বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মিলগেটে আহাজারি

পাটকল শ্রমিকদের আমরণ অনশন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

নতুন বছরের নতুন স্বপ্ন আর ভাবনায় উচ্ছ্সিত মানুষ। কিন্তু হাসি নেই খুলনা, রাজশাহী ও নরসিংদীসহ সারা দেশের পাটকল শ্রমিকদের। বুকভরা কষ্ট, চাপা কান্না, আর্তনাদ, হতাশা আর হাহাকার নিয়ে তীব্র শীত উপেক্ষা করে খোলা আকাশের নিচে অনাহারে দিন পার করছেন তারা।

মিল গেটে চলছে শ্রমিকদের কান্না আর আহাজারি। কিন্তু তাদের খোঁজ রাখার সময় নেই যেন কারও। কান্না আর বাঁচার আকুতিতে ক্রমেই ভারী হয়ে উঠছে ওই এলাকার বাতাস। দু-মুঠো খাবার জোগাতে কাজে যোগ দিতে চান শ্রমিকরা। দাবি শুধু মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, বকেয়া মজুরি পরিশোধসহ ১১ দফা বাস্তবায়ন। আমাদের ব্যুরো অফিস থেকে পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত :

খুলনা : গত বছরের মতো এ বছরের শুরুতেও মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, বকেয়া বেতন পরিশোধসহ ১১ দফা দাবিতে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন পাটকল শ্রমিকরা। এরই মধ্যে প্রচন্ড শীত ও ক্ষুধায় শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক মুরাদ হোসেন। গতকাল বুধবার চতুর্থ দিনের মতো অনশন পালন করেছে খুলনার ৭টি পাটকলের শ্রমিকরা। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা এ অনশন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।

শ্রমিকদের টানা কর্মসূচিতে খুলনার ৭টি পাটকলের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ফলে দৈনিক প্রায় কোটি টাকার পাটপণ্য উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সেই সাথে খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের বিআইডিসি সড়কের মিল সংলগ্ন এলাকার দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রয়েছে।
অনশনে অসুস্থ শ্রমিকদের ব্যাপারে জানতে চাইলে শ্রমিক নেতা মুরাদ হোসেন বলেন, বেশি অসুস্থদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের অনশনস্থানেই স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে এ মুরাদ জানান, নতুন বছরেও আমাদের জন্য কোনো সুসংবাদ আসেনি। মঙ্গলবার খুলনা জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে শ্রমিক নেতাদের আলোচনা জন্য ডাকা হয়েছিল। কিন্তু কোনো শ্রমিকনেতাই ওই আলোচনায় যাননি। কারণ, এর আগেও অনেক বৈঠক হয়েছে, কিন্তু শ্রমিকদের কোনো দাবি পূরণ হয়নি।

প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক নূর ইসলাম বলেন, আন্দোলন পুরোদমে চলছে। দাবি আদায়ে কঠোর অবস্থানে আমরা। আমাদের কাছে নতুন আর পুরাতন বছর নেই। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবো না।
স্টার জুট মিলের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক শেখ আবদুল মান্নান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ৪ দিন ধরে শ্রমিকরা সড়কের ওপর অবস্থান করছে। তাদের খাওয়া, ঘুম, গোসল নেই। প্রচন্ড শীতে শ্রমিকরা দুর্বল হয়ে পড়ছে। তারপরও দাবি পূরণে বিজেএমসি কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
স্টার জুট মিলের সিবিএ সভাপতি বেল্লাল মল্লিক জানান, তাদের ১১ দফা দাবির মধ্যে মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, বকেয়া ৫ সপ্তাহের মজুরি পরিশোধ, অবসরে যাওয়া শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ, মিলগুলোকে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে না দেওয়া এবং মিলের যন্ত্রপাতি সংস্কার অন্যতম।

এ ব্যাপারে বিজেএমসির আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. বনিজ উদ্দিন মিঞা বলেন, শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়টি প্রধান কার্যালয়কে অবহিত করা হয়েছে। মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন হবে কিনা বা কবে থেকে বাস্তবায়ন হবে তা প্রধান কার্যালয়ই বলতে পারবে।

বিজেএমসি সূত্রে জানা যায়, খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ব ৯ পাটকলের মধ্যে যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিল বাদে বাকি ৭টি পাটকলের উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এ পাটকলগুলোতে প্রতিদিন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৭২ দশমিক ১৭ মেট্রিক টন। কিন্তু বন্ধ থাকায় প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার পাটপণ্য উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পাটকলগুলো। অন্যদিকে সার্বিক প্রেক্ষাপটে বর্তমানে চালু থাকা দুটি পাটকলে উৎপাদিত হচ্ছে মাত্র ৮৬.৩৯ মেট্রিক টন পাটপণ্য। এর বাইরে শ্রমিকদের অনশনস্থল খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের বিআইডিসি সড়কেও কিছু দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

রাজশাহী : রাজশাহীতে পাটকল শ্রমিকদের আমরণ অনশন কর্মসূচি চলছেই। বুধবার টানা চতুর্থ দিনের মতো তারা কর্মসূচি পালন করছেন। দিনরাত কাথা কম্বল নিয়ে শীত উপেক্ষা করেই তারা অবস্থান করছেন। তীব্র শীতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই। ইতোমধ্যেই অসুস্থ চারজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। কেউ কেউ। তারপরেও শ্রমিকদের দাবি পূরণের কোনো লক্ষণ নেই।
রাজশাহী পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জিল্লুর রহমান জানান দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবেন না। এটি তাদের বাঁচা মরার আন্দোলন।

নরসিংদী : চতুর্থদিনের মতো আমরণ অনশন পালন করছে নরসিংদীর ইউ এম সি জুট মিলের শ্রমিকরা। শীত উপেক্ষা করে রাতভর অনশনস্থলে অবস্থান করেন শ্রমিকরা। অনশনে অংশ নিয়ে দুই দিনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনজন শ্রমিক। নতুন বছরের প্রথম দিনে আনন্দ-উৎসবের বিপরীতে আমরণ অনশনে অংশ নিয়েছে শ্রমিকরা। বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিক ইউনিয়ন সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে এ অনশন কর্মস‚চি পালন করছেন তারা। শ্রমিকরা বলছেন, দফায় দফায় আলোচনা হলেও দাবি বাস্তবায়নের কোনও আশা দেখছেন না তারা। বাধ্য হয়ে রুটি-রুজির সংগ্রামে নেমেছে শ্রমিকশ্রেণি। জীবন গেলেও এবারের অনশনে অটুট থাকবেন বলেও জানিয়েছেন শ্রমিক ও নেতারা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
M ismail Kabir Ahmed ২ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:১৪ এএম says : 0
desher eto medha unnoiun ke dhake dewar jonno BNP shorojontro
Total Reply(0)
** হতদরিদ্র দিনমজুর কহে ** ২ জানুয়ারি, ২০২০, ৭:২৬ এএম says : 0
অনশনরত শ্রমিকদের অবস্থা বেহাল দসা। এদের দেখার কি কেউ ই নেই?অনশনরত অবস্থায় এর আগের দফায় একজন শ্রমিক মারা গেলো, কই কর্তৃপখ্খের টনক নড়েছে বলে তো মনে হচ্ছেনা।শুধু আশার বানীতে তো পেট ভরবেনা।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি একটু সদয় হউন।নইলে শ্রমিকের ঘরের খ্খুধার মাতম থামবেনা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন