॥ এগার ॥
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন: ‘‘ব্যভিচারিনী ও ব্যভিচারী যেনা করলে উভয়ের প্রত্যেককে একশত বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান প্রয়োগে তোমাদের উভয়ের ব্যাপারে নম্রতা দেখানো যাবে না, যদি তোমরা আল্লাহ্ ও পরকালে বিশ্বাস করে থাক। আর মু’মিনদের একটি দল উভয়ের শাস্তি প্রয়োগ প্রত্যক্ষ করবে। যেনাকারী পুরষ যেনাকারিনী মহিলা যেনাকারী বা মুশরিক পুরুষ ব্যতীত অন্য কাউকে বিবাহ করতে পারবে না। আর এরা মুমিনদের জন্য হারাম।’’
রসুল স. বলেছেন: ‘‘আমার নিকট থেকে নিয়ে নাও, আল্লাহ্ ঐ সকল মহিলার জন্য পথ বের করে দিবেন। যুবক-যুবতী যেনা করলে তাদের শাস্তি একশত বেত্রাঘাত ও একবছর নির্বাসন। আর বিবাহিত মহিলা ও পুরুষ যেনা করলে তাদের শাস্তি একশত বেত্রাঘাত ও পাথর দ্বারা রজম।’’ এমনিভাবে আরো অনেক হাদীস রসূল স. থেকে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং আমাদের সকলের উচিত যে, এসকল খারাপ ও অশ্লীল কাজ থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখা এবং অপরকে বিরত থাকা। প্রচলিত আইনে পতিভাকৃত্তিকে জঘন্য অপরাধ মনে করা হয়ে থাকে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ভাষ্যে বলা হয়েছে: ‘‘যে ব্যক্তি ১৮ বছরের কম বয়স্কা কোন ব্যক্তি যে কোন বয়সে বেশ্যাবৃত্তি বা অন্য কোন লোকের সহিত অবৈধ যৌন সম্পর্ক অথবা কোন বে-আইনি ও অসৎ উদ্দেশ্যে নিয়োজিত বা ব্যবহৃত হইবে এই উদ্দেশ্যে কিংবা অনুরূপ ব্যক্তি যে কোন উদ্দেশ্যে নিয়োজিত বা ব্যবহৃত হইবে এইরূপ সম্ভাবনা জানিয়া তাহাকে বিক্রয় করে, ভাড়া দেয় বা প্রকারন্তরে হস্তান্তর করে সেই ব্যক্তি যেকোন বর্ণনার কারাদণ্ডে যাহার মেয়াদ ১০ বছর পর্যন্ত হইতে পারে দন্ডিত হইবে তদুপরি অর্থদন্ডে দন্ডিত হইবে।’’ যে ব্যক্তি ১৮ বছরের কম বয়স্কা কোন ব্যক্তি যে কোন বয়সে বেশ্যাবৃত্তি বা অন্য কোন লোকের সহিত অবৈধ যৌন সম্পর্ক অথবা কান-বে-আইনি ও অসৎ উদ্দেশ্যে নিয়োজিত বা ব্যবহৃত হইবে এই উদ্দেশ্যে কিংবা অনুরূপ ব্যক্তি যে কোন উদ্দেশ্যে নিয়োজিত বা ব্যবহৃত হইবে এইরূপ সম্ভাবনা জানিয়া তাহাকে ক্রয় করে, ভাড়া দেয় বা প্রকারন্তরে হস্তান্তর করে সেই ব্যক্তি যেকোন বর্ণনার কারাদন্ডে যাহার মেয়াদ ১০ বছর পর্যন্ত হইতে পারে দন্ডিত হইবে তদুপরি অর্থদণ্ডে দন্ডিত হইবে।
‘পাচার’ শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে ঞৎধভভরপশরহম, করফহধঢ়ঢ়রহম, ঝসঁমমষরহম. শব্দটির প্রচলিত অর্থ হচ্ছে, অন্যায় ও অবৈধ উপায়ে কোন জিনিস যথাযথ স্থান থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া। অবৈধ উপার্জনের অন্য আরেকটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হচ্ছে মানবপাচার। নারী ও শিশু পাচারের মত জঘন্য অপরাধের প্রবণতা আগেও ছিল, বর্তমানেও আছে। জাহিলী যুগে আরবেও শিশু পাচারের ঘটনা দেখা যায়। অবশ্য শিল্প বিপ্লবের পর এর বিস্তার এত বেশি হয়েছে যে, তা সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। বর্তমান যুগে অর্থ উপার্জনের সহজ মাধ্যম হিসেবে একটি দেশী-বিদেশী দুষ্টচক্র লোক পাচার করার কাজকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে। পৃথিবীতে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বিভিন্ন অপরাধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের শাস্তির বিধান রয়েছে ইসলামে। অপরাধগুলোকে শাস্তির স্তরভেদে তিন ভাগে ভাগ করা হয়: ১. হুদূদ সংক্রান্ত অপরাধ ২. কিসাস ও দিয়াত সংক্রান্ত অপরাধ। ইসলামি শরীয়তের দৃষ্টিতে অপরাধ যাই হোক না কেন তা উল্লেখ তিন প্রকারের শাস্তি পদ্ধতির মধ্যে সীমাবদ্ধ। পাচার কিসাস এর শাস্তি আরোপ করার মত অপরাধ নয়, আবার হুদূদ সংক্রান্ত যতটি অপরাধের উল্লেখ করা হয়েছে তারও আওতাভূক্ত নয়। এটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটি প্রতারণামূলক কাজ। প্রতারণার মাধ্যমে পাচারকারীরা মানুষকে ক্ষতিকর ও সমাজবিরোধী কাজের সাথে সম্পৃক্ত করছে। তাই এটি তা’যীর সংক্রান্ত অপরাধসমূহের একটি অপরাধ।
এ প্রসঙ্গে মুসলিম পণ্ডিতগণ বলেছেন: ‘‘প্রতারণার মাধ্যমে পাচারের শাস্তি বিধানে সরকার তার ধরণ ও ভয়াবহতার ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড, চাবুক মারা, জেলে আটকে রাখা, নির্বাসনে দেয়া, মাল ক্রোক করা, শোকজ নোটিশ, সতর্কীকরণ নোটিশ, সশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ, বয়কট করা, র্ভৎসনা করা ও উপদেশ দেয়া ইত্যাদির যে কোন শাস্তি নির্ধারণ করতে পারে।’’ তবে যদি পাচারকারী কোন নারীকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে অথবা অপহরণ করে পাচার করে, তবে তার উপর অপহরণের জন্য শরীয়ত নির্ধারিত শাস্তি (হাদ্দুল হিরাবা) প্রযোজ্য হবে। আর যদি কেউ শিশুকে চুরি করে পাচার করে তবে তাকে তা’যীর হিসেবে রাষ্ট্র যে কোন ধরণের শাস্তি দিতে পারে। ২০০০ সালের বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে পাশকৃত নারী ও শিশু অধিকার সম্পর্কিত ৮ আইনের ৫নং ধারায় পাচারের শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে: ক) যদি কোন ব্যক্তি কোন বেআইনি বা নীতিগর্হিত উদ্দেশ্যে কোন শিশুকে বিদেশ হইতে আনয়ন করেন বা বিদেশে প্রেরণ বা পাচার করেন অথবা ক্রয় বা বিক্রয় করেন বা উক্তরূপ কোন উদ্দেশ্যে কোন শিশুকে নিজ দখলে, জিম্মায় বা হেফাজতে রাখেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডণীয় হইবেন। খ) যদি কোন ব্যক্তি নবজাতক শিশুকে হাসপাতালে, শিশু মাতৃসদন, নার্সিং হোম, ক্লিনিক ইত্যাদি বা সংশ্লিষ্ট শিশুর অভিভাবকের হেফাজত হইতে চুরি করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি উপ-ধারা (ক) এ উল্লেখিত দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
আমানতের খিয়ানত একটি জঘণ্য কাজ এবং এর দ্বারা উপার্জিত সম্পদও হারাম। আল্লাহ বলেন: ‘‘তোমাদের কাউকে যদি কোন ব্যক্তি কোন কিছুর আমানতদার বানায় বা কোন বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে, তাহলে সে যেন উক্ত আমানত প্রাপককে পরিশোধ করে দেয় এবং সে যেন (এ ব্যাপারে) তার রব আল্লাহকে ভয় করে। তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না, যে কেউ তা গোপন করে অবশ্যই তার অন্তর পাপী। তোমরা যা কর আল্লাহ তা সবিশেষ অবহিত। অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন: ‘‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তোমাদের ওপর ন্যস্ত আমানতের খেয়ানত করো না। অথচ তোমরা জান।’’ অপর এক আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন: ‘‘আর কোন নবীর জন্য কোন কিচু আত্মসাৎ করা মানানসই নয়, আর যে ব্যক্তি কোন কিছু আত্মসাৎ বা গোপন করবে, কিয়ামতের দিন সে উক্ত আত্মসাৎকৃত বস্তসহ উপস্থিত হবে; অত:পর প্রত্যেককে তার পরিপূর্ণ বদলা দেয়া হবে এবং কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না।’’
মুফাসসিরগণ বলেছেন: এ আয়াত সাহাবী আবু লুবাবা সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল। বনু কুরাইয়া গোত্রের পল্লীতে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা বসবাস করছিল। রসুল স. বনু কুরাইযাকে অবরোধ করে রেখেছিলেন। তিনি আবু লুবাবাকে কোন প্রয়োজনে বনু কুরাইযার কাছে পাঠিয়েছিলেন। বনু কুরাইযার লোকেরা জিজ্ঞেহস করলো: ‘‘হে আবু লুবাবা! আমাদের ব্যাপারে রসুলের রায় অনুসারে আমরা যদি নেমে আসি, তা হলে আমাদের কি হবে বলে তোমার মনে হয়?
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন