শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পানির উৎকট গন্ধ

বিজয় দিবসে হাতিরঝিলে উপচে পড়া ভিড়

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

বিজয় দিবসের ছুটিতে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছিল দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। গতকাল বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছিল বিজয় দিবস উপলক্ষে উৎসবমুখর পরিবেশ। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিজয়ের আনন্দ উপভোগ করতে নগরীর বাসিন্দারা বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে ভিড় জমান। বিজয়ের রঙে মেতে উঠেছিল সবাই। লাল-সবুজ শাড়ি, পাঞ্জাবি পরে রাঙিয়ে তুলেছিল রাজধানীর হাতিরঝিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, মতিঝিল, আরামবাগ, জাতীয় প্রেসক্লাক, রবীন্দ সরোবরসহ নানা অনুষ্ঠানস্থলগুলো।

সরেজমিন দেখা গেছে, গতকাল ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের ছুটির দিনে রাজধনীর হাতিরঝিলে মানুষের উপচেপড়া ভিড় ছিল। বিজয় দিবসের দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এখানে জমে উঠেছিল নানা বয়সের মানুষের মিলন মেলা। বিজয়ের এই দিনে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে উপভোগ করতে পেরেছে এখানকার নান্দনিক সৌন্দর্য। তবে বিজয়ের আনন্দ উপভোগ করতে হাতিরঝিল আসা মানুষের মধ্যে একদিকে যেমন ছিল বিজয়ের আনন্দ, অন্যদিকে ছিল হাতিরঝিলের পচা পানির উৎকট দুর্গন্ধের বিরুক্তিকর অভিজ্ঞতা। সেই সাথে যোগ হয়েছে মশার উৎপাত।

বিজয় দিবসের ছুটিতে বৌ, ছেলে-মেয়ে নিয়ে রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর থেকে হাতিরঝিল ঘুরতে আসা একটি বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমান উল্লাহ সোহেল বলেন, চাকরির কারণে পরিবারকে তেমন একটা সময় দিতে পারি না। তাই বিজয়ের এই দিনে বৌ, বাচ্চাদের নিয়ে এখানে বেড়াতে এলাম। তিনি বলেন, এখানে এসেছিলাম হাতিরঝিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কিন্তু এখানকার পরিবেশ যে এত খারাপ তা জানা ছিল না। সৌন্দর্য দেখতে এসে এখন আমার বাচ্চারা নোংরা ও পচা পানির দুর্গন্ধে অসুস্থ হয়ে গেছে। বাচ্চাদের মাও অসস্তি ফিল করতেছে। তিনি বলেন, এসেছিলাম সারাদিনের জন্য, এখন দেখি আর কিছুক্ষণ থাকলে পারিবার নিয়ে বাসায় যাওয়ার পরিবর্তে হাসপাতালেই যেতে হবে। তাই যত তাড়াতাড়ি এই এলাকা ছাড়া যায় ততই ভাল।
একটি সরকারি কলেজের লেকচারার পুরান ঢাকা বাসিন্দা দিপিকা ঘোষ বলেন, বাচ্ছাদেরকে নিয়ে এসেছিলাম হাতিরঝিলে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য। অনেকদিন ধরে বাচ্চাদের আবদার ছিল হাতিরঝিলে বেড়াতে আসার। তিনি বলেন, এখানে এসে মনে হচ্ছে ভুল করে ভুল জায়গায় এসে গেছি। তিনি বলেন, একদিকে পচা পানির দুর্গন্ধ অন্যদিকে মশার যন্ত্রণায় এক জায়গায় দুই মিনিট স্থিও হয়ে বসা কিংবা দাঁড়ানো যাচ্ছে না। যে উচ্ছাস নিয়ে বাচ্চারা এখানে এসেছিল তাদের সে উচ্ছাস কেটে যেতে ১০ মিনিটও লাগলো না। তিনি বলেন, পচা পানির দুর্গন্ধে মনে হয় পেট থেকে সবকিছু বের হয়ে আসবে। এখানে আর কিছু সময় থাকলে নির্ঘাত হাসপাতালে যেতে হবে।

গতকাল মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে হাতিরঝিলে ঘুরতে আসা সবার মুখে শুধু একটা কথাই শুনা গেছে। তারা বলছেন, এতো সুনন্দর ও পরিকল্পিত একটি বিনোদন স্পট পরিকল্পনা ও সঠিক তদারকির অভাবে আজ উচ্ছন্নে যেতে বসেছে। অনেকেই ভেবে ছিলেন, এই হতিরিঝিল রাজধানীর বিনোদন প্রেমি মানুষের ফুসফুস হিসেবে কাজ করেব। এখন তো দেখি এটা দিনদিন ফুসফুস ক্যান্সারে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। বিনোদনের জন্য এখানে ঘুরতে এসে মানুষ সতেজ না হয়ে বরং নিস্তেজ হয়ে যাওয়া আশংখা দেখা দিয়েছে।

হাতিরঝিল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দৃষ্টিদন্দন হাতিরঝিলের পরিবেশ এখন অনেকটাই বিপর্যয়ের মুখে। ঝিলের পানিতে ভাসছে ময়লা পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত আবর্জনা। দশনার্থী ও পথচারীরা নাকে রুমাল চেপে ঝিলের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। শহরের কোলাহলের মাঝে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে গড়ে ওঠা ঢাকাবাসীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হাতিরঝিলের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে রক্ষণা বেক্ষণের অভাবে। গুলশান লেক, কারওয়ান বাজার ও বেগুনবাড়ী দিয়ে হাতিরঝিলের পানিতে প্রতিনিয়ত ময়লা-আবর্জনা ঢুকছে। দর্শনার্থী ও পথচারীরাও ঝিলের পানিতে ময়লা আবর্জনা ফেলে পানিকে দূষিত করছেন। দর্শনার্থীদের ফেলা কাগজের টুকরা, পলিথিন, খাবারের বক্সসহ অন্যান্য ময়লা-আবর্জনার কারণে দূষিত হচ্ছে ঝিলের পানি। অনেক দর্শনার্থী ঝিলের রাস্তার ও ব্রিজের পাশে মলত্যাগও করছেন, যা পুরো এলাকার পরিবেশকে দূষিত করছে। ঝিলের রাস্তার পাশে ডিএসসিসি’র স্থাপিত মিনি ডাস্টবিনগুলোও উদাও হয়ে গেছে। কোন একসময় এখানে সিটি কর্পোশেন কিছু মিনি ডাস্টবিন স্থাপন করেছিল তার অস্তিত্ব কোথায়ও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ঝিলের পানি বহমানও নয়। ফলে পানিতে ভেসে থাকা ময়লা-আবর্জনা পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশে। কোন কোন এলাকার পানি কালো রং ধারণ করেছে। আবার কোন কোন এলাকার পানি ধূসর ও সবুজ রং ধারণ করেছে। ফলে হাতিরঝিল সংলগ্ন এলাকার পরিবেশও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঝিলের আশপাশের এলাকার পানি ড্রেন দিয়ে ঝিলের পানিতে পড়ে। পানির সাথে ময়লা-আবর্জনাও চলে আসে। সেসব ময়লা পচে এখন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

সোনারগাঁও হোটেলের পেছনে ¯øুইসগেট দিয়ে হাতিরঝিলে স্রোতের বেগে ঢুকে পড়ছে পয়ঃবর্জ্য মিশ্রিত পানি। এতে হাতিরঝিলের পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। লেকের এ অংশের আশপাশের ওয়াকওয়েতে (হাঁটার পথ) নাকে রুমাল চেপে চলতে হয় দর্শনার্থীদের। এ ছাড়া আশপাশের বাসিন্দাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। বিজিএমইএ ভবনের পিছন মধুবাগ অংশের পানিতে প্রচন্ড দুর্গন্ধ। এদিকে রামপুরা ব্রিজ এলাকায়ও প্রচন্ড দুর্গন্ধ নাকে রুমাল চেপে ঘুরতে হয় দর্শনার্থীদের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন