন বলে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশ্বাস।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
twocents ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
Public works dept = Honey comb. Sure it is. Who doesn't know that? it's been like this for many decades. All of the govt. departments are like that; so why pick one?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন