শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

রোনালদোর পর্তুগাল আসলেই ভাগ্যবান!

প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস ডেস্ক : পরশু যারা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল বনাম লুকা মড্রিচের ক্রোয়েশিয়ার মধ্যকার ম্যাচের সাক্ষী হয়েছেন তারা হয়তো একটু বিরক্তই হবেন। দু’দলই যেন পণ করে মাঠে নেমেছিলো যে, গোল দিতে পারি আর না পারি কোনোভাবেই গোল হজম করা যাবে না। পুরোটা সময় তারা লঁসের দর্শকদের উপহার দিয়েছেন এলোমেলো আর বিরক্তিকর ফুটবল। নির্ধারিত সময় পর্যন্ত গোল তো দূরের কথা, গোলমুখী কোনো শটই ছিল না ম্যাচে! ১৯৮০ সালের পর আসরে এমন ঘটনা এই প্রথম। যে রোনালদোর কারণে ম্যাচের দিকে এমন বাড়তি নজর সেই তিনিই বক্সের মধ্যে বলে পা লাগান ৬৫তম মিনিটে সেটাও ক্ষণিকের জন্য!
অতিরিক্ত সময়ে ফুটবল যেন কিছুটা প্রাণ ফিরে পায়। আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণে কয়েকটি সুযোগ আসে দু’দলের সামনেই। এই যাত্রায় সুযোগ কাজে লাগিয়ে জয়ী হন পর্তুগালই। অতিরিক্ত সময়েরও একেবারে শেষ মুহূর্তে পর্তুগিজদের উল্লাসে মাতোয়ারা হওয়ার উপলক্ষ এনে দেন রিকার্ডো কারিজমা। তবে গোলটাতে তার চেয়ে বেশি অবদান রিয়াল তারকা রোনালদোরই। নানীর দুর্দান্ত পাসে গোলে জোরালো শট নেন রোনালদো। বল গোলরক্ষকের পায়ে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বল ফাঁকা জালে পাঠিয়ে দেন কারিজমা। এর আগে ও পরে গোলের সুযোগ পেয়েছিল ক্রেয়েশিয়াও। কিন্তু তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হওয়ায় টানা ১০ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর এদিন হার মানতেই হয় মড্রিচ-রাকিটিচদের।
শিষ্যদের কাছ থেকে এমন ম্যাচ উপহার পেয়েও খুশি পর্তুগিজ কোচ ফার্নান্ডো সান্তোস। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘এটা খুব ট্যাকটিক্যাল একটি ম্যাচ ছিল। পর্তুগাল নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা করেছে কিন্তু ক্রোয়েশিয়া আমাদের তা নিতে দেয়নি। একইভাবে তারা যখন নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা করেছে, আমরা নিতে দেইনি।’ তবে এমন পরিস্থিতির জন্যেই নাকি প্রস্তুত ছিলেন সান্তোস। ব্রাজিলিয়ান বলেন, ‘আমরা তৈরি ছিলাম। ক্রোয়েশিয়ার শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং তাদের দুর্বলতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করার জন্য দলকে প্রস্তুত করেছিলাম আমি। আমরা তাদের প্রতি-আক্রমণ করতে দেইনি, আমরা এটাতে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছিলাম।’
পর্তুগিজদের ভাগ্যটা ভালো বলতেই হয়। খাতা কলমের হিসেবে তাদের গ্রæপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই পরের রাইন্ডে আসার কথা ছিল। কিন্তু তা তোলই না, এমনকি রানার্স-আপ হিসেবেও নয়। গ্রæপ পর্বে জয় নেই একটিও, তিন ড্র’য়ে গ্রæপ পর্বের সেরা তৃতীয় স্থানধারী দল হিসেবে শেষ ষোলোয় সুযোগ পায় তারা। এটাই তাদের ফাইনালের পথ সুগম করেছে। কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ পোল্যান্ড। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি ভাগ্যে জিতেছে তারা। এখনো টুর্নামেন্টে পোলিশদের ভয়ঙ্কর রুপে পাওয়া যায়নি। তা স্বত্বেও পোলিশদের নিয়ে ঠিকই স্বতর্ক পর্তুগিজ কোচ, ‘যেহেতু শেষ আটে এসেছে সেহেতু অবশ্যই তারা শক্তিশালী একটি দল। আমি ম্যাচটি দেখেছি, পোল্যান্ড ভালো খেলেছে, এর পর কিছু সময়ের জন্য সুইজারল্যান্ড তাদের উপরে ছিল। অতিরিক্ত সময়ে খুব ভারসাম্যপূর্ণ ছিল ম্যাচটা।’
গ্রæপ পর্বে চ্যাম্পিয়ন বা রানার্স-আপ হলে ফাইনালের পথে তাদের সম্ভব্য প্রতিপক্ষ ছিল আসরের অন্যতম ফেভারিট স্পেন, ইতালি, ইংল্যান্ড, জার্মানি বা ফ্রান্সের মত দল। এক্ষেত্রে তা এড়ানো গেছে! এই পথে তাদের সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ ভাবা হচ্ছিল ক্রোয়েশিয়াকেই। সেই বাধা উতরানো গেলো বেশ কষ্টে। কোয়ার্টার ফাইনালে পোলিশদের হারাতে পারলে সেমিফাইনালে তারা পাবে ওয়েলস, হাঙ্গেরি বা বেলজিয়ামের দত দল। এখানে বেলজিয়ামকেই সবচেয়ে বড় বাধা মনে হতে পারে। কিন্তু ফিফা র‌্যাংকিংয়ের দুই নম্বরধারী দলকে এখন পর্যন্ত নামের প্রতি তেমন সুবিচার করতে দেখা যায়নি। কোনভাবে এই বাধা পেরুতে পারলেই ফাইনালে পা রাখবে রোনালদোর পর্তুগাল। হাঙ্গেরী, ওয়েলকে নিয়ে আলাদাভাবে বলার কিছুই নেই। আসরের মূল পর্বে প্রথম সুযোগ পেয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠাই ওয়েলসের জন্য বিশেষ কিছু। শিরোপা স্বপ্ন তো তাদের জন্যে আরো দুরের বাতিঘর? আর হাঙ্গেরীকে তো গ্রæপ পর্বে দেখেছেই রোনালদোরা।
২০০৪ সালে ঘরের মাঠে ফাইনালে উঠেও শিরোপা ছুয়ে দেখা হয়নি পর্তুগিজদের। এটাই আসরে তাদের সর্বোচ্চ অর্জন। এবার তাদের সামনে সুযোগ দেশের শিরোপা বন্ধাত্ব ঘোঁচানোর। রোনালদোর মত খেলোয়াড় যে দলে তারা তো এমন স্বপ্ন দেখতেই পারে। রোনালদোরও যে আজন্ম ইচ্ছে, খোলোয়াড় হিসেবে দেশের হয়ে শিরোপা জেতা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন