শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে তোড়জোড়

প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে তোড়জোড় চলছে। সরকার তার চলতি মেয়াদের মধ্যেই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজের বড় একটি অংশ সম্পন্ন করতে চায়। প্রকল্পটি সরকার ঘোষিত দশ মেগা প্রকল্পের একটি। প্রস্তাবিত বাজেটে এই প্রকল্পের জন্য ৬১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১ লাখ দশ হাজার কোটি টাকা। আর এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা হবে ২৪০০ মেগাওয়াট। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়কাল ধরা হয়েছে সাত বছর।
এদিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল কাজের উদ্বোধনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে আনার চেষ্টা চলছে। আগামী বছরের জুনে রূপপুর প্রকল্পের মূল কাজের উদ্বোধনের ব্যপারে তোরজোড় চলছে। বর্তমান সরকার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে দিয়েই মূল কাজের উদ্বোধন করাতে চায়।
দেশের প্রথম পারমাণবিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রাশিয়ার ঋণ সহায়তায় ওই দেশেরই রাষ্ট্রীয় আনবিক শক্তি করপোরেশন বা রোসাটনের সামগ্রিক তত্ত্বাবধানে নির্মিত হবে। রাশিয়ার প্রযুক্তি, অর্থায়ন ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে পাবনার ঈশ্বর্দীর রূপপুরে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাকা আরও সচল হবে। দেশের ভাবমূর্তি পৌঁছে যাবে আরও উচ্চশিখরে। ইতোমধ্যেই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সার্বিক প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে।
অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী ও ব্যয় বহুল এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে বিভিন্ন মহল থেকে নানা সমালেচনা ও বাঁধার মুখেও সরকারকে পড়তে হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের প্রতিবন্ধকতা। কিন্ত সরকার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের ক্ষেত্রে লক্ষ্য অটুট রাখায় এসব প্রতিবন্ধতা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পারছে না।
রাশিয়ার সহযোগিতায় নির্মাণাধীন এই প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন কাজ শুরু হবে ২০২২ সালে। এই প্রকল্পে ৮০ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। প্রথমে টানা ৬০ বছর পরবর্তিতে আরও ২০ বছর মোট ৮০ বছর উৎপাদন কাজ চলবে। এই পারমাণবিক প্রকল্পে ২ হাজার ৮শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। প্রকল্পের সর্বমোট ব্যয়ের ৯০ শতাংশ অর্থ দেবে রাশিয়া। বাকি ১০ শতাংশ বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে হবে। রাশিয়ার দেওয়া অর্থ পরিশোধের সময় দেওয়া হবে ২৮ বছর।
রাশিয়ার সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষরের পর রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়। রূপপুরে তৈরি করা হচ্ছে প্রকল্পের নানা অবকাঠামো। প্রকল্পের নির্মাণ কাজের সঙ্গে রাশিয়ার ১৪ থেকে ১৫শ’ লোক সম্পৃক্ত হবেন। তাদের থাকার জন্য সেখানে দু’টি ২০ তলা ভবন নির্মাণ হচ্ছে। প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষে ওই লোকজন চলে যাওয়ার পর দেশীয় যে জনবল এখানে নিয়োগ হবে ওই ভবনগুলোতে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। প্রকল্পের প্রয়োজনীয় উপকরণ তৈরির জন্য ৪/৫টি কারখানা বসানো হচ্ছে।
পারমাণবিক প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি আনা হবে রাশিয়া থেকে। জ্বালানির বর্জ্য রাশিয়া নিয়ে যাবে। এই জ্বালানি আনা-নেওয়া করা হবে নৌ পথে। এ জন্য একটি জেটি তৈরি করতে হবে। প্রকল্পের কাজের সঙ্গে সরাসরি প্রশাসনিক এবং পর্যবেক্ষণ কাজের সঙ্গে যারা যুক্ত হবেন তাদের অনেককে রাশিয়ায় নিয়ে সেখানকার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ঘুরিয়ে দেখানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ১০ জন সচিবকে রাশিয়ায় নিয়ে এই ধরনের প্রকল্প সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্প নির্মাণের ব্যাপারে ভøাদিমির পুতিনও ব্যক্তিগতভাবে আন্তরিক। এ কারণে পুতিনকে দিয়ে প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করাতে চায় সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০১৩ সালে মস্কো সফরের সময় রাশিয়ার সাথে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে প্রযুক্তি বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। ওই সময়েই রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরে আশার ব্যপারেবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানও এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইয়াফেস ওসমান বলেন, আমরা চাচ্ছি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে দিয়ে মূল কাজের উদ্বোধন করাতে। তার আসার ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে। পুতিনের আসার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। এ প্রকল্পের ব্যাপারে তিনিও খুবই আন্তরিক। নিজে সার্বক্ষণিক এ প্রকল্পের খোঁজখবর রাখছেন। তাছাড়া আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন) বিরাট ভূমিকা রয়েছে। দেখা যাক কি হয়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান আরও বলেন, আমরা অনেক বড় একটা কাজে হাত নিয়েছি যা সহজে বোঝা খুব কষ্টকর ব্যাপার। এই প্রকল্প সম্পর্কে আগেই যাতে একটা সম্যক ধারণা থাকে সে জন্য রাশিয়া আমাদের লোকজনকে নিয়ে তাদের প্রকল্প দেখাচ্ছে। রূপপুরে প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলছে। এই প্রকল্পকে ঘিরে এখানে একটি শহরের মতো গড়ে উঠবে। সেভাবেই মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন