শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

নেতিবাচক পরিণতির শংকা : বিচ্ছেদ ঠেকাতে ফের গণভোট চায় ব্রিটিশরা

প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫৪ পিএম, ২৫ জুন, ২০১৬

অনলাইন পিটিশনে ১০ লাখ স্বাক্ষর : বিপর্যয় এড়ানোর চেষ্টায় ওবামা
ইনকিলাব ডেস্ক : ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে থাকার আশা এখনো জিইয়ে রেখেছে ব্রিটেনের জনগণ। ঐতিহাসিক এই বিচ্ছেদ আটকাতে এখন দ্বিতীয়বার গণভোট চাইছেন তারা। এর জন্য ইতিমধ্যে ১০ লাখের বেশি মানুষ একটি অনলাইন পিটিশনে সই করেছে। এক লাখ মানুষ কোন পিটিশনে সহমত প্রকাশ করলে বিষয়টি পার্লামেন্টের বিবেচনায় আনা হয়।
গত বৃহস্পতিবারের গণভোটে ইইউ ছাড়ার পক্ষে রায় যাওয়ার পর ব্রিটিশ সমাজে বিভক্তি এখন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও লন্ডনের বেশিরভাগ মানুষই ইইউর সঙ্গে থাকতে ‘রিমেইন’ ভোট দেয়। সেই সঙ্গে তরুণদের মধ্যে ৭০ শতাংশই রিমেইনের পক্ষে ভোট দেয়। গণভোটের ফলাফল স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের রাজনৈতিক বাতাবরণ উত্তপ্ত করে তুলেছে। সেখানকার নেতারা বলছেন ইইউ থেকে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ চূড়ান্ত হয়ে গেলে ইউরোপের সাথে থাকাতে প্রয়োজনে স্বাধীনতার জন্য গণভোট আয়োজন করবেন তারা। শুক্রবার প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায় ৫২ শতাংশ ব্রিটিশ জনগণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়তে ‘লিভ’ ভোট দিয়েছেন আর রিমেইনের দিকে পড়ে ৪৮ শতাংশ ভোট।
ব্রিটেনের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত করবিন :
ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে ব্রিটেনের অবস্থান কি হবে! সামনে কি কি সমস্যা রয়েছে? শক্তিশালী ‘বিভাজনের রাজনীতি’ আর তার সমাধান কি হতে পারে? এসব বিষয় নিয়ে শনিবার মুখ খুলেছেন ব্রিটেনের লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। একইসঙ্গে লেবার পার্টিতে নিজের নেতৃত্ব নিয়েও কথা বলেছেন এই লেবার নেতা। ব্রেক্সিট সম্পর্কে নিজের অবস্থা তুলে ধরছেন জেরেমি করবিন
২৩ জুন বৃহস্পতিবারের গণভোটে ব্রিটেনের জনগণ নিজেদের রায় জানিয়েছেন। সে অনুযায়ী, ব্রিটেনের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে সরে যাওয়াটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবে এ বিষয়টি নিয়ে পুরো বিশ্বে আরও দুই বছর ধরে আলোচনা চলবে বলে মনে করেন জেরেমি করবিন। তিনি বলেন, ‘এখন খেয়াল রাখতে হবে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি যেন পরিবেশ রক্ষাসহ বিভিন্ন ইস্যু থেকে নজর সরিয়ে না নিতে পারে।’
তিনি জানান, ব্রিটেনের অনেক শিল্পাঞ্চল ব্রেক্সিটের পক্ষে রায় দিয়েছে। এসব এলাকা সবচেয়ে বেশি আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। তিনি বলেন, “এখানে যে ‘বিভাজনের রাজনীতি’ এখানে গড়ে উঠছে, এ থেকে তা বোঝা সম্ভব।” করবিনের মতে, এই গণভোটের মধ্য দিয়ে এক বিভক্ত ব্রিটেনের চেহারা সামনে এসেছে। লন্ডন, স্কটল্যান্ডের মতো অঞ্চলগুলোতে বিভাজন রেখা আরও সুস্পষ্ট হয়েছে।
ব্রেক্সিটের ক্ষেত্রে অসম শিল্পায়ন এবং সাংকৃতিক পার্থক্যের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে বলে মনে করেন করবিন। তিনি বলেন, ‘এখানে বিভিন্ন শহরের মধ্যকার সাংস্কৃতিক ভিন্নতা এবং কোনও অঞ্চলে শিল্পায়নপূর্ব সামাজিক সম্পর্ক গণভোটকে প্রভাবিত করেছে।’
শরণার্থী সংকট প্রসঙ্গে এই লেবার নেতা বলেন, ‘আমরা শরণার্থী সমস্যা এড়িয়ে যেতে পারি না। আমি শরণার্থী সংকট নিয়ে কথা বলতে ভয় পাই না। আমি বিশাস করি, তা দেশকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। তবে আকস্মিক পরিবর্তনের ফলে সমাজে যে চাপ সৃষ্টি হয়, সেটা আমি বুঝি।’ তিনি বলেন, “এটা পরিষ্কার যে, এই গণভোট মানুষের স্বাধীন চলাচলের ওপর এক বাধা। তবে এ সম্পর্কে ‘লিভ’ শিবির থেকে কিছুই বলা হয়নি। এমনকি ব্রেক্সিট পরবর্তী ব্রিটেন দেখতে কেমন হবে, সেটাও বলা হয়নি।”
বিভাজন ঘোচাতে কাজ করার আহ্বান রুশনারা আলীর:
ইইউ ছাড়ার পক্ষে জনতার রায় আসার পর এই গণভোট যুক্তরাজ্যের ভেতর জাতি-বর্ণ ও অঞ্চলভিত্তিক ‘গভীর বিভাজনের’ প্রকাশ ঘটিয়েছে বলে মনে করছেন দেশটির বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলী। গণভোটে ইইউতে থাকার পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে আসা লন্ডনের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনের এমপি রুশনারা শুক্রবার এক বিবৃতিতে একথা বলেন।
তিনি বলেন, ইইউ ও যুক্তরাজ্য ঘিরে যেসব বিতর্ক গণভোটে গড়িয়েছে তা ‘আবেগপূর্ণ’ হলেও বিষয়টি দেশের ভেতর জাতি-বর্ণ, অঞ্চল ও শ্রেণিভিত্তিক ‘গভীর বিভাজনের’ প্রকাশ ঘটিয়েছে। “এই সব বিভাজন লাঘব করতে আমাদের সবাইকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আমাদের দেশের বিভিন্ন কমিউনিটিকে একত্রীকরণে বিশেষত যারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদের সাহায্য করতে হবে।”
ইইউতে শীর্ষস্থানীয় ব্রিটিশ কর্মকর্তার পদত্যাগ:
ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ব্রিটেনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা জোনাথন হিল পদত্যাগ করেছেন। ব্রিটেনে গণভোটে ব্রেক্সিটের পক্ষে জনরায়ের পর তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তিনি ইইউতে ব্রিটেনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। শনিবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে। জোনাথন হিল ইইউ’র ব্যাংক ও আর্থিক খাতের মতো সংবেদনশীল বিষয়ের দায়িত্বে ছিলেন। তার পদত্যাগের ঘোষণার ফলে নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এ পদে অন্য কাউকে নিয়োগ দেবেন, যদিও অল্প সময়ের জন্যই ওই ব্যক্তি এ পদে থাকবেন।
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হিলারির জয়ের সুযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে
ব্রেক্সিট : বিপর্যয় এড়ানোর চেষ্টায় ওবামা
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে রায় দিয়েছে যুক্তরাজ্যবাসী। এরফলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পদক্ষেপ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর এই বিপর্যয় এড়ানোর চেষ্টা করছেন ওবামা। ব্রেক্সিটের জেরে শুরু হওয়া যুক্তরাজ্যের ঐতিহাসিক বিচ্ছেদ প্রক্রিয়ার কারণে জানুয়ারিতে ওবামা হোয়াইট হাউস ছাড়ার আগেই যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবাধ বাণিজ্যের (টিটিআইপি) সম্ভাবনাও উবে যেতে পারে। ট্রান্সআটলান্টিক ট্রেড এন্ড ইনভেস্টমেন্ট পার্টনারশিপ বা টিটিআইপি’র আলোচনা ইতিমধ্যে গভীর মতপার্থক্য ও উভয় মহাদেশের মধ্যে বাড়তে থাকা বাণিজ্য-বিরোধী মানসিকতার কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে। ব্রেক্সিটের কারণে ওবামা ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ইসলামিক স্টেট (আইএস), রাশিয়া ও চীনের উত্থানের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যৌথ পদক্ষেপের ক্ষেত্রে পশ্চিমা মিত্রদের যুক্ত করার বিষয়টিও কঠিন করে তুলেছে। ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্টের সামনে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, তাতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কের গুরুত্ব হ্রাস করে অন্য ইউরোপীয় অংশীদার জার্মানি এবং ফ্রান্সের দিকে যুক্তরাষ্ট্র ঝুঁকে পড়বে কীনা সে সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। এছাড়াও নভেম্বরে হতে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন জয়ী হবেন এবং তার উত্তরাধিকার নিরাপদ হবে বলে আশাবাদী ছিলেন ওবামা। কিন্তু ব্রেক্সিটের পর সৃষ্টি হওয়া অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হিলারির জয়ের সুযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
চলতি বছর যুক্তরাজ্য সফরকালে ওবামা ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি তখন স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছিলেন, ওয়াশিংটন এখনো লন্ডনের সঙ্গে ‘বিশেষ সম্পর্ক’ এবং ব্রাসেলসের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠ মিত্রতা’ বজায় রাখতে চায়।
যুক্তরাজ্যের ভোটারদের ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে ওবামার এই সতর্ক করার বিষয়টি ছিল যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিরল কঠোর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। গত শুক্রবার হোয়াইট হাউজ থেকে বলা হয়, ওবামা তার সেই মন্তব্যের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন, যাতে বলা হয়েছিল, যুক্তরাজ্য যদি ইইউ থেকে বের হয়ে যায় তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি করতে আসার সময় পেছনের সারিতেই ফিরে যেতে হবে। ব্রেক্সিটের কারণে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পদত্যাগের ঘোষণার পাশাপাশি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের বৃহত্তর ঐক্যের স্বপ্নে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি এল। ইইউ গঠনের পর যুক্তরাজ্যই প্রথম দেশ, যারা ২৮ জাতির এই জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের এই বেরিয়ে যাওয়াকে সংক্ষেপে বলা হচ্ছে ‘ব্রেক্সিট’। রয়টার্স

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন