বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিএনপি সব সময় প্রযুক্তির বিরোধিতা করে

সাংবাদিকদের তথ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

বিএনপি সব সময় প্রযুক্তির বিরোধিতা করে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সেইসাথে তিনি বলেন, নেতিবাচক রাজনীতি না থাকলে অগ্রগতি আরো বেশি হতো। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সরকারের চলতি মেয়াদের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম কামরুণ নাহার উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় এবং তারা অনুধাবন করতে পেরেছেন জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। এটি অনুধাব করতে পেরে সেই আশঙ্কা থেকে তারা নানা অভিযোগের বাক্স এখন থেকে খুলে বসছেন। যাতে বলতে পারেন নির্বাচনের আগে নাচতে না জানলে উঠান যেমন বাঁকা হয়। এ ধরনের বক্তব্য তারা হাজির করতে পারেন সেজন্যই তারা এ ধরনের অভিযোগগুলো উপস্থাপন করছেন। নির্বাচন কমিশনবিএনপির নেতারা দেখা করে আসন্ন সিটি নির্বাচন নিয়ে ইভিএম পদ্ধতির বিরোধিতা করেছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি সব সময় প্রযুক্তির বিরোধিতা করে। খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন বিনামূল্যে সাবমেরিন স্থাপনের। তিনি বাংলাদেশের তথ্য পাচার হয়ে যাবে এই কথা বলে বিনামূল্যের সাবমেরিন স্থাপন করার অনুমতি দেননি। পরবর্তিতে হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করে আমাদের স্থাপন করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, ভারতে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হচ্ছে তা নিয়ে সব পক্ষ সন্তুষ্ট। শুধু তাই নয় রাজ্যের ভোট গুলোও ইভিএমের মাধ্যমে হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও একই পদ্ধতিতে ভোট হচ্ছে। সেখানে আমাদের দেশে ইভিএমের বিরোধিতা কেন তারা করছেন সেটির কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছি না। এর একটি উত্তর পাই সেটি হলো প্রযুক্তি নিয়ে অতীত থেকে বিরোধিতা করে আসছে তার ধারাবাহিকতা হলো ইভিএমে ভোটগ্রহণে বিরোধিতা করা। তারা শুধু ইভিএমএর বিরোধিতা করেন তা নয়, ব্যালটে ভোট হলেও নানান অভিযোগ উপস্থাপন করেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, শুধু ড. কামাল হোসেন নয়, মির্জা ফখরুল ইসলামও গত সোমবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন। ড. কামাল হোসেন সবকিছুতেই সংবিধান নিয়ে আসেন। জামিন না হলে সংবিধান লঙ্ঘন। আরও কিসে কিসে তিনি সংবিধান লঙ্ঘনের কথা বলতে পারেন আমি জানি না। যেকোনো বক্তব্যে তিনি সংবিধান নিয়ে আসেন। খালেদা জিয়ার জামিন হওয়া না হওয়া এটি সংবিধানিক বিষয় নয়। এটি আদালতের বিষয়। খালেদা জিয়ার জামিন দেওয়ার এখতিয়ার সরকারের নেই। তার জামিন দেওয়ার এখতিয়ার হচ্ছে আদালতের। ড. কামাল হোসেন কী আদালতকে অভিযুক্ত করছেন সেটা আমার প্রশ্ন।

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, তার স্বাস্থ্য নিয়ে অপরাজনীতি আমরা আগেও লক্ষ্য করেছি। আমি আজও বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন খালেদার স্বাস্থ্য নিয়ে দলটি যে অভিযোগগুলো করেছে, সেগুলো আসলে সে রকম নয়। খালেদা জিয়া একজন বয়স্ক মানুষ। এ কারণে তার কিছু সমস্যা আছে। এর বাইরেও তার যে আথ্রাইটিসের সমস্যা এগুলো বহু বছরের পুরনো। বয়স বাড়লে এটাও বাড়ে। সেটি তার ক্ষেত্রে হয়েছে। তবে, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের চিকিৎসকরা প্রতিদিন তার চেকআপ করছেন। তারা সর্বোচ্চ যত্ম ও মেধা দিয়ে সেবা দিচ্ছেন।

মন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতিবাচক রাজনীতি ও সংঘর্ষের রাজনীতি পরিহারের পক্ষে। কিন্তু একপক্ষ হাত প্রসারিত করলে তা সম্ভব নয়, বিরোধী পক্ষকেও এগিয়ে আসতে হবে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার ও প্রধান তথ্য অফিসার সুরথ কুমার সরকার এসময় উপস্থিত ছিলেন।

তথ্য মন্ত্রী বলেন, গতবছরের ৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় মেয়াদে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। এদিন টানা তৃতীয়বার এবং দেশে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন। একইসাথে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেছিলেন। সেই হিসেবে সরকারের আজকে একবছর পূর্তি। দশ বছরের সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে গতবছরও বাংলাদেশের জন্য আরেকটি সাফল্যের বছর ছিল।

ড. হাছান বলেন, গত অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.১৫ শতাংশ, যেটি দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। একইসাথে ম‚ল্যস্ফীতি ছিল৬ শতাংশের নিচে, এবং গত ১১ বছরে পৃথিবীর সমস্ত রাষ্ট্রগুলোর যদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যোগফল নেয়া হয় তাহলে, বাংলাদেশে গত ১১ বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় যেটি ২০০৮ সালে ছিল ৬০০ ডলার, সেটি গতবছর ২০০০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। প্রবাসী আয় ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৩৩ কোটি ডলারে যা আগের বছর ছিল ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ডলার। আজকে বাংলাদেশ সমস্ত অর্থনৈতিক ও সামাজিক স‚চকে পাকিস্তানকে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সাফল্য সেখানেই পাকিস্তানে টেলিভিশনে আলোচনা হয় পাকিস্তানকে যেন পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ বানানোর চেষ্ট করা হয়। এমনকি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তিনিও অকপটে স্বীকার করেছেন যে বাংলাদেশ আজকে সমস্ত সূচকে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অসামন্য সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশে শিক্ষিতের হার প্রায় ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর পহেলা জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনাম‚ল্যে বই বিতরণ করা হয়। এতো ব্যাপকভাবে বিনাম‚ল্যে বই বিতরণ পৃথিবীর আর কোনো দেশে নাই।
বিদ্যুৎ খাত প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি তখন দেশে ৪০ শতাংশের মতো মানুষ বিদ্যুৎ পেত, বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৩৩শ মেগাওয়াট। অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদনের স‚চনাকাল ১৯০২ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ১০৬ বছরে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৩৩শ মেগাওয়াট। আর ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১১ বছরে সেই উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৭৬৩ মেগাওয়াট। ৯৫ শতাংশ মানুষ আজ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, পদ্মাসেতুর ৮৪.৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। উপমহাদেশের প্রথম নদীর তলদেশ দিয়ে মোটর টানেল কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে দ্রুত নির্মাণ হচ্ছে, যার ৪০% এর বেশি কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে।

ড. হাছান বলেন, বিদেশি টেলিভিশনের মাধ্যমে দেশি বিজ্ঞাপন বন্ধ করেছি। অনেকগুলো টেলিভিশনে বিদেশি সিরিয়াল কোনো অনুমতি ছাড়া প্রদর্শিত হচ্ছিল, যেটি আমরা একটি নিয়মনীতির মধ্যে এনেছি। অবৈধ ডিটিএইচ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে মোবাইল কোর্ট চলছে। চলচ্চিত্র শিল্পীদের দাবি ছিল একটি কল্যাণ ট্রাস্ট করা। সেই কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করতে ট্রাস্ট আইন প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন