শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আসামি নেই দুদকের হাজতখানায়

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র সেগুনবাগিচা। মৎস্য ভবন, শিল্পকলা একাডেমিসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দফতর এখানে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে দফতরটির কারণে ‘ সেগুনবাগিচা’ অঞ্চলের নামটি ইদানিং বেশি উচ্চারিত হয় তাহলো ‘দুর্নীতি দমন কমিশন’র সদর দফতর।

সেগুনবাগিচার হোল্ডিং নম্বরটি (১. সেগুনবাগিচা) এই দফতরটি দিয়ে শুরু। জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে কাকরাইলের দিক যাওয়ার সময় চওড়া রাস্তার ডানেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়। পাম-ট্রি’র আড়ালে উঁকি দেয় দুদকের এল-আকৃতির প্রকান্ড ভবন। ভবনের ‘ইউ’ আকৃতির প্রাঙ্গন জুড়ে সারাদিন লেগে থাকে দামি গাড়ি। আর এই গাড়ির আরোহীদের আকর্ষণেই দিনের কার্যকাল জুড়ে নিত্যদিন ভিড় জমায় কিছু টিভি ক্যামেরা। সর্বসাধারণ অকারণ এই ভবনে প্রবেশের অনুমতি নেই। আগতদের বেশিরভাগই দুদকের চিঠি কিংবা নোটিসপ্রাপ্ত।

সদর দরোজা পেরিয়ে অভ্যর্থণা কক্ষে যেতেই বাঁয়ে চোখে পড়ে বড় অক্ষরে লেখা ‘হাজতখানা’। অ্যারো চিহ্নি দিয়ে বিশেষভাবে সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে হাজতখানাটিকে। পাশেই রয়েছে ‘জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ’। যেকোনো থানার আদলেই স্থাপন করা হয়েছে এই হাজতখানা। গ্রেফতারকৃত আসামিদের রাখা হয় এই হাজতখানায়। তবে রাতে নয়-দিনের বেলা। রাতে আসামি রাখার সক্ষমতা এখনো নেই। তাই হাজতখানার কার্যকর ব্যবহার দুদক এখনো শুরু করতে পারেনি। গত সোমবার পুলিশ কর্মকর্তাদের এক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুদকের গ্রেফতারের এখতিয়ার এবং হাজতখানা তৈরি করে তাতে মানুষকে আটকে রাখা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘কাউকে গ্রেফতার করার এখতিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নেই। গ্রেফতারের ক্ষমতা কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরই রয়েছে। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত কাউকে গ্রেফতার করতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে হবে দুদককে।’ প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘দুদক নির্দেশ দিতে পারে। কিন্তু কোনো গ্রেফতার করার এখতিয়ার নেই তাদের। কাউকে ধরে নিয়ে হাজতখানা বানিয়ে রাখা দুদকের কাজ নয়। এ কথাটা মাথায় রাখতে হবে যে, যার যার কাজ তার তা করতে হবে।’

গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর গতকাল মঙ্গলবার দুদক জুড়ে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য এবং দুদকের হাজতখানা। তবে দুদককে নিয়ে দেশের প্রধান নির্বাহীর এ বক্তব্যের ওপর দুদক কর্তৃপক্ষ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, বর্তমান কমিশন ৫ বছর মেয়াদী গৃহিত কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। এ আলোকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং এর উন্নয়নে পরিকল্পিতভাবেই বহুমুখি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে রয়েছে শাসন, সংস্থাপন ও অর্থ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন। প্রতিষ্ঠানটির ‘প্রশাসন অনুবিভাগ’র কার্যক্রমের ৫ ও ৬ নম্বর এজেন্ডা হিসেবে যথাক্রমে ‘সশস্ত্র ইউনিট’ এবং ‘হাজতখানা’ স্থাপন করা হয়। ২০১৮ সালে স্থাপন করা হয় এই হাজতখানা। হাজতখানা স্থাপনকে বড় একটি ‘সাফল্য’ হিসেবে প্রচার করে বর্তমান কমিশন। ২০১৬ সালে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সশস্ত্র ইউনিট গঠন এবং নিজস্ব হাজতখানা তৈরির অনুমোদন চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখেন। তাতে বলা হয়, স্বাধীন কমিশনের অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজকে অধিক গতিশীল এবং পুলিশের ওপর অধিক মাত্রায় নির্ভরশীলনতা হ্রাস করতেই দুদক থেকে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে তিনি অপরাধীদের শনাক্তকরণে মোবাইল ট্র্যাকিং মেশিনও চেয়েছেন। অনেক চিঠি চালাচালির পর ২০১৮ তে হাজতখানা স্থাপনের অনুমতি পায় দুদক। তবে আইনগত জটিলতার কারণে দুদক কর্মকর্তাদের অস্ত্র বহনের অনুমতি মেলেনি। তাই নিজস্ব ‘সশস্ত্র ইউনিট’ স্থাপনও করা সম্ভব হয়নি। তবে প্রেষণে আসা পুলিশের ২০ জন সদস্যদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘আর্মড ইউনিট’। এ ইউনিট নিয়ে গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে দুদক।

ক্যাসিনো-কান্ডের পর দুদক ক্যাসিনোর মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে। ১৯টির মতো মামলাও করে। এসব মামলায় সাবেক যুবলীগ নেতাসহ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে গ্রেফতার-পরবর্তী রিমান্ডে এনে কিছু সময়ের জন্য হাজতখানায় রাখা হয়। দুদক নিয়োজিত কয়েকজন কনস্টেবল এই হাজতখানার প্রহরায় থাকেন। রাতে আসামিদের রাখা হয় পার্শ্ববর্তী রমনা থানায়। তবে আসামির অসুস্থ হয়ে পড়া, তার নিরাপত্তা এবং প্রহরার প্রশ্নে কার্যত দুদক থানার ওপরই নির্ভরশীল। কারণ রাতে দুদক কার্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় দুদকের হাজতে আসামিকে রাখা নিরাপদ মনে করে না দুদক। এ কারণেই থানার ওপর নির্ভরতা।

গতকাল মঙ্গলবার দুদক কার্যালয় পরিদর্শনে দেখা যায়, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুর রহমান মারুফকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পেছনের নতুন ভবনের একটি কক্ষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় গ্রেফতারকৃত কোনো আসামি হাজতখানায় দেখা যায়নি। এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন