শনিবার, ৩০ মার্চ ২০২৪, ১৬ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

আরেকটি গ্লানির বছরে সাকিবই সেরা

ফিরে দেখা ২০১৯

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০৩ এএম

একটি ইতিহাস দিয়ে শেষ হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের গত বছর। কলকাতার ইডেন গার্ডেনসের সেই ইতিহাসটা প্রথমবারের মতো দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলার। প্রতিপক্ষ ভারত, ফলও অনুমিত। বছর জুড়ে বাংলাদেশ টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে চিত্রটা ছিল এমনই। মাশরাফি-সাকিবরা মোট ম্যাচ খেলেছে ৩৩টি। এর মধ্যে ৫টি টেস্ট, ২০টি ওয়ানডে এবং ৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ রয়েছে। যার এক-তৃতীয়াংশ ম্যাচেই হারের মুখ দেখতে হয়েছে টাইগারদের। সব মিলিয়ে জয়ের দেখা পেয়েছে মাত্র ১১টিতে, হারের মুখ দেখতে হয়েছে ১৯ ম্যাচে পরিত্যক্ত বাকি ৩টি। অর্থাৎ প্রায় ৩৪.১৮ শতাংশ ম্যাচেই জুটেছে হারের গ্লানি। যেখানে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ জয় টি-টোয়েন্টিতে। আর সর্বনিম্ন অবস্থান টেস্টে।
বিশ্বকাপের বছরে ওয়ানডেতে টাইগারদের শুরুটা হয়েছিল নিউজিল্যান্ডে। তিন ম্যাচ সিরিজে হারের মুখ দেখতে হয়েছিল সবগুলোতেই। এরপর তিন মাসের বিরতির পর বিশ্বকাপের প্রস্তুতি স্বরূপ আয়ারল্যান্ডে উইন্ডিজ, বাংলাদেশ এবং স্বাগতিক দেশকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ। এই সিরিজে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। তবে ত্রিদেশীয় সিরিজে সবক’টি ম্যাচ অর্থাৎ ফাইনালসহ বাকি চারটি ম্যাচে জয়ী হয়ে প্রথমবারের মতো বহুজাতিক টুর্নামেন্টের শিরোপা জয় লাভ করে টাইগাররা।

এরপর বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে মোট নয়টি ম্যাচ খেলার কথা ছিল টাইগারদের। তবে বৃষ্টির কারণে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষের ম্যাচটি পরিত্যক্ত হলে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ খেলার সুযোগ পায় আটটি ম্যাচ। আর গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়ার কারণে এই তালিকায় আর কোনো ম্যাচ যুক্ত হয়নি। বিশ্বকাপের আট ম্যাচের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা, উইন্ডিজ এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ জিতলেও হেরে যায় বাকি পাঁচ ম্যাচ। দশ দেশ নিয়ে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে আট নম্বরে থেকে শেষ করে বাংলাদেশ। যেখানেই আইসিসির ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে টাইগারদের বর্তমান অবস্থান সাত নম্বরে। আর বছরের শেষ ওয়ানডে সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ধবলধোলাইয়ের শিকার হতে হয়েছে।

২০১৯ সালে বাংলাদেশ সর্বমোট একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে ২০ টি, যার মধ্যে জয় ৭টি ম্যাচে, হেরেছে ১১টি ম্যাচে আর বাকি দুইটি ম্যাচ পরিত্যক্ত। ২০১৯ সালে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ম্যাচ জয়ের হার মাত্র ৩৫। যেখানে ৫৫ শতাংশ ম্যাচই হেরেছে টাইগাররা। যেখানে বছর জুড়ে খেলা টাইগার ব্যাটসম্যান আর বোলারদের পারফরম্যান্সও সন্তুষ্ট করতে পারেনি সমর্থকদের। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল সব মিলিয়ে মোট ৮টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে। যার মধ্যে জয়ের দেখা পেয়েছে মোট ৪ ম্যাচে, হেরেছে ৩টিতে আর বাকি একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত।

ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টিতে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের ম্যাচ জয়ে শতকরা হার যথাক্রমে ৩৫ এবং ৫০। তবে টাইগার ক্রিকেট দলের জন্য সব থেকে লজ্জাকর বিষয় হচ্ছে ২০১৯ সালে খেলা ৫টি টেস্ট ম্যাচের মধ্যে একটি ম্যাচেও জয়ের মুখ দেখতে পারেনি বাংলাদেশ। যদি আরও একটু বেশি পর্যালোচনা করা হয়, তবে দেখা যাবে এ বছরটি টাইগারদের টেস্ট ক্রিকেটে একটি অন্ধকার বছর। পুরো বছর জুড়ে একটি ম্যাচেও জয়ের দেখা তো মেলেইনি বরংচ বছর জুড়ে খেলা পাঁচটি টেস্টের মধ্যে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে ৪টি ম্যাচে আর বাকি একটি ম্যাচে সদ্য টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া আফগানিস্তানের বিপক্ষে হেরেছে ২২৪ রানে।

২০১৯ সালে খেলা পাঁচটি টেস্ট ম্যাচের ১০টি ইনিংসে ব্যাট করেছে বাংলাদেশ। আর টাইগার ব্যাটসম্যানদের লজ্জকর বিষয় হচ্ছে এই ১০ ইনিংসের মধ্যে একটি ইনিংসেও দলগত রান ৩০০’র গ-ি পেরুতে পারেনি তারা। অবশ্য দলগতভাবে এক ইনিংসেও ৩০০ রান করতে না পারলেও ২০১৯ সালে ১০ ইনিংসে ৩০০’র গ-ি পেরিয়েছেন মাত্র একজন টাইগার ব্যাটসম্যান। বোলারদের পারফরম্যান্সও ব্যাটসম্যানদের মতোই হতাশাজনক।

পরিসংখ্যান বলছে বাংলাদেশের ক্রিকেটীয় ক্যালেন্ডারটি যেন এক অন্ধকার বছর পার করেছে। ২০১৯ সাল যেখানে প্রাপ্তির খাতায় কেবল বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়। আর উইন্ডিজ এবং আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ত্রিদেশীয় সিরিজ জয়। তবে গড়পড়তা হিসাব করলে প্রাপ্তির থেকে হারানোটাই বেশি টাইগারদের। তবে টেস্ট ক্রিকেটে উনিশ পেরিয়ে কুড়িতে পা রাখা বাংলাদেশ দলের জন্য সব থেকে লজ্জাকর হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্রিকেটের রাজসিক ফরম্যাটের ভরাডুবি। ব্যাটসম্যান কিংবা বোলার দোষীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে পুরো দলকেই। আর ব্যর্থতার গ্লানি বইতে হবে সকলকে।

 

বাংলাদেশের ২০২০ ক্রিকেটসূচি
টুর্নামেন্ট তারিখ
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট ১৭ জানুয়ারি - ৯ ফেব্রুয়ারি
পাকিস্তান সফর জানু.-ফেব্রু. (৩ টি-২০, ২ টেস্ট)
মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২১ ফেব্রুয়ারি - ৮ মার্চ
জিম্বাবুয়ের বাংলাদেশ সফর মার্চ (১ টেস্ট, ৫ টি-টোয়েন্টি)
এশিয়া বনাম বিশ্ব টি-টোয়েন্টি ১৮ ও ২১ মার্চ
আয়ারল্যান্ড সফর মে (৩ ওয়ানডে, ৪ টি-টোয়েন্টি)
অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর জুন (২ টেস্ট)
শ্রীলঙ্কা সফর জুলাই-আগস্ট (৩ টেস্ট)
নিউজিল্যান্ডের বাংলাদেশ সফর আগস্ট-সেপ্টেম্বর (২ টেস্ট)
এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি সেপ্টেম্বর
পুরুষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ১৮ অক্টোবর-২৫ নভেম্বর
শ্রীলংকার বাংলাদেশ সফর ডিসেম্বর (৩ ওয়ানডে)


বাংলাদেশের সেরা ৫
টেস্টে
ব্যাটসম্যান ম্যাচ ইনিংস রান সর্বোচ্চ ৫০/১০০ গড়
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৫ ১০ ৩৩২ ১৪৬ ১/১ ৩৬.৮৯
তামিম ইকবাল ২ ৪ ২৭৮ ১২৬ ২/১ ৬৯.৫০
সৌম্য সরকার ৩ ৬ ২৩০ ১৪৯ ০/১ ৩৮.৩৩
মুশফিকুর রহিম ৩ ৬ ২০৪ ৭৪ ২/০ ৩৪
সাদমান ইসলাম ৫ ১০ ১৯৯ ৪১ ০/০ ১৯.৯০
বোলার ম্যাচ উইকেট ৪/৫ সেরা গড়
তাইজুল ইসলাম ৪ ৯ ১/০ ৪/১১৬ ৫৩.৬৭
আবু জায়েদ রাহী ৪ ৯ ১/০ ৪/১০৮ ৪২.৪৪
মেহেদী হাসান মিরাজ ৪ ৬ ০/০ ২/৩ ৭৯.৮৩
সাকিব আল হাসান ১ ৫ ০/০ ৩/৫৩ ২৩.৪০
এবাদত হোসেন ৪ ৫ ০/০ ৩/৯১ ৭৯.৪০


ওয়ানডেতে
ব্যাটসম্যান ম্যাচ ইনিংস রান সর্বোচ্চ ৫০/১০০ গড়
মুশফিকুর রহিম ১৮ ১৮ ৭৫৪ ১০২* ৫/১ ৫০.২৭
সাকিব আল হাসান ১১ ১১ ৭৪৬ ১২৪* ৭/২ ৯৩.২৫
সৌম্য সরকার ১৭ ১৭ ৫০৬ ৭৩ ৪/০ ২৯.৭৬
তামিম ইকবাল ১৮ ১৮ ৪৪২ ৮০ ৩/০ ২৪.৫৬
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ১৭ ১৫ ৩৫৭ ৬৯ ১/০ ৩২.৪৫
বোলার ম্যাচ উইকেট ৪/৫ সেরা ওভার ইকোনমি গড়
মুস্তাফিজুর রহমান ১৬ ৩৪ ১/২ ৫/৫৯ ১৪১.১ ৬.৭৮ ২৮.১৫
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ১৩ ১৮ ০/০ ৩/৭২ ১০৫ ৬.৩৯ ৩৭.২৮
সাকিব আল হাসান ১১ ১১ ০/১ ৫/২৯ ১০৩ ৫.০৯ ৪০.৩১
মেহেদী হাসান মিরাজ ১৬ ১৩ ০/০ ২/৪৭ ১৪৩.১ ৫.১৩ ৫৬.৫৪
মাশরাফি বিন মুর্ত্তজা ১৫ ০৮ ০/০ ৩/৪৯ ১১৪.৩ ৫.৮২ ৮৩.২৫

 

টি-টোয়েন্টিতে
ব্যাটসম্যান ম্যাচ ইনিংস রান সর্বোচ্চ ৩০+ গড় স্ট্রাইক
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৭ ৭ ১৭৯ ৬২ ৩ ২৯.৮৩ ১২৬.০৬
মোহাম্মদ নাইম শেখ ৩ ৩ ১৪৩ ৮১ ২ ৪৭.৭৬ ১৩৩.৬৪
মুশফিকুর রহিম ৭ ৭ ১২৭ ৬০* ২ ২১.১৭ ১২০.৯৫
লিটন দাস ৭ ৭ ১০৬ ৩৮ ১ ১৫.১৪ ১৩০.৮৬
সাকিব আল হাসান ৪ ৪ ৯৬ ৭০* ১ ৩২.০০ ১৩৭.১৪
বোলার ম্যাচ উইকেট ২/৩ সেরা ওভার ইকোনমি গড়
শফিউল ইসলাম ৫ ৮ ২/১ ৩/৩৬ ১৮ ৮.৩৯ ১৮.৮৮
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৪ ৭ ০/১ ৪/৩৩ ১৬ ৬.০০ ১৩.৭১
আমিনুল ইসলাম বিপ্লব ৪ ৬ ৩/০ ২/১৮ ১৪ ৭.০০ ১৬.৩৩
সাকিব আল হাসান ৪ ৪ ১/০ ২/১৮ ১৬ ৭.৪৪ ৫৬.৫৪
মুস্তাফিজুর রহমান ৭ ৪ ১/০ ২/৩৮ ২৪.৪ ৮.৮ ৫৪.২৫

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন