ইনকিলাব ডেস্ক : ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অন্যতম সদস্য ব্রিটেন এক ঐতিহাসিক গণভোটের মাধ্যমে সংস্থাটি থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে ব্রিটেনের ভোটাররা রায় দেয়ার পর থেকেই এর পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতা।
বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানান তারা। গণভোটের রায়ে ইইউ ছাড়ার ঘোষণা আসার পর প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম ট্রার্নবুল প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই অস্ট্রেলিয়া ইইউ’র সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চালিয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, গণভোটের ফলাফলের পর অস্ট্রেলিয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে সরাসরি প্রভাব পড়েছে। আমাদের শেয়ারবাজারেরও দরপতন হয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট মার্টিন শুলজ তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা এই ফলাফলকে সম্মান জানাই। আমরা পরিষ্কার হলাম ব্রিটেন তার নিজের পথে যাবে। তিনি বলেন, এখন আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। ডেভিড ক্যামেরনের নিজের দেশের প্রতি দায়িত্ব আছে, পাশাপাশি ইইউর ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের দায়িত্ব আছে। এদিকে ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাস্ক বলেন, অনিয়ন্ত্রিত ও চরম আবেগ দ্বারা প্রভাবিত প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় এটা না। ২৭ সদস্যের নেতা (ব্রিটেন বেরিয়ে যাওয়া ইইউর সদস্য এখন ২৭) হিসেবে আমি বলতে চাই, ২৭ দেশের একতা ধরে রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, গত বছরটা আমাদের একতার ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন বছর ছিল। তবে আমার বাবা বলতেন, যা তোমাকে হত্যা করতে পারে না, তা তোমাকে আরো শক্তিশালী করবে। এ সময় তিনি জানান, ব্রিটেন আনুষ্ঠানিকভাবে বের না হওয়া পর্যন্ত ইইউর সব আইন-কানুনই তাদের ওপর প্রয়োগ হবে। এ ছাড়া আগামী সপ্তাহে বাকি ২৭ সদস্য দেশের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করবেন বলেও জানান কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট ট্রাস্ক। অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেবাস্টিয়ান ক্রুজ বলেন, অন্য একটা দেশের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া যাবে না। তবে ব্রিটেন বেরিয়ে গেলেও ইইউর একতা টিকে থাকবে। নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট্টি বলেন, ইইউ নিয়ে ব্রিটেনে যেমন অসন্তোষ ছিল, তেমনি অন্য দেশেও আছে। আমার নিজের দেশেও সেটা আছে। তাই একে সংস্কারের মাধ্যমে আরো কল্যাণকর করা উচিত। আর ফ্রিডম পার্টির নেতা গ্রিট ওয়াইল্ডার ব্রিটেনের ইইউ ছাড়ার রায়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ বলেন, হুররে ব্রিটিশ! এবার আমাদের পালা। এখন ডাচ গণভোটের সময়। গণভোটের ফলাফলের পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত জেরার্ড আরাউড তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, ইইউর একতা রক্ষায় বাকি সদস্য দেশগুলোকে এখনই কাজ শুরু করতে হবে। আর ফ্রান্সের ডানপন্থী ফ্রন্টের (এফএন) নেতা ম্যারিন লি পেন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, স্বাধীনতার জয়! অনেক বছর ধরেই আমি এমনটা দাবি করে এসেছি। এখন ফ্রান্সেও একই গণভোটের প্রয়োজন এবং সেইসঙ্গে ইইউভুক্ত সব দেশেই প্রয়োজন। ইতালির অভিবাসনবিরোধী নর্দান লিগের নেতা মাত্তেও সালভিনি উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‹হুররে মুক্ত নাগরিক হওয়ার সাহস! হৃদয়, বুদ্ধিমত্তা এবং গৌরব পরাজিত করল মিথ্যা, হুমকি এবং বস্ন্যাকমেইলকে। বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী চার্লস মাইকেল বলেন, ইইউর ভবিষ্যৎ ঠিক করতে বাকি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অতিদ্রুত বৈঠকে বসা উচিত। আইরিশ সরকার জানিয়েছে, এই ফলাফল আয়ারল্যান্ড, ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফলাফল বিষয়ে সরকার সবার সঙ্গে বৈঠক করবে। ওই বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইটোল্ড ওয়াসজিকক্সি বলেন, ব্রেক্সিট ব্রিটেন এবং ইউরোপের জন্য খারাপ খবর। ইইউর ধারণায় যে পরিবর্তনের প্রয়োজন, ব্রেক্সিট তারই প্রমাণ। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টেইমেনার বলেন, ইইউ এবং ব্রিটেনের জন্য এটা একটা দুঃখের দিন। জার্মান ভাইস-চ্যান্সেলর সিগম্যার গ্যাব্রিয়েলও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে একে ‹ইউরোপের জন্য বাজে দিন› হিসেবে অভিহিত করেছেন। এশিয়া অঞ্চল থেকে এখনো পর্যন্ত কেবল ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলিই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তবে গণভোটের ফলাফলের পর এখনো পর্যন্ত কোনো রকম প্রতিক্রিয়া জানায়নি ক্যামেরনের পক্ষে থাকা বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর রাষ্ট্র আমেরিকা। এ ছাড়া আরেক ক্ষমতাধর রাষ্ট্র রাশিয়া ও দেশটির প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। বিবিসি,রয়টার্স,এএফপি, গার্ডিয়ান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন