শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মুসলমানদের ওপর ভারত গণহত্যা চালাতে যাচ্ছে

জেনোসাইড ওয়াচ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

অধিকৃত কাশ্মীর ও আসামে ও মুসলমানদের উপরে গণহত্যা শুরু করতে যাচ্ছে ভারত। গণহত্যা প্রতিরোধ ও বন্ধে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা জেনোসাইড ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা ডক্টর গ্রেগরি স্ট্যানটন এই মন্তব্য করেছেন। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য ও দেশটির সরকারি কর্মকর্তাদের এক অনুষ্ঠানে এই সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা তার উপস্থাপিত বক্তব্যে বলেন, গণহত্যা চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে ফেলেছে তারা। এসময় তিনি নাৎসী শাসনামলে জার্মানির সাথে নরেন্দ্র মোদির সরকারের অধীনে ভারদের সাথে তুলনা করেন।

১৯৯৬ সালে গণহত্যার ওপর গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তিনি। পরিকল্পনা থেকে শুরু করে কীভাবে একটি জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার নীলনকশা বাস্তবায়ন করা হয় তার প্রতিটি ধাপ সেই গবেষণায় তুলে ধরেন তিনি। তার এই প্রতিবেদন ‘গণহত্যার দশ ধাপ’ নামে ব্যপক সমাদৃত হয় ও তাকে বিশ্বজুড়ো খ্যাতি এনে দেয়।

ভারতে কীভাবে একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে উদ্দেশ্য করে ধাপে ধাপে গণহত্যার মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে অনুষ্ঠানে সেই চিত্র তুলে ধরেন তুলে ধরেন স্ট্যান্টন। তিনি জানান, গণহত্যা করার প্রথম ধাপ হচ্ছে সমাজে বিভাজন তৈরি করা। এজন্য মোদি সরকার হিন্দুদের মধ্যে ‘আমরা বনাম তারা’ ধারণা সৃষ্টি করেছে। দ্বিতীয় ধাপ বাকিদের থেকে তাদেরকে আলাদা করে অনাকাঙ্খিত হিসেবে তুলে ধরা, এজন্য মোদি সরকার মুসলমানদেরকে ‘বিদেশি’ হিসেবে পরিচয় দেয়ার চেষ্টা করছে। তৃতীয় ধাপ হচ্ছে বৈষম্য সৃষ্টি করে তাদের সব অধিকার কেড়ে নেয়া। ভারতে মুসলমানদেরকে নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে তাদেরকে সকল নাগরিক বা মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ফলে তাদের প্রতি বৈষ্যম্য করা হলেও কোন আইনগত ভাবে বৈধ হবে। চতুর্থ ধাপ অমানবিকীকরণ করা; এই ক্ষেত্রে যেকোনো ভাবে ভুক্তভোগীদের ‘নিকৃষ্ট’ হিসেবে প্রতিপন্ন করা হয়। যেমন ভারতে মুসলমানদের ‘সন্ত্রাসী’, ‘উইপোকা’ অথবা ‘ক্যান্সারের মতো রোগ’ বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। যাতে তাদেরকে সমাজের অন্য সবাই তাদেরকে ‘ক্ষতিকর রোগ’ হিসেবে ‘নির্ম‚ল’ করা জরুরি মনে করে। পঞ্চম ধাপ হচ্ছে গণহত্যা সংঘটনের জন্য একটি সংস্থা তৈরি করা যমন ভারতের ‘আরএসএস’। কাশ্মীরে এই ভ‚মিকা পালন করেছে ইন্ডিয়ান আর্মি। অন্যদিক আসামে পুলিশ ও এনআরসি বাস্তবায়নকারীরা। ষষ্ঠ ধাপ হচ্ছে মেরুকরণ; যা করতে ব্যপক প্রচারণা শুরু করা হয়। সপ্তম ধাপে শুরু হয় প্রস্তুতি। অষ্টম ধাপ ধাপ থেকে নিপীড়ন চালানো শুরু হয়। বিভিন্ন আইন ও পদ্ধতিতে ভুক্তভোগীদের অবরুদ্ধ ও বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। নেতাদের জেল দিয়ে বা আটক রেখে ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়ে তাদের প্রতিবাদের ভাষা কেড়ে নেয়া হয়। বর্তমানে আসাম এবং কাশ্মীর এই ধাপে রয়েছে।

এর পরেই শুরু হবে নবম ধাপ নির্ম‚লকরণ, গণহত্যা ও বিতাড়নের মাধ্যমে এই ধাপ সম্পন্ন করা হবে। যেমনটি হয়েছিল মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে। সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে অপরাধ অস্বীকার করা।

এর আগে মার্কিন প্রখ্যাত এই মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছিলেন। তার এই প্রস্তাবনার ওপর ভিত্তি করে রুয়ান্ডা এবং বুরুন্ডিতে গণহত্যার তদন্তে একটি কমিশন গঠন করেছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। কম্বোডিয়া, রুয়ান্ডা ও রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়েও তার গবেষণা রয়েছে; যা বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত।

সিটিজেনস ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিসের সেক্রেটারি ও মানবাধিকার কর্মী তিস্তা সেটালভাদও মার্কিন কংগ্রেস কর্মকর্তাদের ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, আসামে মানবাধিকার ভ‚লুণ্ঠিত করার জন্য জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকাকে (এনআরসি) ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত কিছু বিধি-বিধান এবং মান নির্ধারণকারী প্রক্রিয়া রয়েছে; কিন্তু সেসবের কিছুই মানা হয়নি। আমরা সংবিধানের নীতিমালার আলোকে এটি বাস্তবায়ন করার আহŸান জানিয়েছি।

ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের সমালোচনা করে মানবাধিকার কর্মী তিস্তা সেটালভাদ বলেন, এটা দেশজুড়ে মানুষের মাঝে প্রচুর দুর্ভোগ তৈরি করবে। এটা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের বৈশিষ্ঠকে মৌলিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। যে কারণে সচেতন সব নাগরিক সংবিধানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা না করার জন্য সরকারের প্রতি আহŸান জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ঘিরে ভারতে চলমান সহিংসতা, জম্মু-কাশ্মীরের অচলাবস্থা, মুসলিম নিপীড়নের ঘটনায় ওয়াশিংটন ডিসিতে কংগ্রেস সদস্য ও মার্কিন কর্মকর্তাদের নিয়ে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল দেশটিতে বসবাসরত ভারতীয় মুসলিম-হিন্দুদের তিনটি সংগঠন। এই তিন বেসরকারি সংগঠন হলো, ইন্ডিয়ান আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিল (আইএএমসি), এমগেইজ অ্যাকশন ও হিন্দুস ফর হিউম্যান রাইটস (এইচএফএইচআর)। সূত্র : সিয়াসাত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (16)
মোঃ মিজান মিয়া ছাত্র ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৫ এএম says : 0
এটা আমাদের বিশ্বের মুসলমান দের খুবি কষ্টের বিষয়।আমরা যদি বিশ্বের সব মুসলমান...
Total Reply(0)
Main Uddin Shohag ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৬ এএম says : 0
Right
Total Reply(0)
নয়ন ভরা জল নয়নভরাজল ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৭ এএম says : 0
আল্লাহ সকল মুসলমান ভাই বোন কে তুমি রক্ষা করো
Total Reply(0)
Muhammad Ashraf Ali ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৭ এএম says : 0
ইয়া আল্লাহ ইয়া রাহমান রাহিম আমাদের এই অসহায় বনি আদমের পতি মায়ার নজরে থাকাও
Total Reply(0)
Shoeb Sadab ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৯ এএম says : 0
NRC মূলত গণহত্যা পরিকল্পনারই অংশ।
Total Reply(0)
Hasan Khokan ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৯ এএম says : 0
ভূল বললেন ৷ ভারতে অনেক দিন ধরে কাশমিরে গনহত্যা চলছে
Total Reply(0)
Nijam Uddin ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৯ এএম says : 0
হায়দ্রাবাদের ইতিহাস তাই বলে।
Total Reply(0)
Md Neamotullah ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৯ এএম says : 0
যা হচ্ছে তাতে ভেঙ্গে চুরমার হবে ভারত
Total Reply(0)
Mazedul Alam ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৪০ এএম says : 0
প্রতিবেদনের ধাপগুলির বিস্তারিতে রোহিংগাদের সাথে হওয়া গণহত্যা মিলে যায়, আর ভারতের এই ইভিল মটিভ যদি সত্যি সত্যিই থাকে তাহলে এটা বিশ্বজুড়ে প্রকট আকার ধারণ করতে পারে, আর আমার মনে হয়না ভারত এই ভুল করবে কারণ এখন পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতেই পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মুসলিম জনগোস্ঠী বিদ্যমান।।।
Total Reply(0)
Md Aminul Huq ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৪০ এএম says : 0
এখন পৃথম ধাপ গেলো, তারপর এমন পরিস্থিতি হবে যে বাদ্য হবে দেশ তেগ করতে। কাশ্মীরের অবস্থা কেমন হলো। ওরা খামোখা এন আর সি করেনি মসকারা করার জন্য।
Total Reply(0)
MD Afzal Hossain ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৪০ এএম says : 0
আতীত ইতিহাস এটাই বলে। ভারতে জাতিগত নির্মূলের ষড়যন্ত্র চলছে । বিশ্ব মোড়লদের হস্তক্ষেপ কামনা করি । নয়তো ভারতীয় উপমহাদেশে সহ দক্ষিণ এশিয়ায় জাতিগত দ্বন্দ্ব সহিংসতার রূপ ধারণ করবে।
Total Reply(0)
Hridoy Hossain ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৪১ এএম says : 0
নমরুদ ফেরাউন ও পারে নাই। তাই তুমরা পারবা না।ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)
Kaysir Nayan ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৪১ এএম says : 0
যেহেতু প্রস্তুতি চলছে এখনই বন্ধ করার ব্যবস্থা করেন। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ চাইলে সবই পারে।নিরাপরাদ মানুষ মানুষ হত্যা রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসুন।
Total Reply(0)
Sufia Parvin ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৪১ এএম says : 0
আল্লাহ আপনি দয়া করুন,,হেফাজত করুন ভারতীয় মুসলিম দের,,
Total Reply(0)
Tanzin Ahmed ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৪১ এএম says : 0
উগ্র সাম্প্রদায়িক বিজেপির মতাদর্শ পুরো উপমহাদেশের জন্য হুমকি।
Total Reply(0)
Md. Shamsul Hoq ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১১:১৬ এএম says : 0
UN, International Community should alert before occurance.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন