বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জাপার কান্ডারি জি এম কাদের

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউশনে সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

জাতীয় পার্টির কান্ডারী হলেন জিএম কাদের। এরশাদ যখন কারাবন্দি ছিলেন তখন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরীকে ‘দলের কান্ডারি’ বলা হতো। প্রধান পৃষ্ঠপোষকের পদ পেলেও রওশন এরশাদ সম্মেলনে আসেননি। কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে সান্তনা পুরস্কার হিসেবে কো-চেয়ারম্যান পদে বসাতে দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হয়েছে। পরবর্তীতে তাদের সে পদে বসানো হবে। 

এরশাদের অবর্তমানে জাতীয় পার্টির প্রথম (পার্টির নবম) জাতীয় সম্মেলনে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি। মহাসচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মোঃ মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ এমপি। জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক নির্বাচিত হয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ এমপি। সম্মেলনে অনুপস্থিত হলেও রওশন এরশাকে ‘প্রধান পৃষ্ঠপোষক’ পদ দিয়ে দলের ক্ষমতা ভাগাভাগি করা হয়েছে। সম্মেলনে সুভেচ্ছা বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ২১ বছর পর আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা এবং দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভুমিকার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির কাছে আওয়ামী লীগ চিরকৃতজ্ঞ। তবে সম্মেলনে জিএম কাদের বলেছেন, রাষ্ট্র গঠনের ৪৮ বছর পর এখনও স্বাধীনতার সুফল মানুষ ভোগ করতে পারছে না; সর্বাত্মক অর্থনৈতিক মুক্তি আসেনি, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি।
জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতাদের নিয়ে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউশন চত্বরে প্রবেশ করেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের সকাল ১০টায়। এসময় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোল এবং শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে জাতীয় সম্মেলনের শুভ সূচনা করেন। দলটির সম্মেলন উপলক্ষ্যে জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে পোষ্টার, ব্যানারে ছেয়ে ফেলা হয়। রঙিন পোষ্টারে রাস্তার আশপাশের স্থাপনা রাঙানো হলেও সম্মেলনে ছিল না কোনো জৌলুস। সম্মেলন কার্যত হয়েছে নিয়ম রক্ষার।
দলের ক্ষমতা ভাগাভাগি করে ‘চিফ প্যাট্রন (প্রধান পৃষ্ঠপোষক)’পদ চূড়ান্ত করার পরও সম্মেলনে রওশন এরশাদ আসেননি। তার অনুপস্থিতিতে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি করে। অনেকটা চুপসে যান আওয়ামী লীগ পন্থি হিসেবে পরিচিত রওশন অনুসারিরা। তবে তাদের কেউ বলেন, বয়সের কারণে রওশন সম্মেলনে আসেননি। কেউ বলেছেন, অসুস্থতা। আবার কেউ বলেন, জিএম কাদেরকে তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে মানতে পারেননি। কারণ এরশাদের স্ত্রী হিসেবে তারই দলের চেয়ারম্যান হওয়ার কথা ছিল। পর্দার আড়াল থেকে চাপের মাধ্যমে সে চেস্টাও হয়েছে। কিন্তু সরকার জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে আগ্রহী হয়নি। এখন জিএম কাদেরের পাশে দলের সেকেন্ড ম্যান হিসেবে উপস্থিত থাকা তার জন্য এক ধরনের অস্বস্তি। ফলে তিনি সম্মেলনে আসেননি। যদিও গতকাল (২৭ ডিসেম্বর) জাপার প্রেসিডিয়াম সভায় রওশন এরশাদকে করা হয়।
জাতীয় পার্টির জাতীয় কাউন্সিলের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম কাউন্সিলে প্রধান প্রষ্ঠপোষক পদে রওশন এরশাদ ও চেয়ারম্যান পদে জিএম কাদেরের নাম প্রস্তবনা করলে কন্ঠ ভোটে প্রধান পৃষ্ঠপোষক নির্বাচিত হন বেগম রওশন এরশাদ এমপি এবং বিপুল করতালির মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই পার্টির মহাসচিব হিসেবে মোঃ মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ এমপির নাম ঘোষণা করেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি।
নতুন করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর জিএম কাদের বলেন, পল­ীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়নের প্রয়াসই হবে আমার অঙ্গীকার। ৯ বছরের সফল রাষ্ট্রনায়ক এরশাদ ব্যতীত জাপার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কেবল এই সম্মেলনেই এই শূন্যতা বিরাজ করছে না, গোটা দেশ তা অনুভব করছে। দলের প্রতিটি নেতাকর্মী-সমর্থক এই সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছেন পল­ীবন্ধুর শূন্যতা বুকের গভীরে ধারণ করে। সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও মাদক সমাজ জীবনকে বিপর্যন্ত করে তুলেছে। সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণে এখনো অনেক ঘাটতি রয়েছে। বেকারত্ব যুবসমাজকে হতাশাগ্রস্থ করে রেখেছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিরাজ করছে শূন্যতা। সহমর্মিতা ও সহনশীলতার রাজনৈতিক প্রবণতা ক্রমান্বয়ে সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম মূলমন্ত্র ছিল বৈষম্যহীন ন্যায় বিচারভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গড়া। সেই লক্ষ্যের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নই এখন আমাদের রাজনীতি, আমাদের সংগ্রাম, আমাদের যুদ্ধ।
পার্টির মহাসচিব মউির রহমান রাঙ্গাঁ এমপি যারা বিভিন্ন সময় জাতীয় পার্টি ছেড়ে গেছেন তাদের দলে ফিরতে উদাত্ত আহবান জানিয়ে বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে আমাদের নির্বাচনী অ্যালায়েন্স আছে। রাজনৈতিক সুস্পর্ক আছে কিন্তু গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ে আওয়ামী লীগের কর্মীরা জাতীয় পার্টি নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার অবিচার করে। জাতীয় পার্টি নেতা-কর্মীদের মামলা ও হামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে।
জাতীয় পার্টির ৯ম জাতীয় সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসল ইসলাম মাহমুদ, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, এ্যাড. কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, গোলাম কিবরিয়া টিপু, এ্যাড. শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, সুনীল শুভরায়, মীর আবদুস সবুর আসুদ, সোলায়মান আলম শেঠ, আব্দুর রশীদ সরকার, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা (রংপুর মেয়র), লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি। সভা সঞ্চালনায় ছিলেন গোলাম মোহাম্মদ রাজু, সুলতান মাহমুদ, এমএ রাজ্জাক খান। ##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন