শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রাস্তার অবস্থা এতো খারাপ মানুষ গালি দেয় : অর্থমন্ত্রী

সড়কের বেহাল অবস্থা নকশায় ভুল তুলে ধরলেন প্রতিমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, রাস্তার অবস্থা এতো খারাপ যে এলাকায় গেলে মানুষ গালি দেয়, গাড়ির গøাস নামাতে পারি না। কেন? কারণটা কি? আমরা কি অন্যায় করেছি? রাস্তা ঠিক করতে ইংল্যান্ডের নাম্বার ওয়ান কম্পানিকে নিয়ে আসলাম। কিন্তু তাদের কাজ করতে দেয়া হলো না। কেন দেয়া হলো না তা আমরা জানি। একেকজন ১০-১২ টা করে কাজ নিয়ে বসে আছে। প্রধানমন্ত্রী হাজার বার বলার পরেও সড়কের কাজ ঠিক হয় না। এ সময় তিনি প্রকল্প বন্ধ করে দেয়ার হুশিয়ারি উচ্চারণ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, রাস্তায় যে গাড়ি চলে সেগুলোর টায়ার ঠিক আছে কিনা কোন দিন দেখেছেন? জীবনেও না। কাজ করেন মনের আনন্দে। প্রতিদিনই মনের আনন্দে নতুন প্রজেক্ট নিয়ে আসছেন। আমরাও বন্ধ করে দেব। টাকা দেয়াও বন্ধ করে দেব, প্রজেক্টও বন্ধ করে দেব। টাকা না পেলে কাজ করবেন কোথা থেকে? আপনারা যদি সরকারের সহযোগীতা করেন তবে সরকারও সহযোগীতা করবে।
গতকাল শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘মহাসড়কের লাইফটাইম : চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ বিষয়ক সেমিনারে সড়ক সচিব অর্থমন্ত্রীর এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে উল্লেখ করলে অর্থমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ সকরে এসব কথা বলেন।

সেমিনারে খাত সংশ্লিষ্টরা দেশের মহাসড়কের আয়ুস্কালের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেশের মাটি, পানি, গাছ, দোকান, নদী এবং ট্রাক ওভারলোডিংকে দাড় করান। এ সময় তারা ‘সড়ক রক্ষনাবেক্ষনে’ পৃথক তহবিলের দাবিও জানান। পাশাপাশি সড়ক সংস্কারে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলেন। বিভিন্ন দাবি জানালেও সড়কের বেহাল দশা নিয়ে কেউ কোন কথা বলেননি। আর এতেই ক্ষেপেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। অর্থমন্ত্রী ক্ষেপে রাস্তার বেহাল দশার বর্ণনা দিয়ে প্রকল্প বন্ধ করার হুমকি দেন। আর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আরো এক ধাপ এগিয়ে নিজেই প্রেজেন্টেশনে দেখালেন সড়কের বেহাল অবস্থা, নকশায় ভুল। জানালেন, প্রকল্পের দায়িত্বে যিনি থাকেন তিনি কিছুই দেখেন না। নকশাও দেখেন না। এর কয়েকটি উদাহরণও দিলেন। প্রতিমন্ত্রী ক্ষোভ ঝেড়ে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে ফিটনেসবিহীন বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, আপনাদের বাজেট বাড়বে কোনো? আপনারাতো সব টাকা নষ্ট করছেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. একাব্বর হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। এছাড়া লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম।

একনেকের প্রায় প্রতিটি সভায় সড়কের প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। অথচ সড়ক ঠিক হচ্ছে না এমন ক্ষোভ জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, প্রতিটি সভায় একটি করে প্রকল্প। এতো রাস্তা কেন নিচ্ছেন?
রাস্তা খারাপের কারণ হিসেবে সেমিনারে উপস্থিত কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার বৃষ্টি, গাছকে দায়ী করেন। এর প্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, নদী মাতৃক বাংলাদেশ। বাংলাদেশে তো নদী থাকবেই। বৃষ্টি থাকবেই। জীবনে আর কোন দিন কোন মিটিংয়ে এগুলো বলবেন না। এটা ঠিক না। এগুলো কাকে বুঝাচ্ছেন? নিজেরা কাজ করতে পারেন না, না হয় বোঝেন না।

অটোমেটিক টোল সিস্টেম চালুর পরামর্শ দিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, প্রতিটি গাড়ির জন্য প্রি-পেইড মিটারের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্দিষ্ট সীমা পার হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিল পরিশোধ হবে। টোল প্লাজায় কোনো যানজট হবে না। অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী হাজার বার বলেছেন, প্রতিটি মহাসড়কে টোল আদায়ের ব্যবস্থা করতে। টোলের টাকা দিয়েই সড়ক সংস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে। সড়ক সংস্কারে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে টাকা দেয়া সম্ভব হবে না।

এর আগে সড়কের দুরাবস্থা সবার সামনে প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তুলে ধরেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে ভাল সড়ক বানাচ্ছে সিঙ্গাপুর। তারপর সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, হংকং, জাপান আছে। আর কানেকটিভিতে সউদী-আরব, স্পেন, সুইডেন, সাউথ-আফ্রিকা, জার্মানি। কিন্তু সবচেয়ে শেষের নামটি হলো, নামিবিয়া। তাদের মাথাপিছু আয় মাত্র ৫ হাজার ডলার। একটা স্বল্প আয়ের দেশ কানেকটিভিটিতে চ্যাম্পিয়ন। আর আমরা আমাদের সড়কের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেশের মাটি, পানি, গাছ, দোকান, নদী, ট্রাক ওভারলোডিংকে দায়ী করছি। অর্থাৎ আমাদের কোন সমস্যা নেই। সমস্যা সব অন্যের ঘাড়ে।
প্রেজেন্টেশনে বিআরটিএর একটি ছবি দেখিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, অনেক লোক ফরম পূরণ করছে, আর তার পাশেই রাখা হয়েছে সিএনজি সিলিন্ডার। সিএনজি সিলিন্ডার বøাস্ট হলে কেউ বাচবে না। এটাতো মারাত্মক, কিভাবে বিআরটিএ এ সিলিন্ডার রাখে। এ সময় মন্ত্রী বিআরটিএর অফিসে দালালের ছবি দেখিয়ে বলেন, উনাাদের থেকে গাড়ির ঠিকমত ফিটনেসের সনদ কিভাবে আশা করা যায়।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, পাবলিক ট্রান্সপোর্টে বিদ্যুতের ব্যবহার করা যায়। এতে ২ বিলিয়ন ডলার বাচবে। কিন্তু বিআরটিএ তা অনুমোদন দেয় না। সড়কের জন্য ‘ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি’ নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন