মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

মীরসরাইয়ে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন

ইমাম হোসেন, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

মীরসরাই উপজেলার ফেনী নদী অংশে ইজারা বিহীন অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নদীর তীর ঘেঁষা মানুষগুলো। উপজেলার ১নং করেরহাট ইউনিয়ন ও ২নং হিঙ্গুলী ইউনিয়ন এলাকায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী একটি মহল। যত্রতত্র বালু তোলায় নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোয় তীব্র ভাঙনের দেখা দিয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই বিষয়ে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিকে জানানো হলেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। বালু তোলার প্রতিবাদে স্থানীয়রা ইতোমধ্যে মানববন্ধন সহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছে। উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগও জানানো হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত বালু উত্তোলনের প্রায় দু’শত একর ফসলি জমি ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিস্তীর্ণ এলাকা নতুন করে ভাঙনের মুখে পড়েছে। যে কারণে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে নদীর পাড়ের জনবসতি।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ১নং করেরহাট ইউনিয়নের ফেনী নদীর কোল ঘেঁষে পশ্চিম জোয়ার, কাটাগাং এবং ২নং হিঙ্গুলী ইউনিয়নের মধ্যম আজম নগর এলাকায় হিঙ্গুলী খালের মুখে ফেনী নদীর মোহনা ট্রলারে কাটা ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত বলে স্থানীয়রা কিছু বলার সাহস পায় না। বৈধ ইজারাদার এর মধ্যে নাঙ্গলমোড়া, কাটাপশ্চিম জোয়ার, হিঙ্গুলী, পশ্চিম জোয়ার, মোল্লাঘাটা থাকলেও বেশিরভাগ কাটা ডেজারের মালিক অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।
২০১০ সালের বালুমহল আইনে বলা আছে, বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান, চা-বাগানের ছড়া বা নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এ ছাড়া সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ।
জানা যায়, ফেনী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা জেলায় উন্নতমানের বালু সরবরাহের বিশাল খনি হিসেবে পরিচিত ফেনী নদীর বালুমহালগুলো। ইজারা ছাড়াই ফেনী নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন নদীতে অসংখ্য ড্রেজার মেশিন বসিয়ে হাজার হাজার ফুট সরকারি বালু লুট করে বিক্রি করছে এই সব অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা।
ফেনী নদীর দুইপাড়ে অবস্থিত বালুমহালগুলো ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা দেয়া হয়। উপজেলা প্রশাসন থেকে ওই বালুমহাল বালু তোলার সীমানা নির্ধারণ করে দেয়া আছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফেনী নদীর লাঙ্গলমোড়া মৌজা ইজারাদার মেসার্স সিদ্দিকী এন্টারপ্রাইজ ও ছাগলনাইয়া অংশে রফিকুল হায়দার চৌধুরী জুয়েলের রৌশন এন্টারপ্রাইজ ও নওরিন এন্টারপ্রাইজসহ চারটি বালুমহালের বৈধ ইজারা রয়েছে।
মধ্যম আজম নগর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা পারভেজ হোসেন বলেন, ছোট বেলা এখানে সরু খাল ছিলো সেটা দিয়ে আমরা সাঁতার কাটতাম। কিন্তু ফেনী নদী মোহনা ৮০-৯০ ফুট নদীর গভীরে বালু উত্তোলনের কারণে ঐ সরু খালটি পাড় ভেঙে বিলিন হয়ে গেছে এবং ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
১নং করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, আমরা সরকারী নিয়ন-কানুন মেনে নদী মাঝ খান থেকে বালু উত্তোলন করার জন্য নির্দেশ দিয়ে থাকি। কেউ যদি সে নির্দেশ অমান্য করে বালু উত্তোলন করে সে ক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসন এর মাধ্যমে আইনানুক ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
বৃহত্তর ফেনী নদী বালু ব্যবসায়ী সমিতি সভাপতি সোনা মিয়া বলেন, মীরসরাই ফেনী নদীর অংশে ৪টি বৈধ ইজারাদার আছে। সরকারি নিয়ম ভেঙে কেউ যদি বালু উত্তোলন করে থাকে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে বলেন, ইতোমধ্যে বালু মহল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মধ্যমে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে কয়েকজনকে জরিমানা করেছি। অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যহত থাকবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন