শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

কে ছিলেন সোলাইমানি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

আমেরিকার ‘হিট লিস্টে’র প্রথম দিকেই ছিলো জেনারেল কাসেম সোলাইমানির নাম। তিনি ইরানের এলিট ফোর্স হিসেবে পরিচিত বিপ্লবী গার্ড করপোরেশনের (আইআরজিসি) ‘কুদস বাহিনী’র প্রধান ছিলেন। দেশটির আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পরই তিনি ছিলেন সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। মার্কিন এয়ারস্ট্রাইকে তার মৃত্যুর পর থেকেই তোলপাড় গোটা বিশ্বের রাজনীতি থেকে অর্থনীতি। বাড়ছে তেলের দাম, পড়ছে টাকার দাম, কেউ কেউ বলছেন যুদ্ধের ইঙ্গিত। অথচ আইএস বিরোধি যুদ্ধে তাকেই মদত দিয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্র।

জেনারেল সোলাইমানি নিজ দেশ ইরানে হাজি কাসেম নামে পরিচিত। তিনি রেভল্যুশনারি গার্ডের একজন কমান্ডার হলেও অলিখিতভাবে তার পদমর্যাদা দেশটির যেকোনো সামরিক কর্মকর্তার ওপরে ছিল। সোলাইমানি তার বাহিনীর পুরো কাজকর্মের জন্য দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে জবাবদিহি করতেন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনি জেনারেল সোলাইমানিকে ‘অর্ডার অব জুলফিকার’ পদক দেন। বিপ্লব-উত্তর ইরানে এই খেতাব তিনিই প্রথম পান।

কাসেম সোলাইমানি ১৯৫৭ সালে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় কেরমান শহরের উপকণ্ঠে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রæয়ারি ইরানে ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের পর আইআরজিসি’তে যোগদান করেন। অতি সাধারণ, নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে তিনি। পড়াশোনাও খুব বেশি নয়। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ইরান-ইরাক যুদ্ধে জেনারেল সোলাইমানি কেরমানের ৪১ ‘সারুল্লাহ’ ডিভিশনের নেতৃত্ব দেন। ওই যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর তিনি ইরানের প‚র্ব সীমান্তে মাদক চোরাচালান ও সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানে কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করে। ওই অভিযানে তিনি মাদক চোরাকারবারী ও সন্ত্রাসীদের হত্যা করার মাধ্যমে ইরানের প‚র্ব সীমান্তের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটান।

১৯৯৭ সালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি তাকে আইআরজিসি’র কুদস বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেন। ইরান রেভোলিউশনারি গার্ডসের এই অভিজাত বাহিনীটি দেশের বাইরে কভার্ট অপারেশন চালিয়ে থাকে। সে সময় ইরানের প‚র্ব সীমান্তে তালেবান যে হুমকি সৃষ্টি করেছিল তার অবসান ঘটাতে সক্ষম হন। ২০১১ সালের ২৪ জানুয়ারি কাসেম সোলাইমানি মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন। তাকে নিয়ে ইরানে তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্র। এমনকি পপ গানেও জায়গা পেয়েছেন ইরানের এই ‘হিরো’।

জানা যায়, সোলাইমানি নিছক একজন সেনা অফিসার ছিলেন না। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান কি ভ‚মিকা নেবে, তার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন সোলাইমানি। বিবিসি জানাচ্ছে, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভ‚মিকা তিনিই কার্যত পালন করতেন। বিশেষত যুদ্ধ কিংবা শান্তির ক্ষেত্রে তিনিই শেষ কথা। বলা হয়, সিরিয়ার যুদ্ধের কারিগরও নাকি তিনি। ইরাকে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেন মেজর জেনারেল সোলাইমানি।
ইরান ও আমেরিকার মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘসময় ধরে শত্রুভাবাপন্ন হলেও ইরাকে আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আদর্শগত দিক বিবেচনায় পরোক্ষভাবে একে অপরকে সহায়তা করেছিল তারা। জেনারেল সোলাইমানি দুই বৈরি ভাবাপন্ন দেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপ‚র্ণ ভ‚মিকাও পালন করেন। তার আগে আফগানিস্তানে তালিবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মার্কিন সেনাদেরকে প্রত্যাক্ষভাবে সহযোগিতা করেন তিনি। কিন্তু যেদিন ইরানের পরমাণু ক্ষমতা খর্ব করার চেষ্টা করেছে আমেরিকা, সেদিন থেকে সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকতে শুরু করে।

২০১৩ সালে এক সাবেক সিআইএ অফিসার বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যে সর্বাধিক একক ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি সোলাইমানি। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বিস্তার করতে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। তাকে সাম্প্রতিক সময়ের বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত সমরবিদ মনে করা হচ্ছিল। তিনি মধ্যপ্রাচ্যসহ পুরো সামরিকজগতের বিশেষ নজরে ছিলেন। সিআইএ-মোশাদের হিটলিস্টে সোলাইমানি ছিলেন বলে বিভিন্ন খবরে জানা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফরেন পলেসি’ জার্নাল ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন পেশার গুরুত্বপ‚র্ণ ব্যক্তিদের একটি তালিকা করে। এই তালিকার সামরিকখাতে জেনারেল সোলাইমানিকে প্রথম স্থানে রাখা হয়। মার্কিন প্রশাসন এই ইরানি জেনারেলকে একজন ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে বিবেচনা করে আসছিল। তিনি মার্কিন সরকারের কালো তালিকায় ছিলেন। তিনি ইসরায়েল ও সউদী আরবেরও মাথাব্যথার কারণ ছিলেন।

ইরনা-পন্থী বাহিনীর হাতে তিনি গোপনে অস্ত্র তুলে দিয়েছেন বলেও জানা যায়। শিয়া মুসলিম ও কুর্দিশদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করতেন বলেও শোনা যায়। আমেরিকাতে হামলা চালাতে গোপনে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলিকে তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়। মার্কিন স্বরাষ্ট্র সচিব মাইক পম্পেও এই কুদস বাহিনীকে জঙ্গিগোষ্ঠী বলে উল্লেখ করেছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, মধ্যপ্রাচ্যে লেবাননের মদতপুষ্ট হিজবুল্লা জঙ্গি গোষ্ঠীর অভিযান ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলিকে পৃষ্ঠপোষকতা ও সমর্থন করতো ইরানের কুদস ফোর্স। এসব সংগঠনকে তারা অর্থ, প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে বলে অভিযোগ আমেরিকার। সূত্র : টাইমস, ইউকে মেট্রো, আল-জাজিরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Pirates King ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫৬ এএম says : 0
অ্যামেরিকা নির্বোধের মতো কাজ করেছে।
Total Reply(0)
Rajin Raj ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫৭ এএম says : 0
এর মূল্য আমেরিকা ও তার মিত্র বাহিনীকে কতটা দিতে হয় সেটাই দেকঅর বিষয়!! রাশিয়া এর চরম জবাব দিবে।তবে বলা যাচ্ছে না,ট্রাম্পের সাথে পুতিনের আবারা ভালো সম্পর্ক আছে।তবে দেখা যাক কি হয়।
Total Reply(0)
Mahi Be Iqbal ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫৭ এএম says : 0
এই দুনিয়াইতে যদি তিনটা রাস্ট্র না থাকতো তবে এই গ্রহটা একটা সর্গ হয়ে যেতো । যেমন আমেরিকা, ইসরাইল, ইন্ডিয়া
Total Reply(0)
Anisul Mustafa Hridoy ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫৭ এএম says : 0
আল্লাহ্ তুমি তাকে জান্নাত দান করো।আমেরিকার পতন হোক
Total Reply(0)
Md Shabbir ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫৮ এএম says : 0
ট্রাম্প নেতানিয়াহুর ভারা করা সন্ত্রাসীর মত কাজ করছেন। যা সভ্য পৃথিবীতে হিটলারের পর আর হয় নি। এটা কোন মতোই গ্রহণ যোগ নয়
Total Reply(0)
Omar Faruyk ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫৯ এএম says : 0
ইরানের উচিত হাজী সোলাইমান কাসেমী আত্মার প্রতিশোধ হিসেবে খুব দ্রুত সময়ের ভেতর পারমানবিক বোমা তৈরি করে প্রথমেই সেটা ইসরাইলের উপর আঘাত করে সফল পরীক্ষা চালানো
Total Reply(0)
Zillur Rahaman ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১:০০ এএম says : 0
সন্ত্রাস আর গণতন্ত্রের মধ্যে আমেরিকা কোন পার্থক্য করে না। হত্যা করে প্রকাশ্য ঘোষণা ও স্বীকার করা আমেরিকার গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য! ধিক ধিক ঘৃণা এ তথাকথিত গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক নামক দাবীদার আমেরিকার!!! আমেরিকাকে অবশ্যই এর চরম মূল্য দিতে হবে। সবাইকে বোকা ও দূর্বল ভাবা আমেরিকার ঠিক নয়।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন