সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

কন্যা সন্তান আল্লাহর রহমত-২

মাওলানা আব্দুর রউস সাখখারভী | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

কন্যা সন্তান আল্লাহর রহমত-১ শিরোনামে আলোচনায় বলা হয়েছিল, কন্যা সন্তান অপছন্দ করা জাহেলি যুগের কাফিরদের কর্মপন্থা। কোরআনে কারীমে এ কাজকে কাফিরদের কাজ বলে উল্লেখ করেছে। ইসলামপূর্ব জাহেলি আরবে নিয়ম ছিল, যদি তাদের কন্যা জন্মলাভ করত, তাহলে তারা কন্যা হওয়াকে নিজের জন্য অমঙ্গল ও অপমানের কারণ মনে করত।

সন্তান জন্মের কিছুদিন পূর্ব থেকেই তারা মানুষের আড়াল হয়ে যেত, মানুষের কাছ থেকে লুকিয়ে বেড়াত যে, জানা নেই আমার ঘরে কী সন্তান জন্মলাভ করবে। পরে যদি ছেলে সন্তান হতো এটাকে তার জন্য সম্মানের বিষয় মনে করত। আর যদি মেয়ে সন্তান হতো তাহলে তারা সেটাকে অমঙ্গল ও অপমানের কারণ মনে করত।
আল্লাহ তাআলা সূরায়ে নাহলে তাদের বর্ণনা এভাবে দিয়েছেন- তাদের কাউকে যখন কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তার মুখমন্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনোস্তাপে ক্লিষ্ট হয়। তাকে যে সুসংবাদ দেয়া হয়, তার গ্লানি হেতু সে নিজ সম্প্রদায় হতে আত্মগোপন করে; সে চিন্তা করে যে, হীনতা সত্তে¡ও সে তাকে রেখে দিবে, না মাটিতে পুঁতে দিবে। লক্ষ্য করো, সে কত নিকৃষ্ট সিদ্ধান্ত স্থির করেছিল। (সূরা নাহল : ৫৮-৫৯)।
কন্যা সন্তান ‘সুসংবাদ’ লক্ষ্য করুন, আয়াতে কন্যা সন্তানের জন্মের সংবাদকে ‘সুসংবাদ’ বলা হচ্ছে। তাদের জাহেলি কর্মকান্ড ও মানসিকতার শুধু নিন্দাই করা হয়নি বরং তারা যেটাকে দুঃসংবাদ মনে করছে সেটাকে ব্যক্তই করা হয়েছে ‘সুসংবাদ’ বলে।

সাথে সাথে মুমিনদের মাঝেও যেন এ জাহেলি মানসিকতার লেশমাত্র না থাকে সেজন্য আল্লাহ আয়াতের শেষে বললেন, ‘লক্ষ্য করো সে কত নিকৃষ্ট সিদ্ধান্ত স্থির করেছিল।’ একটি শিক্ষণীয় ঘটনা জাহেলি যুগে অনেকে নিজের দশ দশটি কন্যা সন্তানকেও জীবিত কবর দিয়েছে। হাদিস শরীফে এক ব্যক্তির একটি আশ্চর্য ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে (ঘটনাটি শুনে চোখে পানি ধরে রাখা মুশকিল)।

এক ব্যক্তি মুসলমান হয়েছেন। মুসলমান হওয়ার পর সে রাসূলুল্লাহ সা.কে নিজের জাহেলি যুগের ঘটনা শুনিয়েছেন। হে আল্লাহর রাসূল! আমার একটি কন্যা সন্তান ছিল। সে দিনে দিনে বড় হতে থাকে কিন্তু তার জীবিত থাকার বিষয়টি আমার সহ্য হচ্ছিল না। আমি একদিন তাকে তার মায়ের কাছ থেকে কোনো এক বাহানায় নিয়ে গেলাম। আমি তাকে বললাম, চলো একটু ঘুরে আসি। পরে আমি তাকে এক খোলা প্রান্তরে নিয়ে গেলাম। সেখানে পূর্বেই আমি একটা গর্ত করে রেখেছিলাম।
সেখানে গিয়ে আমি তাকে বললাম, আমি এ কূপটি খনন করব যেন পানি পাওয়া যায়। আমি তোমাকে নিচে নামিয়ে দিচ্ছি, তুমি বালতিতে মাটি ভরে দিবে আর আমি তা উপরে তুলে নিব। আমার মেয়ে আমার কথা মেনে নিলো। সে নিচে নেমে গেল।

কিন্তু যখনই সে নিচে নামল আমি তার উপর মাটি দিতে শুরু করলাম। মেয়েটি আমাকে বলল, আব্বা! আপনি কী করছেন? আমার উপর মাটি দিচ্ছেন! কিন্তু আমি এতটাই কঠিন দিলের ছিলাম যে, তার কথায় আমার কোনো আসর হলো না। আমি মাটি দিতেই থাকলাম।
প্রথমে মাটি তার হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে নিলো। পরে পেট, এরপর বুক, তারপর ঘাড়, অবশেষে মাথা পর্যন্ত ঢেকে নিলো। এমনকি মাটি জমিনের সমান হয়ে গেল। আমার মেয়েটি চিৎকার করছিল, আমাকে ডাকছিল। এক সময় তার চিৎকার ও ডাকাডাকি শেষ হয়ে গেল। আমি তাকে এভাবে জীবিত দাফন করে ফিরে এলাম।
তিনি বলেন, আমি যখন রাসূলুল্লাহ সা.কে এ ঘটনা শুনিয়েছি তখন তাঁর চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। তিনি বললেন, এ কেমন পাষন্ডতা! (আলওয়াফী বিলওয়াফায়াত ২৪/২১৫, কায়েস ইবনে আছেম ইবনে সিনান ইবনে খালেদ-এর জীবনী দ্রষ্টব্য)

ইসলাম এই জুলুম-প্রথার অবসান ঘটিয়েছে। তাই এ প্রথার সাথে মুসলমানের কোনোরূপ সামঞ্জস্য থাকা উচিত নয়। কন্যা সন্তান হলে কোনোরূপ অসন্তুষ্ট হওয়া উচিত নয়। মুসলমানদের এ কাজ পরিহার করা উচিত।
রাসূলুল্লাহ সা. যেমনিভাবে কন্যা সন্তান হওয়াকে আল্লাহর রহমত বলেছেন এবং কন্যা সন্তানের সাথে তিনি যে ভালোবাসা, মহব্বত ও স্নেহের প্রকাশ ঘটিয়েছেন- এ আমাদের আদর্শ। আমাদের উচিত রাসূলুল্লাহ সা. এরই অনুসরণ করা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
তোফাজ্জল হোসেন ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১:২৭ এএম says : 0
কন্যা সন্তানের মাধ্যমে আল্লাহ পরিবারে সুখ ও বরকত দান করেন। হাদিসে এমন কথা উল্লেখ হয়েছে। কিন্তু আমাদের সমাজে এখনো অনেক পরিবারে কন্যা সন্তান জন্ম নিলে ইতিবাচক চোখে দেখা হয় না। অনেকে আবার মেয়ে সন্তানের মায়ের ওপর নাখোশও হন। বিভিন্ন কায়দায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
Total Reply(0)
কাজী হাফিজ ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১:২৮ এএম says : 0
কন্যা সন্তান হলে অপছন্দ করা, তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা এবং তাদের লালন-পালনের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন না করা, ইসলামপূর্ব বর্বর জাহেলি যুগের কুপ্রথা। এমন কাজে আল্লাহ তাআলা ভীষণ অসন্তুষ্ট হন।
Total Reply(0)
কে এম শাকীর ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১:২৮ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার মুখ অন্ধকার হয়ে যায় এবং অসহ্য মনস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে। তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে থাকতে দেবে নাকি তাকে মাটির নিচে পুতে ফেলবে। শুনে রাখো, তাদের ফয়সালা খুবই নিকৃষ্ট।’ (সুরা আন-নাহল, আয়াত : ৫৮-৫৯)
Total Reply(0)
নাসিম ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১:২৮ এএম says : 0
রাস‍ুল (সা.) মেয়েদের অনেক বেশি ভালোবাসতেন। মেয়েরা ছিল তার আদরের দুলালী। আজীবন তিনি কন্যাদের ভালোবেসেছেন এবং কন্যা সন্তান প্রতিপালনে অন্যদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। কন্যা সন্তান লালন-পালনে অনেক উৎসাহ দিয়েছেন।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১:২৯ এএম says : 0
কন্যা সন্তান প্রতিপালনে শুধু পিতাকেই নয়; ভাইকেও উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। বোনের কথাও বলা হয়েছে হাদিসে। যারা মনে করেন, মেয়ে বা বোনের পেছনে টাকা খরচ করলে ভবিষ্যতের তার কোনো প্রাপ্তি নেই, তারা মূলত ভুলের মধ্যে আছেন।
Total Reply(0)
জোহেব শাহরিয়ার ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১:২৯ এএম says : 0
কন্যা সন্তান প্রতিপালনে যেন বৈষম্য না করা হয় এবং বস্তুবাদী ব্যক্তিরা যেন হীনমন্যতায় না ভোগেন, তাই তাদের কন্যা প্রতিপালনে ধৈর্য ধরার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। শোনানো হয়েছে পরকালে বিশাল প্রাপ্তির সংবাদ।
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ৯:৫৫ এএম says : 0
আল্লাহ তা'আলা আমরা স্বামীস্ত্রীকে আট মেয়ে ও চার ছেলে সন্তান দান করেছেন। আল্লাহ তা'আলার শুকরিয়া। আমার স্ত্রী ইন্তেকাল ফরমাইয়াছেন ৭ রমজান ২০১৭ ইংরেজি শুক্রবার লন্ডন সময় সকাল নয়টা পনর মিনিট। সকলের কাছে আমি দোয়া প্রাথী।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন