বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

রাজাকারের তালিকা নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষোভ নিন্দা অব্যাহত

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৪:০৪ পিএম

সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকা নিয়ে বরিশাল সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা আর ক্ষোভের সাথে নিন্দার মাঝে জনমনে নানামুখী প্রশ্ন উঠতেও শুরু করেছে। এ তালিকায় পাক বাহিনীর হাতে নিহত মুক্তিযোদ্ধা ছাড়াও তাদের পরিবারের একাধিক সদস্য, গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা এবং এমপি’র পিতা সহ একাধীক পুলিশ কর্মীর নাম রয়েছে। তবে প্রশাসন ক্যডারের তেমন কারো নাম থাকার বিষয়টি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারীদের মধ্যেও কিছুটা চাপান উতর চলছে। অথচ খোদ বরিশাল মহানগরীতে চিঞ্হিত ও ঘৃনিত রাজাকারের নাম তালিকায় নেই। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময় বরিশাল মহানগরীর একাধীক শত্রু সম্পত্তি যারা লীজ নিয়ে ব্যবসা করেছিল তাদেও নামও স্থান পায়নি রাজাকারের তালিকায়।

বরিশাল বার-এর সিনিয়র আইনজীবী সুধীর চক্রবর্তী মুক্তিযুদ্ধে পাক বাহিনীর গুলিতে নিহত হন। তার সহধর্মীনি প্রয়াত উষা চক্রবর্তী এবং পুত্র সিনিয়র আইনজীবী তপন চক্রবর্তির নামও রয়েছে রাজাকারের তালিকায়। তপন চক্রবর্তির কণ্যা ডাঃ মণিষা চক্রবর্তী গত বছর বরিশাল সিটি নির্বাচনে বাসদ প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে যথেষ্ঠ আলোচনায় আসেন। তার পিতা, পিতামহ ও মাতামহ’র নাম রাজাকারের তালিকভুক্তির বিষয়টিকে মনিষা ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংশা’ বলে দাবী করেছেন। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে নগরীতে প্রতিবাদ বিক্ষোভও শুরু হয়েছে। অথচ এ্যাডভোকেট তপন চক্রবর্তী একজন তালিকাভ’ক্ত ও ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা।

তালিকায় নাম রয়েছে পাক বাহিনীর হাতে গুলিবদ্ধ প্রয়াত এ্যাডভোকেট মিহির লাল দত্ত ও তার ভাই-এর। মিহির দত্তের পিতা ও ভাই পাক বাহিনীর গুলিতে নিহত হন। বরিশাল-২ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা মোঃ শাহে আলমের পিতা ডাঃ সাইয়েদ উদ্দিন তালুকদারের নাম রাজাকারের তালিকায় রয়েছে । এ ব্যাপারে এমপি শাহে আলম সাংবাদিকদের বে ছেন, ‘কোন সাইয়েদ উদ্দিন তা আমি জানি না। আমি ক্লাস সেভেন-এ পড়ার সময় মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম। সেই থেকে ছাত্রলীগ ও পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আমার পরিবারের সবাই এই দলের সাথে সম্পৃক্ত। আমি যতটুকু জানি, বাবা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কোনো কাজের সাথে জড়িত ছিলেন না’।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় বরিশাল বিভাগের ছয় জন নারীর নামও রয়েছে। এরমধ্যে শহীদ জায়া ও স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধার মাতা বরিশাল নগরীর ঊষা রানী চক্রবর্তী, নগরীর ঝাউতলা এলাকার কনক প্রভা মজুমদার, উজিরপুরের বিজয়া বালা দাস, আভা রানী দাস, পারুল বালা কর্মকার ও বাবুগঞ্জের দেহেরগতি এলাকার রাবিয়া বেগম রয়েছেন। বরিশাালের উজিরপুরের মুক্তিযোদ্ধা মৃত আবদুর রশিদ মোল্লার নামও রাজকারের তালিকায় অন্তভর্’ক্ত হয়েছে।

রাজাকারের তালিকায় দক্ষিণাঞ্চলের ২৬ জন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার নাম রয়েছে। ইনেসপেক্টর থেকে কনেষ্টবল পর্যন্ত পুলিশ কর্মীদের নাম আসলেও মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে প্রশাসনে কর্মরত কারো নাম না আসায় বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন একাধীক সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা।
এদিকে রাজকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা সহ শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম আসায় ক্ষুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের একাধীক দায়িত্বশীল ব্যক্তি। অনেকেই প্রকৃত রাজাকারদের বাদ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের রাজাকার বানানোর এ প্রচেষ্টায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম অর্ন্তভ’ক্তির মাধ্যমে তাদেরকে অপমান করা হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এজন্য দায়ী প্রশাসনের লোকজনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনেরও দাবী জানিয়ছেন তিনি।
সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের এ তালিকায় দক্ষিণাঞ্চলের দুজন সাবেক এমপি, একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা, ২৬ জন সাবেক পুলিশ সদস্য, ১২ জন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও সাতজন সাবেক মেম্বর সহ শিক্ষক, ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীর নাম এবং পদবী অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রতিদিনই নানাজনের ক্ষোভ আর নিন্দা প্রকাশিত হচ্ছে। বুধবার বরিশাল প্রেস ক্লাবে ’৭১-এর মুক্তিযোদ্ধা বাবুগঞ্জের গৌতম চন্দ্র পাল এক সংবাদ সম্মেলন করে তার নাম রাজাকারের তালিকায় আসায় ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছেন।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
** হতদরিদ্র দিনমজুর কহে ** ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৫:১৪ পিএম says : 0
রাজাকারের তালিক,গ্রাম/থানা/জেলা উল্লেখ করে প্রকাশ করুন।তা হলে কে রাজাকার ছিলো,অথচ তালিকা থেকে বাদ পড়েছে, তা বোঝা যাবে।।কারকার কে ছিলো এলাকার মানুষ জানে।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন