দশ
সেদিন জুলুমবাজরা বলবে : হে আমাদের প্রভূ! অল্প কিছুদিন আমাদেরকে সময় দিন তাহলে আমরা আপনার দাওয়াত কবুল করবো এবং রসূলদের অনুসরণ করবো। তোমরা কি ইত:পূর্বে কসম খেয়ে বলতে না যে তোমাদের পতন নেই। যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছে, তোমরা তো তাদের বাসস্থানেই বাস করেছ এবং সেই সব জালেমের সাথে আমি কেমন আচরণ করেছি, তা তোমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। উপরন্ত আমি তোমাদের জন্য বহু উদাহরণ দিয়েছি।’’ রসূল স. বলেন: ‘‘যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণও অন্যের জমি জবর দখল করবে, কিয়ামতের দিন তার ঘাড়ে সাতটি পৃথিবী চাপিয়ে দেয়া হবে।’’ প্রচলিত আইনে, অন্যায়ভাবে অন্যের ভূমিতে প্রবেশ করা অথবা ভূমির দখলে প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ করাকে ভূমিতে অনধিকার প্রবেশ বা ভূমি ট্রেসপাস বলে। অন্যের অঙ্গনে যথার্থ কারণ ছাড়া প্রবেশ করলে ট্রেসপাস সংঘটিত হয়। এ উদ্দেশ্যে বিবাদীর সম্পূর্ণ প্রবেশ প্রয়োজন হয় না। প্রধান ফটকে সামান্যতম অঙ্গুলী প্রবেশই যথেষ্ট। এ ছাড়া জানালায় হাত ঢুকানো, দেওয়ালে হেলান দেয়া, অনিচ্ছাকৃতভাবে বা ভুলক্রমে প্রবেশ করা এ অপকর্মের অন্তর্ভূক্ত।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দন্ডবিধির ভাষ্যে বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি বলপূর্বক কারো কাছ থেকে কোন কিছু গ্রহণ করবে তার শাস্তির মেয়াদ তিন বছর কারাদন্ড অথবা অর্থ দন্ডে অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। আর এ বলপূর্বক কোন কিছু গ্রহণের মাধ্যমে যদি ভিকটিমের কোন ক্ষতি হয় তাহলে তার শাস্তির মেয়াদ পাঁচ বছরের কম নয়। আর বলপূর্বক বা জোর করে কাউকে মৃত্যুর ভয় দেখালে তার শাস্তি সাত বছরের কম নয়। ক্ষতিপূরণের মামলায় বলা হয়েছে যে, জমি পুনরুদ্ধারের মামলা ছাড়াও দখলচ্যুত ব্যক্তি ক্ষতিপুরণের দাবি করতে পারে। বেদখল হতে উদ্ভুত যাবতীয় ক্ষতিসহ দখল উদ্ধার বাবদ যাবতীয় খরচ সে দাবি করতে পারে। আবশ্য বিবাদী ভূমির বা গৃহাঙ্গানের উন্নতিকল্পে খরচ করে থাকলে সেগুলোর জন্য সেট অফ (ঝবঃ ড়ভভ) দাবি করতে পারে কি-না সে বিষয়ে কোন স্পষ্ট সিদ্ধান্ত সেই। তবে প্রখ্যাত টর্ট আইন বিশারদ স্যামন্ডের মতামত উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন: যেহেতু বেদখলের ফলে উদ্ভুত ক্ষতিপুরণের জন্য দাবীর দাবি, এটা নীতিগতভাবে পরিষ্কার যে, বিবাদী উক্ত অঙ্গনের যে মূল্য বৃদ্ধি করেছে তা বিবেচনা করা প্রয়োজন। বিবাদী যদি পুরাতন ঘর ভেঙ্গে নতুন গৃহ নির্মাণ করে থাকে, তবে এটা যথার্থ হবে না যে, বাদী নতুন গৃহের দখল এবং পুরাতন গৃহের মূল্য আদায় করতে পারবে।
স্বাভাবিক যৌনকার্য মানুষের মৌলিক প্রয়োজনের অন্যতম। এর সমাধান না হলে মানুষ তার জীবনের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। অবৈধ পন্থায় যৌনকার্য সম্পাদন করা গর্হিত কাজ। কোনো নারী স্বেচ্ছায় নিজেকে দেহ ব্যবসায় নিয়োজিত করতে পারবে না। এটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অন্য কেউ তাকে দিয়ে দেহ ব্যবসায় পরিচালনা করতে চাইলে তাও নিষিদ্ধ। আল-কুরআনে এসেছে, ‘‘তোমরা যুবতীদের দেহ ব্যবসায় লিপ্ত হতে বাধ্য করো না।’’ কুরআনের আরো ঘোষণা, ‘‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। কেননা তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট পথ।’’ মহানবী স. বলেন, ‘‘কোন ব্যক্তি মু’মিন থাকা অবস্থায় ব্যভিচারে লিপ্ত হতে পারে না।’’ ইসলাম ব্যভিচার ও দেহ ব্যবসায়কে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। পর্ণোগ্রাফি ছবি তৈরি অশ্লীলতা ও বিকারগ্রস্ত মানসিকতার পরিচায়ক। তরুণ-যুব-শিশু চরিত্র হনন করাই এর মূল উদ্দেশ্য। ইসলাম যে কোন প্রকার অশ্লীলতার নিকটবর্তী হতেও নিষেধ করেছে। আল-কুরআন বলেন, ‘‘তোমরা কোনো ধরণের প্রকাশ্য কিংবা অপ্রকাশ্য অশ্লীল কাজের নিকটবর্তী হয়ো না।’’ চারিত্রিক ও সামাজিক শৃংখলা বিনষ্টকারী উপকরণের ব্যবসা বা ক্রয়বিক্রয় মাধ্যমে অর্থ আয় করাকেও ইসলাম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেন: ‘‘নিশ্চয় যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা বিস্তার করাকে পছন্দ করে, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে পীড়াদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ যা জানেন তা তোমরা জান না।’’ অন্য এক আয়াতে আল্লাহ্ বলেন: ‘‘তোমাদের দাসীরা পবিত্র ও সতী-সাধ্বী থাকতে চাইলে দুনিয়ার স্বার্থ লাভের জন্য তাদেরকে ব্যভিচার করতে বাধ্য করো না। তবে তাদের উপর কেউ জবরদস্তি করলে সে ব্যাপারে আল্লাহ্ তাদের উপর ক্ষমাশীল ও দায়ালু।’’
ইসলাম যেনা-ব্যভিচার সমর্থন করে না। এ সমস্ত অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকার জন্য আল্লাহ মানবজাতিকে নির্দেশ দিয়েছেন। আর যারা এমন অশ্লীল কাজে লিপ্ত হবে তাদের উভয়ের ব্যাপারে কঠোর শাস্তির ঘোষণা দিয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন