শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

স্বপ্ন রূপ নিচ্ছে বাস্তবে

দৃশ্যমান পদ্মা সেতুর ৩ কিলোমিটার

কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

নিজস্ব অর্থায়নে দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো বছর শেষ হওয়ার আগেই ৩ কিলোমিটার দৃশ্যমান হলো। গতকাল দুপুর একটার দিকে ২০তম স্প্যানটি মাওয়া প্রান্তের ১৮ ও ১৯ নম্বর খুঁটির ওপর স্থাপন করায় স্বপ্নের পদ্মা সেতু বছরের শেষ দিনে তিন কিলোমিটার বা সেতুর প্রায় অর্ধেক দৃশ্যমান হল। ১৯তম স্প্যান বসানোর ১৩ দিনের মাথায় ২০তম স্প্যানটি বসানো হলো।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত সোমবার সেতু ভবনে সাংবাদিকদের বলেন, চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে বহুল প্রত্যাশিত পদ্মাসেতুর স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হবে। এখন থেকে প্রতি মাসে তিনটি করে স্প্যান সেতুতে সংযুক্ত করা হবে। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য পুরোদমে কাজ চলছে এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগেই যান চলাচলের জন্য পদ্মাসেতু উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।

প্রকল্পের দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানান, ২০১৭ সালে ১টি, ২০১৮ সালে ৫টি এবং ২০১৯ সালে ১৪টি স্প্যান বসেছে। এ মাসেই ৩টি স্প্যান বসবার কথা রয়েছে। এভাবেই এখন একের পর এক স্প্যান বসবে। আর দৃশ্যমান হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, এখন আর পদ্মা সেতু নিয়ে বড় কোনো সমস্যা নেই। এখন কাজ হলো নির্মাণকাজ ত্বরান্বিত করা। আশা করা যায়, এ বছরের জুন মাসে পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন করা যাবে। প্রকল্পের উপ-সহকারী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবীর জানান, এ পর্যন্ত ৩৩টি স্প্যান মাওয়ায় পৌঁছেছে। ইতোমধ্যে ২০টি স্প্যান খুঁটির ওপর স্থাপন করা হয়ে গেছে।

সরেজমিনে মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের সামনে আরও ৫টি স্প্যান প্রস্তুত করে রাখতে দেখা গেছে। এছাড়া ৯টি স্প্যান পদ্মার চর এলাকায় অস্থায়ী স্টক ইয়ার্ডে রাখা আছে। যা খুঁটির ওপর স্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে। আরও চারটি স্প্যান চীন থেকে মাওয়ায় আনার প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া সেতুর ৪২টি খুঁটির মধ্যে ৩৫টি সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া সেতুর ৮, ১০, ১১, ২৬, ২৭ ও ২৯ নম্বর খুঁটির কাজও এগুচ্ছে। ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর ৪২ খুঁটিতে ৪১টি স্প্যান বসবে।

দ্বিতল পদ্মা সেতু হচ্ছে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ডাঙার অংশ ধরলে সেতুটি প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। খুঁটির ওপর ইস্পাতের যে স্প্যান বসানো হবে, এর ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। আর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন। পুরো সেতুতে মোট পিলারের সংখ্যা ৪২। প্রতিটি পিলারের রাখা হয়েছিল ছয়টি পাইল। একটি থেকে আরেকটি পিলারের দূরত্ব ১৫০ মিটার। এই দূরত্বের লম্বা ইস্পাতের কাঠামো বা স্প্যান জোড়া দিয়েই সেতু নির্মিত হবে। ৪২টি খুঁটির ওপর এ রকম ৪১টি স্প্যান বসানো হবে। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্তে ২১টি ও জাজিরা প্রান্তে ২১টি স্প্যান বসবে। স্প্যানগুলো চীন থেকে তৈরি করে সমুদ্রপথে জাহাজে করে আনা হয় বাংলাদেশে। ফিটিং করা হয় মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে। তবে কাদামাটির পরই শক্ত মাটি না পাওয়ায় পদ্মা সেতুর ১৪টি পিলারের মধ্যে ১টি করে পাইলের সংখ্যা বাড়ানো হয়। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড মূল সেতু নির্মাণের কাজ করছে।

উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের সেতু। এ সেতুর অর্থায়ন নিয়ে পানি কম ঘোলা হয়নি। বার বার বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নেগেটিভ প্রচারণা হয়েছে। দুর্নীতি না হলেও একপর্যায়ে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ আনে। কিন্তু প্রমাণ চাইলে তারা জানায় দুর্নীতির অভিপ্রায় হয়েছে। এ অবস্থায় কানাডার আদালতে পদ্মা সেতুর দুর্নীতির মামলা খারিজ হয়ে যায়। কিন্তু স্বপ্নের এ সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক টাকা দিবে বলার পরও দুর্নীতির কথিত অভিযোগ করে টাকা ছাড় দেয়া হয়নি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা মনোভাবের কারণে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু করার ঘোষণা দেয় সরকার। এ নিয়ে বিদেশি সংস্থাগুলোর সাথে নানাভাবে বিতর্কে জড়িয়ে গেলেও থেমে থাকেনি বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। দেশিয় অর্থায়নেই শুরু করা হয় নির্মাণ কাজ। এখন দ্রæত গতিতেই এগিয়ে চলছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন