শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারি নিষেধাজ্ঞা থাকা ১২ কর্মকর্তার ৪ জনের দেশত্যাগ

প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারি, যার নেপথ্যে ব্যাংকটির বড় বড় কর্মকর্তা। ঋণ কেলেঙ্কারির কলকাঠি নাড়া সেইসব কর্মকর্তারা এখন চেষ্টা করছেন, বিদেশ পাড়ি দেয়ার। অবশ্য দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আছে, এমন ১২ কর্মকর্তার ৪ জন এরই মধ্যে দেশ ছেড়েছেন। বাকি ৮ জনের মধ্যে ৭ জনেরই খোঁজ পাচ্ছে না দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শুধু তাই নয়, পুলিশকে দেয়া এক রিপোর্টে ৯ জনের ঠিকানাই ভুল দিয়েছে সংস্থাটি।
সূত্র মতে, রাষ্ট্রপরিচালিত প্রতিষ্ঠান বেসিক ব্যাংক। ব্যাংকটি দেশের আর্থিক খাতের আরেকটি দুদর্শার নাম। সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারি নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি। এই পর্যন্ত ৫৪টি মামলা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক অনিয়ম নিয়ে, সাড়ে চার হাজারের মধ্যে মাত্র আড়াই হাজার কোটি টাকা এসেছে তদন্তে। বাকি টাকা এবং এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তের বিষয়ে এখন নিশ্চুপ দুর্নীতি দমন কমিশন।
তবে, গেল মাসে দুদক থেকে স্পেশাল ব্রাঞ্চ-এর অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদশকের কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসিক ব্যাংকের ২৬২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে সপরিবারে দেশ ছেড়ে পালানো চেষ্টা করছে ২৬ ব্যক্তি। যার মধ্যে ব্যাংকের ১২ কর্মকর্তার পাশাপাশি আছে ১৪ জন ব্যবসায়ীর নামও। ব্যাংকের এই ১২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণার মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে কর্মকর্তারা। একই সাথে অন্যায়ভাবে নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পরিপালন না করে বেসিক ব্যাংকের শান্তিনগর ও গুলশান শাখা হতে ঋণের নামে এ টাকা উত্তোলন করে নিজেরা লাভবান হয়েছে এবং অন্যকে লাভবান করে টাকা আত্মসাৎ করেছে। কিন্তু দুদকের দেয়া ঠিকানায় যেয়ে কোন খোঁজ মেলেনি বেসিক ব্যাংকের ১২ কর্মকর্তার মধ্যে ৯ কর্মকর্তারই।
শান্তিনগর শাখার সাবেক প্রধান ও মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর বারিধারার বাসায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, আরো ছয় মাস আগেই মালয়েশিয়ায় সপরিবারে পাড়ি জমিয়েছেন তিনি। অথচ দুদকের প্রতিবেদনে তার বর্তমান অবস্থান দেখানো হয়েছে বারিধারার ওই বাসাতেই।
একই অবস্থা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফখরুল ইসলামের ক্ষেত্রেও। গ্রীন রোডে তার বাসায় গিয়ে জানা যায়, এরই মধ্যে স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদস্যরাও খোঁজ নিতে এসেছিল রাজধানীর গ্রীন কর্নারের এই বাসায়। তবে বাড়িতে পাওয়া যায়নি তাকে এবং তার স্ত্রীকে। তিনিও মালয়েশিয়ায় চলে গেছেন চার মাস আগে। আর বেসিক ব্যাংক থেকে এরই মধ্যে বরখাস্তকৃত শিপার আহমেদ এবং ফজলুস সোবহান দু’জনই বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির অন্য মামলায় বর্তমানে কারাগার আছেন চার মাস ধরে। কিন্তু দুদকের কাছে, তাদের কারাগারে থাকার কোন তথ্যই নেই।
তবে, সবচেয়ে ভাগ্যবান বলতে হবে কনক কুমার পুরকায়স্তকে। কেননা দুদকের প্রতিবেদনে সন্দেহভাজন লেনদেন ও আর্থিক অনিয়মের কথা থাকলেও বহাল তবিয়তে বেসিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়েই বহাল আছেন এই কর্মকর্তা। বিদেশ যাওয়ার তার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কিছুই যায় আসছে না তার ক্ষেত্রে। আর এ নিয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি তিনি। তার মতো এতোটা ভাগ্যবান না হলেও চট্টগ্রামে বেসিক ব্যাংকের একটি শাখায় বদলি হয়ে অফিস করছে মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন। আর সাবেক ক্রেডিট ইনচার্জ সরোয়ার হোসেন আছেন নারায়ণগঞ্জে, কাজ করছেন ঢাকা ব্যাংকে। এরপর চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের পক্ষ থেকে অনুসন্ধানে যাওয়া হয়, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া বেসিক ব্যাংকের সদস্য সচিব মোনায়েম খানের বাসায় রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসায়। দারোয়ানের সাথে কথা বলে জানা যায়, অনেক দিন ধরেই বাসায় আসেন না তিনি। তবে, এরই মধ্যে ক্যামেরার উপস্থিতি টের পেয়ে ড্রাইভার জানিয়ে দেয় তার পরিবারকে। অনুসন্ধানে তার বাসায় গেলেও ভেতর থেকে জানানো হয়, সেখানে পরিবারের কেউ নেই।
বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়নি শেখ মঞ্জুর মোরশেদকে। তিনি দেশে আছেন না কি বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন তা বলতে অস্বীকৃতি জানালেও তার স্ত্রীর দাবি, দুদকের হয়রানির হাত থেকে বাঁচতেই পালিয়ে থাকতে হচ্ছে মঞ্জুর মোরশেদকে। তবে, তার পরিবারের পক্ষ থেকে দেয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায়, বেশ কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে ঋণ না দিতে ব্যাংকের বোর্ড সভাকে সুপারিশ করেছিলেন তিনি।
ব্যাংকের একমাত্র সাবেক কর্মকর্তা কোরবান আলীকেই পাওয় যায় তার বাসায়। তবে, তার বিরুদ্ধে আনা এমন অভিযোগ সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানান তিনি। এমনকি ব্যাংকের কিংবা দুদকের পক্ষ থেকেও তাকে কিছুই অবহিত করা হয়নি।
ফজলুস সোবহানের বাসায় গিয়েও পাওয়া যায়নি তাকে। তবে জানা গেছে, দেশেই অবস্থান করছেন তিনি। তার পরিবারও অস্বীকার করেছে কোন ধরনে তথ্য জানাতে। আর দুদকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী যেয়ে নির্দিষ্ট ঠিকানাই পাওয়া জায়নি বরখাস্তকৃত উপ-মহাব্যবস্থাপক এসএম জাহিদ হোসেনের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন