নিরব এলাকা ঘোষণার পরও সচিবালয় ও তার আশে পাশে এলাকায় শব্দদূষণের মাত্রা আরো বেড়েছে। এলাকায় দিনের বেলায় শব্দের মাত্রা কখনই ৫০ ডেসিবল এর নিচে ছিল না। শব্দদূষণ নিয়ে এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ঢাকায় ‘তীব্র শব্দ দূষণের কবলে ঢাকাবাসী-শীর্ষক শব্দ দূষণ বিষয়ক একটি গবেষণালব্ধ ফলাফল প্রকাশ’ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন এতথ্য জানানো হয়। বাপা ও ক্যাপস, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর আয়োজনে এ অনুষ্ঠানে বাপা’র নির্বাহী সহ-সভাপতি ডা. মো. আব্দুল মতিন এর সভাপত্বিতে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বাপা’র সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল এর সঞ্চালনায় এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক এবং স্টামফোর্ড বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন স্টামফোর্ড বিশ^বিদ্যালয় বাংলাদেশের ভিসি অধ্যাপক স্থপতি মুহাম্মাদ আলী নকী, পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহা পরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমী। এছাড়াও এতে উপস্থিতি ছিলেন বাপা’র নির্বাহী সদস্য ইবনুল সাইদ রানা এবং জাতীয় কমিটির সদস্য তোফায়েল আহমেদ।
অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, স্টামফোর্ড বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) পক্ষ হতে সচিবালয় এলাকাকে নিরব ঘোষণার আগে ও পরে অর্থাৎ গত ১৪ ডিসেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত মোট ৯ দিনে সয়ংক্রিয় সাউন্ড লেভেল মিটারের সাহায্যে ১২টি স্থানের প্রতিটিতে দিনব্যাপী ৩০০ সংখ্যক উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছিল। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী, সচিবালয় এলাকায় দিনের বেলায় ৫০ ডেসিবল শব্দ থাকার কথা ছিল। তবে তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে পর দেখা যায় যে, দিনের বেলায় শব্দের মাত্রা কখনই ৫০ ডেসিবল এর নিচে ছিল না। ১২ টি স্থানের প্রতিটিতে দিনের বেলায় শতভাগ সময় নীরব এলাকার জন্য প্রযোজ্য মানমাত্রার (৫০ ডেসিবল) চেয়ে বেশি মাত্রার শব্দ ছিল। ১২ টি স্থানের মধ্যে একটি ব্যতীত (সচিবালয়ের পশ্চিমে মসজিদ সংলগ্ন) সবগুলোতেই ৭০ ভাগ এর বেশি সময় ধরে ৭০ ডেসিবেল (তীব্রতর) এর বেশি শব্দের মাত্রা ছিল। সামগ্রিকভাবে বারটি স্থানে সম্মিলিতভাবে ৯১.৯৯ ভাগ সময় ৭০ ডেসিবেল (তীব্রতর) এর বেশি শব্দের মাত্রা ছিল। সর্বোচ্চ সময় ধরে যে তিনটি স্থানে শব্দের মাত্রা বেশি ছিল সেগুলো হল- পল্টন বাস স্ট্যান্ড এ ১০০ ভাগ সময়, জিরো পয়েন্ট এ ৯৯.৪ ভাগ সময় এবং কদম ফোয়ারা-এ ৯৯.২ ভাগ সময় শব্দের মাত্রা ৭০ ডেসিবেল এর বেশি ছিল। এছাড়াও ক্যাপস এর গবেষণা দল ঢাকা শহরে ৭০ টি এলাকায় শব্দ দূষণ জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। গবেষণায় দেখা যায় যে, নিরব, আবাসিক ও মিশ্র এলাকার ক্ষেত্রে শব্দের মাত্রা ১০০ ভাগ সময় আদর্শ মানের উপরে ছিল (নিরব এলাকার আদর্শমান ৫০ ডেসিবেল, আবাসিক এলাকার আদর্শমান ৫৫ ডেসিবেল, মিশ্র এলাকার আদর্শমান ৬০ ডেসিবেল)। বাণিজ্যিক এলাকায় শব্দের মাত্রা আদর্শ মানের চেয়ে ৯৭.৫৮ ভাগ সময় বেশি মাত্রায় ছিল (বাণিজ্যিক এলাকার আদর্শমান ৭০ ডেসিবেল)। শিল্প এলাকায় শব্দের মাত্রা আদর্শ মানের চেয়ে ৭১.৭৫ ভাগ সময় বেশি মাত্রায় ছিল (শিল্প এলাকার আদর্শমান ৭৫ ডেসিবেল)।
এব্যাপাওে ডা. মো. আব্দুল মতিন বলেন, সরকারি দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই গাড়িতে ৩টি হর্ণ ব্যবহার করেন, যার মধ্যে একটি হাইড্রোলিক হর্ণ। এ সমস্ত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাই যখন আইনের তোয়াক্কা করে না তখন সাধারণ ট্রাক, বাস চালকরা কিভাবে আইন মানবে। সর্ব প্রথম সমাজের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শব্দ দূষণ বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভিসি স্থপতি অধ্যাপক মুহাম্মাদ আলী নকী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে এই ধরণের জাতীয় গণগুরুত্বপূর্ণ গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে, এছাড়াও তিনি বলেন ভবিষ্যৎ এ স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সমন্বিতভাবে পরিবেশ বিষয়ক কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করেন।
শরীফ জামিল বলেন, নীতি নির্ধারকদের মানষিকতা পরিবর্তনের পাশাপাশি শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রনে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী সমন্বিত পরিকল্পনা নির্মোহ বিজ্ঞান ভিত্তিক ও অংশগ্রহণমূলকভাবে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা জরুরি। তিনি আরও বলেন শব্দ দূষণের কারণে স্বাস্থ্যগত এবং সামাজিক ক্ষতির পরিমান অনেক বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পের চেয়েও বেশি, তাই একে বিশেষগুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা প্রয়োজন।
কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমী বলেন, শব্দ দূষণ রোধে জনসচেতনা তৈরী করতে হবে শুধু আইন করেই যথেষ্ট হবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন