বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ইংরেজি নববর্ষ সংখ্যা

চট্টগ্রামে বছরজুড়ে আলোচনায় খুনোখুনি ‘বন্দুকযুদ্ধ’

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

চট্টগ্রামে অব্যাহত খুনোখুনি আর কথিত বন্দুকযুদ্ধ ছিলো বছরজুড়ে আলোচনায়। ২০১৯ সালের শুরুতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন সোহেল হত্যাসহ অসংখ্য চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা ঘটে। শাসকদলের রাজনৈতিক কলহ বিরোধ, কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা, পারিবারিক কলহ আর ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায়ও খুন হয়েছেন অনেকে। সীতাকু-ে ডাকাতদের হাতে গরিবের ডাক্তার খ্যাত এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শাহ আলমের নির্মম খুনের ঘটনাও ছিলো আলোচিত। এ বছর নগরীতে ৮৩ জনসহ চট্টগ্রামে অন্তত দেড়শটি খুনের ঘটনা ঘটে।
বছরজুড়ে র‌্যাব-পুলিশের হাতে অসংখ্য ক্রসফায়ার আর কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাও ঘটেছে। নগরীতে মাদরাসা ছাত্রীকে তুলে নিয়ে চলন্ত প্রাইভেট কারে পালাক্রমে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সাহাবউদ্দিন পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রাণ হারান। র‌্যাবের সাথে একাধিক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ বাঁশখালীতে তালিকাভুক্ত নৌদস্যু দুই সহোদর খলিল আহমদ আর জাফর আহমদসহ বেশ কয়েকজন ডাকাত ও ধর্ষণ মামলার আসামি মারা যায়।
সীতাকু-ে চিকিৎসক খুনের এক আসামিও প্রাণ হারায় র‌্যাবের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’। আগ্রাবাদে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে প্রাণ যায় শীর্ষ চাঁদাবাজ যুবলীগ ক্যাডার খোরশেদ আহমদের। এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করে। তবে সুপথে ফিরে আসার ঘোষণা দিয়ে থানায় আত্মসমর্পণ করার কয়েক ঘণ্টার মাথায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নগরীর খুলশি এলাকায় বেলাল হোসেনের মৃত্যু আর বায়েজিদ এলাকায় এক কিশোরের মৃত্যু সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়।
আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের মধ্যেই ৭ জানুয়ারি প্রকাশ্যে দিনের আলোতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন সোহেলকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তাকে হত্যার পর থানা পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করেন সোহেল শীর্ষ চাঁদাবাজ। স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে হত্যা করেছে। তবে পরে তদন্তে বের হয়ে আসে চাঞ্চল্যকর কাহিনী। মূলত এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জেরে আওয়ামী লীগের একাংশ তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে স্থানীয় কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা সাবের আহম্মেদ, জাতীয় পার্টির নেতা ওসমান খানসহ ৫২ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।
সাবের, ওসমানসহ বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার করা হয় ৩৫ জনকে। ২৩ এপ্রিল এই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মো. জাবেদ নগরীর আগ্রাবাদ জাম্বুরি মাঠে পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক হওয়ার আগে সোহেল ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও ছিলেন। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে তার পরিচিতি ছিল।
সীতাকু- উপজেলার কুমিরায় শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহ আলমের নির্মম হত্যাকা-ও ছিলো আলোনায়। বিদেশে মোটা অংকের বেতনের চাকরি আর উন্নত জীবনযাপন ফেলে মাটির টানে ছুটে আসেন তিনি। সীতাকু-ে নিজ গ্রামে গড়ে তোলেন একটি হাসপাতাল। নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসা থেকে প্রতিদিন সেখানে গিয়ে চিকিৎসাসেবা দিতেন তিনি। ১৭ অক্টোবর রাতে সেখান থেকে লেগুনায় বাসায় ফেরার পথে চালকের সহযোগিতায় যাত্রীবেশী ডাকাতরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে লাশ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে জঙ্গলে ফেলে যায়। পরদিন অজ্ঞাত হিসাবে লাশ উদ্ধারের পর তার পরিচয় যাওয়া যায়। র‌্যাবের অভিযানে এই ঘটনায় জড়িতরা ধরা পড়ে। তাদের মধ্যে নজির আহমেদ সুমন ওরফে কালু (২৬) নামের একজন র‌্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যান।
কালুসহ সীতাকু-ে শিশু ধর্ষণ মামলার আসামি, বাঁশখালীতে অন্তত পাঁচ নৌদস্যু র‌্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধ আর ক্রসফায়ারে মারা যায়। এরমধ্যে আলোচিত ছিলো ১২ অক্টোবর নগরীর আগ্রাবাদে যুবলীগ ক্যাডার চাঁদাবাজদের গডফাদার খোরশেদ আহমেদ নিহতের ঘটনা। যুবলীগের মোগলটুলি ওয়ার্ডের সহ-সভাপতি খোরশেদকে ধরতে গেলে তিনি ও তার বাহিনীর সদস্যরা গুলি করে। এতে র‌্যাবও পাল্টা গুলি করলে বন্দুকযুদ্ধ হয়। এক পর্যায়ে খোরশেদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
পুলিশের সঙ্গেও কথিত বন্দুকযুদ্ধ আর ক্রসফায়ারের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে। তার মধ্যে আলোচিত ছিলো ২৭ জানুয়ারি নগরীর সলিমা সিরাজ মহিলা মাদরাসার এক ছাত্রীকে তুলে নিয়ে চলন্ত প্রাইভেটকারে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সাহাবউদ্দিনের (৩৪) মৃত্যু। কার চালক সাহাবউদ্দিন তার সহযোগীদের নিয়ে ওই ছাত্রীকে লিফট দেওয়ার কথা বলে গাড়িতে তোলে। পরে তাকে পেছনের সিটে ফেলে চলন্তগাড়িতে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের ওই দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করে তারা। পরে তা ছাত্রীকে দেখিয়ে কাউকে ঘটনা না বলতে শাসিয়ে দেয়। এরপর ওই ছাত্রীকে ভিডিও ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ফের ধর্ষণের চেষ্টায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সাহাবউদ্দিন।
এদিকে সুপথে ফিরে আসার অঙ্গীকার করে থানায় আত্মসমর্পণের কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে বেলাল হোসেন নামে এক ঠিকাদারের মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় হয়। পরিবারের দাবি দ্রুত আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে এমন আশ্বাসের ভিত্তিতেই বেলাল হোসেন (৪৩) নিজেই থানায় হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ কথা রাখেনি। যদিও পুলিশের দাবি তাদের গুলিতে নয়, সহযোগীদের গুলিতেই বেলালের মৃত্যু হয়েছে। ৫ সেপ্টেম্বর বেলা দেড়টায় নগরীর খুলিশ থানায় আত্মসমর্পণ করেন বেলাল হোসেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ভাষ্য ওইদিন রাত আড়াইটায় নগরীর জালালাবাদ পাহাড়ে বন্দুকযুদ্ধে তিনি মারা যান। বেলাল কুমিল্লার চান্দিনা থানার কঙ্গাই গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে নগরীর আমবাগান পুকুর পাড় এলাকার নাজমুলের কলোনিতে থাকতেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন