বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সরকার জাতিকে ভূগোল বুঝিয়ে আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে চায় -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫১ পিএম

সরকার জাতিকে ভূগোল বুঝিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিনাভোটে বিজয়ী করতে চায় বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীব। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের বশংবদরা বাদে দেশের নিবন্ধিত প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের ঘোরতর আপত্তি সত্বেও জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত এবং অর্থ হরিলুটের জন্য ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন দিয়ে ভোট করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনের আজ্ঞাবহ জীবনাদর্শের জন্য গণতন্ত্র আজ কবরে। শুধু রাজনৈতিক দল নয়, ইসির টেকনিক্যাল কমিটি, নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংগঠনসমুহ, দেশের সচেতন মহল ও একজন নির্বাচন কমিশনারের বর্তমান ইভিএম ব্যবহারে বিরোধীতা থাকলেও সরকারের আজ্ঞাবহ কমিশন তা আমলে নেয়নি। প্রতিবেশী ভারতের চেয়ে ১১ গুন বেশি টাকায় ইভিএম ক্রয় করে ভোটারদের উপর জবরদস্তি করে চাপিয়ে দেয়ার আয়োজন চলছে। আওয়ামী লীগের নির্লজ্জ মোসাহেব প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনের ইভিএম ব্যবহারের মূল লক্ষ্য অর্থ লুটপাট এবং মিডনাইট সরকারের প্রার্থীদের ডিজিটাল ভোট ডাকাতির মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি বানিয়ে দেয়া।
রোববার (১২ জানুয়ারি) সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, এই তাবেদার নির্বাচন কমিশন ইভিএমের মাধ্যমে এবার ডিজিটাল ভোট ডাকাতির আয়োজন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট কেন্দ্র আড়াই হাজারের মতো। ভোটকক্ষ প্রায় ১৪ হাজার। প্রতিটি কক্ষে তারা একটি করে ইভিএম ব্যবহার করতে চায়। সেই হিসাবে ১৪ হাজার ইভিএমের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু গত ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, নির্বাচনে ৩৫ হাজার ইভিএম ব্যবহার করা হবে। অতিরিক্ত ২১ হাজার ইভিএম কোথায় ব্যবহার করা হবে ? ইসির বক্তব্য অনুযায়ী ব্যাকআপ হিসাবে ৫০ শতাংশ মেশিন যদি রাখাও হয় তাহলে প্রতি কক্ষের জন্য অতিরিক্তসহ মোট ২১ হাজার ইভিএম লাগার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন আরো ১৪ হাজার ইভিএম অতিরিক্ত প্রস্তুত করে রাখছে। এটি রাখার মূল উদ্দেশ্য হলো ভোটের আগেই ভোটের ফলাফল প্রস্তুত করা। এটি সম্পূর্ণরুপে রহস্যজনক। এছাড়াও ইভিএমে জালিয়াতি যে সম্ভব, এটি পৃথিবীর দেশে দেশে প্রমানিত হয়েছে। কারণ ভোট জালিয়াতি করতে অনেক দুর থেকেও ইভিএমকে ম্যানিপুলেট করা যায়।
তিনি বলেন, ২৯ ডিসেম্বর রাতের ভোট ডাকাতির কেলেংকারীতে অস্বস্তিতে পড়ে এখন ইভিএম এর মাধ্যমে ডিজিটাল ভোট ডাকাতির প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নীরবে, নি:শব্দে জনগণের ভোটাধিকার হরণের অপর নাম ইভিএম। সারাবিশ্বে বাতিল হওয়া ভোটাধিকার হরণের যন্ত্র ইভিএমে ভোট করার পথ থেকে এখনি সরে আসার জন্য আমরা ইসির প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
রিজভী বলেন, বিশেষজ্ঞরা নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে, এই মেশিনে ডিজিটাল ভোট ডাকাতি করা যায় খুবই সহজে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ইভিএম মেশিনগুলো সম্পূর্ণ অরক্ষিত। কেউ ইচ্ছা করলেই অন্যের ভোট সহজেই দিতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন যে ইভিএমটি ব্যবহার করতে যাচ্ছে তার ইউনিট আছে দুইটি। একটি কন্ট্রোল ইউনিট, অন্যটি ব্যালট ইউনিট। কন্ট্রোল ইউনিটে ফিঙ্গার প্রিন্ট থাকলেও ব্যালট ইউনিটে ফিঙ্গার প্রিন্টের ব্যবস্থা নেই। ইভিএমের কন্ট্রোল ইউনিটে ফিঙ্গার প্রিন্ট ম্যাচিংয়ের পর ব্যালট ইউনিটে গিয়ে একজনের ভোট দিতে পারবেন অন্যজন। নির্বাচন কমিশন বারবার বলছে, গোপন কক্ষে থাকবে ব্যালট ইউনিট। সেখানে ভোটার ছাড়া কারোর যাওয়ার সুযোগ নেই। এটা সম্পূর্ণ ডাহা মিথ্যা তথ্য। এখন অধিকাংশ ভোট কক্ষের নিয়ন্ত্রণ থাকে ক্ষমতাসীন দলের হাতে। প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসারদের সবাই সরকারি কর্মকতা, সুতরাং সরকারের হুকুমেই তাদের কাজ করতে হয়। তাদের সাথে যুক্ত থাকে সরকারি দলের প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট নামের ক্যাডার বাহিনী। তারাই পেটোয়া বাহিনীর সহযোগিতায় বের করে দেয় বিএনপি বা প্রতিপক্ষ দলের এজেন্টদের।
তিনি বলেন, ভোটকক্ষে ভোটারের ফিঙ্গার প্রিন্ট নেয়ার পর গোপন কক্ষের ব্যালট ইউনিটের কনফার্ম বাটনটি চাপেন হয় সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার নয়তো সরকারি দলের পোলিং এজেন্ট। ফলে ভোটাধিকার বঞ্চিত জনগণ যন্ত্রের মাধ্যমে ভোটদানের স্থায়ী সুযোগ হারাচ্ছেন। তাছাড়া আবার কোন ভোটারের ফিঙ্গার ম্যাচিং না হলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের হাতে ৫ শতাংশ ফিঙ্গার ম্যাচিং ক্ষমতা দিয়ে দিচ্ছে এই সরকারের একান্ত অনুগত নির্বাচন কমিশন। ফলে সাজানো ভোটের ফলাফলের মাধ্যমে জনগণকে ধোকা দেয়া হচ্ছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ব্যালটের পরিবর্তে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নির্বাচনের আয়োজন করায় নির্বাচনী ব্যয় বহুগুণ বেড়েছে। মুলত: ক্ষমতাসীনদের পক্ষে ডিজিটাল ভোট ডাকাতি করা এবং নিজেদের পকেট ভারি করতে জনগণের টাকা লুটপাটের জন্যই ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। ইভিএম ব্যবহার করা বিগত কয়েকটি নির্বাচন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ব্যালট পেপারের পরিবর্তে ইভিএম ব্যবহার করার কারণে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকার অপচয় হয়েছে। ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে প্রশিক্ষণ খাতেই বাজেট রাখা হয়েছে ২৩ কোটি ৯০ লাখ ৯২ হাজার টাকা। প্রশিক্ষণের বাইরে নির্বাচন পরিচালনা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষা খাতে কমবেশি ৪৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। অথচ ২০১৫ সালে সর্বশেষ ঢাকার দুই সিটিতে ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচনে ইসির খরচ হয়েছিলো মাত্র ২৮ কোটি টাকা। শুধু ইভিএমের কারণেই সাড়ে চার বছরের ব্যবধানে সেই খরচ গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৯ কোটি টাকায়। ব্যালটের চেয়ে ইভিএমে ভোট গ্রহণে প্রশিক্ষণ খাতেই অন্তত: আটগুণ বেশি খরচ দেখানো হচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, এনআইডির সাবেক ডিজি বর্তমানে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং এনআইডির বর্তমান ডিজির পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকা লুটপাট করতে জনগণের ঘাড়ে ইভিএম চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। নেয়া হয়েছে চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। ইভিএম এখন ইসির কাছে মধু। অর্থ লুটপাটের বিনিময়ে তারা সরকারকে ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি উপহার দিবেন। একারণে সব মতামতকে থোড়াই কেয়ার করে এই নুরুল হুদার কমিশন ইভিএমে ভোট করতে চান।
বিএনপির এই নেতা বলেন, যেখানে জনগণের ভোটের সরকার থাকে না, সেখানে দুর্বৃত্তদেরই জয়জয়কার থাকে। সংশ্লিষ্ট সকলের আপত্তি সত্বেও আগামী ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে নির্বাচন কমিশনের তোড়জোড় বেপরোয়া দুর্বৃত্তপনারই বর্ধিত প্রকাশ। আমরা আবারো আহবান জানাচ্ছি ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচনের পথ থেকে এখনি সরে আসুন। অন্যথায় পদত্যাগ করুন। তা না হলে আপনাদের মাস্টারপ্ল্যানের নির্বাচনের বিরুদ্ধে জনগণ সমুচিত জবাব দিবে।
খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা তুলে ধরে রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন ও চারবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ব্যক্তিহিংসার শিকার হয়ে গুরুতর রোগে-শোকে-ব্যথা-বেদনায় মূমুর্ষ অবস্থায় বন্দী হয়ে আছেন। সরকারের মদদে বেগম জিয়ার গুরতর অসুস্থতা গোপন করা হচ্ছে। তাঁর সুচিকিৎসারও সুযোগ দেয়া হয়নি। বিনা চিকিৎসায় দেশনেত্রী অনেকটাই চলৎশক্তিহীন হয়ে পড়েছেন। দেশনেত্রীর ওপর নিপীড়ণের মাত্রা নাৎসী দুঃশাসনের অতীতের সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে।
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বিরোধীদের অন্তত: নিশ্চিন্তে বেঁচে থাকার কোন সুযোগ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, তিনি নিজেকে গণতন্ত্রের পুজারী বললেও বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রথা-প্রতিষ্ঠানগগুলো ভেঙ্গে চুরমার করে প্রাচীণ ধ্বংসাবশেষ নগরীতে পরিণত করেছেন। আইন-আদালত-পুলিশ-প্রশাসন-নির্বাচন কমিশন সবই প্রধানমন্ত্রীর হুকুমের দাস। বিচার ব্যবস্থায় ন্যায়বিচারের স্থলে ভয়ভীতির স্থায়ী আসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার আর কোন আশ্রয়স্থল নেই। তাই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মানবাধিকার বঞ্চিত। বন্দীশালার ছোট্ট কক্ষে আবদ্ধ রেখে দেশনেত্রীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে ধুকে ধুকে নি;শেষ করে দেয়াটাই প্রধান লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রীর। যে দেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই, সেই দেশে মানুষের স্বাধীনতা অর্থহীন। যে ধরণের মামলায় অন্য সকলেই জামিন পেয়েছেন, সেই একই মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হয়নি। নির্ধারিত দিন পার হওয়ার পরও দিনের পর দিন দেশনেত্রীর আত্মীস্বজনদের দেখা করতে না দেয়াতে প্রমানিত হয়-বেগম খালেদা জিয়া বন্দী শুধুমাত্রই একজন ব্যক্তির প্রতিহিংসা চরিতার্থের কারণেই। বিএনপিকে নির্মূলের নীতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই বেগম খালেদা জিয়া বন্দী। গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো ভেঙ্গে ফেলে বিরোধীদলশুন্য দেশগঠনের জন্যই বেগম জিয়ার ওপর চলছে অত্যাচার, জুলুম ও জীবননাশের ষড়যন্ত্র। মানবতার এই দুর্বিষহ অবস্থায় জনগণের ক্ষুব্ধতা এখন প্রতিরোধে রুপ নিতে যাচ্ছে। এই মূহুর্তে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নি:শর্ত মুক্তি দিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন