বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

শাহরাস্তিতে গৃহবধূ হত্যায় ঘাতক স্বামীর স্বীকারোক্তি

আদালতে ডিবি পুলিশের ফাইনাল রিপোর্ট দেয়ার পর

চাঁদপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০২০, ৫:০৭ পিএম

চাঁদপুরের শাহরাস্তির আলোচিত গৃহবধূ মেহজাবিন সুলতানা ইতি হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। ওই ঘটনায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ইতির স্বামী একরামুল হক রাজু। সিআইডির (কুমিল্লা-নোয়াখালী)বি-বাড়িয়া জেলার পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আবদুল মান্নান মাত্র ১ মাসেই আলোচিত এ মামলার রহস্য উদঘাটন করেন। অথচ চাঁদপুর ডিবি পুলিশ গৃহবধূ খুন হয়নি মর্মে আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করেছিলেন। বাদী আদালতে অনাস্থা দিলে পুনরায় তদন্ত শুরু হয়।

শাহরাস্তি পৌর শহরের ঘুঘুশাল গ্রামের আমির হোসেনের কন্যা মেহজাবিন সুলতানা ইতির বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী মেহের দক্ষিণ ইউনিয়নের মালরা গ্রামে একরামুল হক রাজুর (২৭) সাথে। ২০১৮ সালের ২৩ জুন সন্ধ্যায় ইতির বিয়ের মাত্র ২ মাস ১৮ দিন সময়ের মধ্যে রহস্যজনক মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় পরদিন ২৪ জুন একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়। পরবর্তীতে নিহত ইতির ভাই নূরে আলম বাদী হয়ে ৪ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পুলিশের তদন্ত রহস্যজনক মনে করে বাদী আপত্তি জানালে ৫ জুলাই ২০১৮ চাঁদপুর জেলা গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) মামলাটি বদলি করা হয়। গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পুলিশ পরিদর্শক এম এ রউফ খান মামলাটি তদন্ত করে হত্যার বিষয়টি মিথ্যা বলে ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) দাখিল করেন। ওই ফাইনাল রিপোর্ট বিষয়ে আদালতে অনাস্থা জানায়। আদালত পুনরায় তদন্তের জন্য ২০১৯ সালের ২৭ মে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) চাঁদপুরকে নির্দেশ দেন। সিআইডির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ আবদুল মান্নান সরকার পুনরায় মামলাটি তদন্ত করেন। ২৪ আগস্ট ২০১৯ উপজেলার মালরা গ্রাম থেকে মামলার প্রধান আসামী ইতির স্বামী একরামুল হক রাজুকে সিআইডি আটক করে আদালতে সোপর্দ করে। তদন্তকালীন সময়ে পুনরায় সিআইডির উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল মান্নান সরকার থেকে মামলাটি বদলি করে ৩১ অক্টোবর ২০১৯ একই দপ্তরের পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) সাইফুল ইসলামকে দেয়া হয়।

একের পর এক মামলাটি বিভিন্ন দপ্তরে বদলি হতে থাকায় বাদী পরিবার নিরাশ হয়ে পড়ে। ন্যায় বিচার হতে বঞ্চিত হয়ে নিহত গৃহবধূ ইতির পরিবার দিশেহারা হয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের শরণাপন্ন হন।

মামলার অধিকতর তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (সিআইডি) স্বাক্ষরিত পত্রে মামলাটি সিআইডি ব্রা²ণবাড়িয়ার পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) মোঃ আবদুল মান্নানকে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। ওই নির্দেশের আলোকে ২৪ নভেম্বর ২০১৯ জেলখানায় আটক ইতির স্বামী একরামুল হক রাজুর ৭ দিনের পুলিশি রিমান্ড ও কবর হতে লাশ উত্তোলনপূর্বক পুনরায় ময়না তদন্তের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। আদালত জেলখানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড ও লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) মোঃ আবদুল মান্নান জেলখানায় আসামী একরামুল হক রাজুকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর সে ইতি হত্যার পুরো ঘটনা খুলে বলেন। পরবর্তীতে চাঁদপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।

জবানবন্দিতে একরামুল হক রাজু জানায়, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ইতির সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে বাকবিতন্ডা হয়। রাগের বশবর্তী হয়ে তার গলায় চাপ দিলে শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে দিশেহারা হয়ে কোনো উপায় না দেখে দ্রæত বাড়ি থেকে বের হয়ে তাদের (ইতির) বাড়িতে চলে যাই। সেখানে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের বলি ইতি অসুস্থ, আপনারা তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। প্রকৃতপক্ষে আমি রাগের বশে তার গলা চেপে ধরি। আমি বুঝতে পারিনি সে মরে যাবে।

ইতির পরিবার জানায়, বিয়ের পর হতেই ইতি ওই পরিবারের নানা যন্ত্রণার শিকার হয়েছে। তার মৃত্যুর পর মামলা নিয়ে ঘুরপাক করতে গিয়ে মনে হয়েছে আমরা ইতি হত্যার বিচার পাবো না। সবাই টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যায়। আজ প্রমাণিত হলো পৃথিবীতে ন্যায় বিচার আছে। আমরা স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞ। সেই সাথে আদালতের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তির উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন