যৌতুকের জন্য পাঁচ বছরের শিশু সন্তানকে বেঁধে রেখে স্ত্রী নিলুফার ইয়াছমিন কলি (২৭) কে চুল কেটে এবং গরম খুন্তি দিয়ে সারা শরীরে ছ্যাকা দেয় লোভী স্বামী মোশাররফ হোসেন উজ্জল (৩৭)। ঘটনার পর ধূর্ত মোশারফ বিদেশে পালিয়ে যাবার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। পুলিশ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
বুধবার দুপুর আড়াইটায় সংবাদ সম্মেলন করে এতথ্য জানান নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন। পরে মোশারফকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে মোশারফকে হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে ইমিগ্রেশন পুলিশ গ্রেফতার করে সুধারাম থানায় হস্তান্তর করে। গ্রেফতার মোশাররফ হোসেন উজ্জল বেগমগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের খানপুর গ্রামের আব্দুল মতিনের ছেলে।
জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন জানান, নির্যাতনকারি মোশাররফ হোসেন উজ্জলকে ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযানে নামে পুলিশ। যেহেতু সে বিদেশে চাকরি করে, তাই ঘটনার পর সে যেন দেশের বাইরে গিয়ে পালাতে না পারে সেজন্য প্রতিটি বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে তার পাসপোর্টের ছায়া কপি ও ছবি পাঠানো হয়। এর সূত্র ধরে হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, গত ২০০৯ সালের ৮ অক্টোবর কবিরহাট উপজেলার সোন্দলপুর ইউনিয়নের বড় রামদেবপুর গ্রামের ইউসুফ আলীর মেয়ে নিলুফার ইয়াসমিন কলির সাথে পারিবারিকভাবে মোশাররফ হোসেন উজ্জলের বিয়ে হয়। তাদের পাঁচ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্যে উজ্জল স্ত্রী কলির ওপর শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। এরপর থেকে একাধিকবার বিদেশ যাওয়ার জন্য বাবার বাড়ি থেকে কলি টাকা এনে দেয় উজ্জলকে। পরে সে ওই টাকা দিয়ে সৌদিতে যায়।
নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ, গত ২ মাস আগে উজ্জল দেশে এসে জেলা শহর মাইজদী বছিরার দোকান এলাকায় তাদের ভাড়া বাসায় ওঠে। দেশে এসেই উজ্জল একই কায়দায় যৌতুকের জন্য কলির ওপর আবারও নির্যাতন শুরু করে। সর্বশেষ গত বুধবার রাতে উজ্জল আবারও কলিকে মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে শিশু সন্তানকে বেঁধে রেখে কলির মাথার চুল কেটে দিয়ে গরম খুন্তি দিয়ে সারা শরীর ঝলসে দেয়। পরে গোপনে ছেলেকে নিয়ে মাইজদীর বাসা থেকে পালিয়ে বাবার বাড়ি সোন্দলপুর চলে আসে কলি। শুক্রবার তাকে চিকিৎসার জন্য কবিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। সেখানেও সন্ত্রাসী নিয়ে হামলা চালায় উজ্জল। সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য কলিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন চিকিৎসক। সেখান থেকে রাতে কলিকে জেলা সদরে নেয়ার সময় আবারও ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে উজ্জল। পরে, স্থানীয়দের তাড়া খেয়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। বর্তমানে কলি নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন