বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

দৌলতপুরে ধান কেনায় অনিয়মের অভিযোগ

তালিকায় অকৃষক ও প্রবাসীর নাম ব্যবসায়ীদের ধান খাদ্যগুদামে

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

 কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সরকারিভাবে ধান ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কৃষকের তালিকাতেও রয়েছে নানা অসঙ্গতি। একই ব্যক্তির নাম কৃষক তালিকার একাধিক স্থানে রয়েছে। তালিকায় রয়েছে অকৃষক, ফুটপাথের ডিম বিক্রেতা, ভিক্ষুক ও দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে বসবাস করছেন এমন ব্যক্তির নামও কৃষক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে ধান উৎপাদনকারী সাধারণ কৃষকদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও মাঠ পর্যায়ে গিয়ে ধান ক্রয়ের সরকারি সিদ্ধান্ত থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। কোন নিয়ম নীতি না মেনে রাতের আধারেও দৌলতপুর খাদ্য গুদামে কৃষকের পরিবর্তে ব্যবসায়ীরা ধান সরবরাহ করছেন। যা দেখার কেউ নেই বলে ভূক্তভোগীদের অভিযোগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, চলতি মৌসুমে সরকারীভাবে দৌলতপুরে ২হাজার ৪শ ২৪ মেট্রিক টন আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যে ২ হাজার ৪শ ২৪ জন কৃষককে লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়। উপজেলা পরিষদ কনফারেন্স রুমে লোক দেখানো লটারি করা হলেও তাৎক্ষনিকভাবে লটারির মাধ্যমে ঘোষিত নির্ধারিত কৃষকদের নাম ধান ক্রয়ের তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করা হয়নি। যদিও লটারি হওয়ার ১৫দিন পর ইচ্ছেমতব্যক্তিদের নাম আবার ভৌতিক নাম তালিকাভূক্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিজেদের সুবিধা আদায়ে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ধান ক্রয় কার্যক্রম পরিচালিত করছেন।
এতে করে প্রাপ্ত ভূক্তভোগী কৃষকরা ধান বিক্রয়ের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। চুয়ামল্লিকপাড়ার কৃষক রানা হোসেন জানান, লটারিতে তার নাম ঘোষণা করা হলেও ধান ক্রয়ের তালিকায় তার নাম নাই। এনিয়ে তিনি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। উপজেলার বোয়লিয়া ইউনিয়নের গোয়ালগ্রামের হরেন্দ্রনাথ দাসের কোন আবাদি জমি না থাকলেও ধান সংগ্রহের কৃষক তালিকায় তার নাম রয়েছে। দৌলতপুরের ডিম বিক্রেতা সুলতানের নাম একই তালিকায় দু’বার ব্যবহার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের কাপড়পোড়া গ্রামের ময়নাল হক, সফিকুল ইসলাম, আব্দুর রব, দৌলতপুর গ্রামের সাবুল আল মামুন, আইনাল হোসেন, জহিরুল হক, নুরুজ্জামান, আব্দুল ওয়াহিদ, আরমান হোসেন, বেলাল হোসেন, রায়হান আলী, সাজলীন, সাজ্জাদ হোসেন, সাহাদ হোসেন নামে কোন কৃষকের অস্বিত্ব খুঁজে পাওয়া না গেলেও এদের নাম ধান ক্রয়ের তালিকায় রয়েছে। একই ব্যক্তির নাম ও মোবাইল নম্বর একাধিকবার ব্যবহার করা হয়েছে। কাপড়পোড়া গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেন, জাবেদ আলী, তরিকুল ইসলামের কোনও নিজস্ব জমি বা বর্গা জমির আবাদ না থাকলেও তারা ধান সরবরাহের তালিকায় রয়েছেন।
একইভাবে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ধান চাল ক্রয়-বিক্রয়ের প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সদস্যরা নিজ নিজ এলাকার অর্ধশত থেকে শতাধিক ভুয়া বা গায়েবি কৃষকের নাম তালিকাভূক্ত করে তাদের নামে দৌলতপুর খাদ্য গুদাম ধান সরবরাহ করা হচ্ছে। আর সরবরাহ করা এসব ধান দৌলতপুর উপজেলার বাইরে থেকে ক্রয় করে আনা হচ্ছে। আদাবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মুকুল হোসেন জানান, বিগত দিনের ধারা অনুযায়ী কৃষকদের পরিবর্তে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী নিজেদের মত তালিকা করে এ ধান সরবরাহ করছেন। এখানে কৃষকরা কোন সুবিধা পাচ্ছেন না। বৈরাগীর চরের সাইদুর রহমানেরও একই অভিযোগ।
দৌলতপুরের কতিপায় চিহ্নিত ধান চাল ব্যবসায়ী কয়েকযুগ ধরে একই ধারাবাহিকতায় দৌলতপুর খাদ্য গুদামে ধান চাল সরবরাহ করে থাকেন। পূর্বের ন্যায় চলতি মৌসুমেও একইভাবে ধান সরবরাহ করছেন। রাতের আধাঁরেও সরবরাহ করা হচ্ছে ধান এমন অভিযোগ প্রত্যক্ষদর্শীদের।
এবিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার বলেন, লটারি করে কৃষক নির্বাচন করা হয়েছে। নির্বাচিত কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হচ্ছে। যেসব অভিযোগ করা হয়েছে সেসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। আর কৃষকদের তালিকা সরবরাহ করেছে কৃষি অফিস। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরদিকে কৃষকদের তালিকা প্রসঙ্গে দৌলতপুর কৃষি অফিসার একেএম কামরুজ্জামান বলেন, দৌলতপুর কৃষি অফিসের তালিকাভূক্ত কৃষকদের তালিকা ধান ক্রয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সরবরাহ করা হয়েছে। সরবরাহকৃত কৃষকদের তালিকায় গরমিল হওয়ার কথা নয়। এমনটি হলে তদন্ত করে দেখা হবে। মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় সরকাররের এমন মহৎ উদ্দেশ্যকে যারা নিজেদের সুবিধা আদায়ে ব্যবহার করে কৃষকদের পরিবর্তে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি ভূক্তভোগী কৃষকদের।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন