শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ভারতে এনআরসি-সিএএ নিয়ে বিক্ষোভ চলছেই

মাহাথির মোহাম্মদের নিন্দা প্রতিবাদের ঢেউ দক্ষিণে : বাংলায় বিজেপি নেতার পদত্যাগ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

ভারতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)র প্রতিবাদে উত্তাল আসুমদ্র-হিমাচল। এবার এই আইনের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া আন্দোলনে বাংলায় বড়সড় ধাক্কা খেল গেরুয়া শিবির। বিজেপি ছাড়লেন দার্জিলিংয়ের বিজেপির হিল কমিটির প্রভাবশালী নেতা সন্তবাহাদুর গুরুং। এদিকে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ।

ভারতের উত্তর প্রদেশে গত শুক্রবার থেকে এ পর্যন্ত নয়জন নিহত হয়েছেন। উত্তর প্রদেশের প্রধান পুলিশ কর্মকর্তা ও পি সিং জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএকে বলেছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এপি এবং এএফপি বলছে, গত শনিবার পর্যন্ত ২০ জন নিহত হয়েছেন। উত্তর প্রদেশে শুক্রবারের সহিংসতায় মোট ১১ জন নিহত হন। এর মধ্যে আট বছরের এক শিশুও রয়েছে। জেলা পুলিশ প্রধান এএফপিকে জানিয়েছেন সেখানকার শহর বারানসিতে শিশুসহ প্রায় আড়াই হাজার মানুষ একটি মিছিল বের করে। পুলিশ বাধা দিলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এসময় পদদলিত হয়ে শিশুটির মৃত্যু ঘটে বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে, কুয়ালালামপুরে ইসলামিক সম্মেলনের সমাপনী বক্তব্যে ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইনের সমালোচনা করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। ভারতকে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র উল্লেখ করে দেশটিতে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব বিবেচনা করা হয় এমন কিছু না করার আহবান জানান তিনি। বলেন, কোনো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মুসলমানদেরকে নাগরিকত্বের বাইরে রাখারে বিষয়টি অন্যায্য।

উত্তর প্রদেশ ছাড়াও শনিবার বিক্ষোভ সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে কলকাতা, চেন্নাই, পাটনা, কোচিসহ বিভিন্ন জেলায়। সিএএ ও এনআরসি’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঢেউ এ বার দক্ষিণ ভারতেও। সোমবার চেন্নাইয়ের রাজপথে বিশাল মিছিল করল বিরোধীরা। ডিএমকে-র ডাকা প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হলেন কংগ্রেস-সিপিএম-সহ অধিকাংশ বিরোধী দলের নেতারা। প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে বেঙ্গালুরুতে। অন্য দিকে সিএএ-র সমর্থনেও মিছিল হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

সিএএ-এনআরসির প্রতিবাদে গতকাল সোমবার প্রতিবাদ মিছিলের ঘোষণা আগেই করেছিল ডিএমকে। সোমবার সেই মিছিল শুরু হতেই রাস্তায় ঢল নামল আম জনতার। ডিএমকে সুপ্রিমো এম কে স্টালিন ছাড়াও মিছিলে শামিল হয়েছেন কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম, সিপিএম রাজ্য সম্পাদক কে বালাকৃষ্ণন, বিদুথালাই চিরুথাইগল কাটচি (ভিসিকে) সুপ্রিমো থোল তুরিমাভালভনের মতো নেতারা। এ দিন সকালে শহরের এগমোরে জমায়েত হন সব দলের সমর্থকরা। সেখান থেকে মিছিল করে শেষ হয় রাজারথিনাম স্টেডিয়ামে।

বেঙ্গালুরুতে এ দিন সিএএ-এনআরসি বিরোধী একটি প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করেছিলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন। বেলা ১১টা নাগাদ শহরের হজরত খাজি মহম্মদ আবদুল কুদ্দুস সাহিব ইদগাহ্ ময়দান থেকে মিছিল শুরু করে শহরের মিলার রোড, নন্দী দুর্গা রোডের মতো এলাকা প্রদক্ষিণ করে। তবে কোথাও কোনও অশান্তির খবর নেই। অন্য দিকে শহরে এ দিন সিএএ-র পক্ষেও একটি মিছিল করেছে বিজেপি। সিএএ-এনআরসিকে সমর্থন করে মিছিল হয়েছে কলকাতাতেও। এই মিছিলের নেতৃত্ব দেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি জে পি নাড্ডা।

রোববার বিক্ষোভে উত্তেজনা ছড়ানোয় সোমবার নতুন করে কারফিউ জারি হয়েছে মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে। জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এখনও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের প্রতিবাদ সোমবার অষ্টম দিনে পড়েছে।

প্রতিবাদ অব্যাহত আছে আসামেও। কয়েকশো মানুষ বিক্ষোভ করেছেন রাজধানী গৌহাটিতে। ১০ দিন বন্ধ রাখার পর সেখানে ইন্টারনেট খুলে দেয়া হয়েছে। এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানী নতুন দিল্লিতে পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, যাদের মধ্যে আটজনের বয়স ছিল ১৮ বছরের নীচে।

েিদশটির তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে শুক্রবার গণমাধ্যমগুলোর কাছে একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়। তাতে সম্প্রচার মাধ্যমগুলোকে সহিংসতা উস্কে দিতে পারে এমন কিছু প্রচার থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে আইনের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া আন্দোলনে বড়সড় ধাক্কা খেল গেরুয়া শিবির। বিজেপি ছাড়লেন দার্জিলিংয়ের বিজেপির প্রভাবশালী নেতা। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে দার্জিলিংয়ের বিজেপির হিল কমিটির নেতা সন্তবাহাদুর গুরুং যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে।

পাহাড় কমিটির জেলা সভাপতি মনোজ দেয়ান জানিয়েছেন, লোকসভা নির্বাচনের সময়ে তারা সন্তবাহাদুরের কাজে খুশি ছিল না দল। আর তাই তার দল ত্যাগ করা নিয়ে কারও খুব একটা মাথাব্যাথা নেই। কিন্তু তাদের আচরণেই স্পষ্ট অন্য কথা। যদিও বিজেপির শীর্ষ নেতাদের তরফ থেকে সাধারণ মানুষকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে কোন রকম প্ররোচনাতে পা না দিতে। কিন্তু তারই মাঝে বিজেপির দলীয় নেতারা দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় রীতিমত প্রশ্নের মুখে গেরুয়া শিবির।

উল্লেখ্য, নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে গত কয়েকদিন আগেই বালুরঘাটে বিজেপি ছাড়েন এক সংখ্যালঘু নেতা। যা বিজেপির কাছে অবশ্যই বড় ধাক্কা ছিল। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই ফের ধাক্কা বঙ্গ বিজেপির। এবার দার্জিলিং। যা বাংলার বিজেপির শক্ত ঘাঁটি হিসাবেই পরিচিত। সূত্র : এপি, এএফপি, টিওআই।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Rohul Amin Sajib ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৬ এএম says : 0
অমিতের কথায় বিতর্কিত আইন পাশ করে ভারত জুড়ে যে বিশৃঙ্খলার জন্ম দিয়েছে, তার ফলটা না পারছেন গিলতে, না পারছেন ফেলতে..
Total Reply(0)
Forkan Rabby ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৬ এএম says : 0
কাশ্মীর গিলে খেয়ে পেলেছে, নিশ্চুপ পৃথিবীর মানুষ, নিশ্চুপ ১৮০ কোটি মুসলিম, নিশ্চুপ ভারতবাসী, তাই তারা বর্তমান ভারত জুড়ে প্রতিবাদের ঝডের কথা কখনও কল্পনাও করে নি, আর যেটা কল্পনা করা যায় না, সেটা কখনও চিন্তার মধ্যেও তাকে না, তাই তাদের পূর্ব পরিকল্পনার সাথে বর্তমান ভারত সাংঘর্ষিক হয়ে দাড়িয়েছে, আজকের দিন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে আর এই ভাবে টিকে তাকতে পারলে অবশ্যই আন্দোলন সফল হবে, হবেই
Total Reply(0)
Kazi Kamal Hossen Neon ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৮ এএম says : 0
বাংলাদেশ থেকে দ্রুত 27 লাখ ভারতীয়কে ও তাদের এদেশীয় দালালদের খুজে বের করে ভারতে ফেরত পাঠানো হোক।
Total Reply(0)
M Din Islam ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৯ এএম says : 0
ঠিক, আসামের এনআরসির পরে আমরা কোনো ভাবেই এনআরসির উপর বিশ্বাস রাখতে পারি না
Total Reply(0)
Manik Hasan ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৪০ এএম says : 0
বিজেপি ধর্মকে ব্যবহার করে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে চাচ্ছে। কিন্তু ভাল লাগছে যে, ভারতের অধিকাংশ মানুষ মোদির এমন অপচেষ্টাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। এই মানুষগুলো যেমন নিজের ধর্মকে ভালবাসে তেমন অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা করে।
Total Reply(0)
Md Aktar Hossain ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৪০ এএম says : 0
এবার সবাই মিলে একবার আওয়াজ তুলুন মোদি আর অমিত শাহের এনআরসি হোক। তাদেরকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো অতি আবশ্যক হয়ে পড়েছে।
Total Reply(0)
nasirulislam ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৮:১৭ এএম says : 0
I HOPE ALL THE MUSLIM COUNTRY KICK ALL THEDAVIL WARSHIPERS KICK THEM OUT SO MUDI WILL LEARN LESSON
Total Reply(0)
মো: আবুল কাশেম ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১০:১৩ এএম says : 0
পিঠ দেয়ালে যখন ঠেকে যায় তখন মানুষ আর চুপ থাকতে পারে। ভারতের অবস্থাও ঠিক তাই ;
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন