ইরানি বংশোদ্ভূত প্রথম মার্কিন নভোচারী জেসমিন জাওস মোগবেলি (৩৬)। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী জেসমিন সেখানকার এমআইটি গ্রাজুয়েট। কলেজ বাস্কেটবল প্লেয়ার। হেলিকপ্টার গানশিপে আফগানিস্তানে কমপক্ষে ১৫০টি মিশনে উড়েছেন। এখন তিনি নভোচারী খেতাব পেয়েছেন। অর্থাৎ নাসা থেকে তিনি নভোচারী হিসেবে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, তিনি আশা করেন, তার মতো একই ব্যাকগ্রাউন্ডের অন্যরা তাকে উদাহরণ হিসেবে নিয়ে উদ্বুদ্ধ হবেন।
তার ভাষায়, প্রতিটি মানুষ নিজে নিজে উদ্বুদ্ধ হোক। এমন প্রতিজন মানুষকে আমি ভালবাসি। যদি কেউ আপনার মতো হন, আপনার সঙ্গে অনেকটা মিলে যায়, তাহলে তাকে অনুসরণ করা আপনার জন্য কিছুটা সহজ।
জেসমিন এবং তার ভাই জন্ম নিয়েছেন জার্মানিতে। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের সময় তার পিতামাতা ছিলেন আর্কিটেকচারের শিক্ষার্থী। তারা তখন দেশ ছেড়ে জার্মানিতে চলে যান। সেখানে জন্ম হলেও জেসমিন বড় হন নিউ ইয়র্কের বল্ডউইনে। ওই বল্ডউইনকে নিজের শহর বলে মনে করেন তিনি। ১৫ বছর বয়সে তিনি একটি আধুনিক স্পেস বিষয়ক ক্যাম্পে যোগ দেন। তার মধ্যে তখন আশা ছিল একদিন তারার দেশে ছুটে যেতে পারবেন। আস্তে আস্তে তিনি এই পথ ধরে এগুতে থাকেন। ম্যাচাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি থেকে তিনি সম্পন্ন করেন গ্রাজুয়েশন। সেখানে তিনি এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি সামরিক বাহিনীর একজন পাইলট হওয়ার পরিকল্পনা করেন। এ কথা জেনে তার পিতামাতা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তা সত্তে¡ও ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে সন্ত্রাসী হামলার চার বছর পরে জেসমিন চুক্তিবদ্ধ হন। এ সময়ও তার পিতামাতা উদ্বিগ্ন ছিলেন। তাদের আশঙ্কা ছিল, তাদের মেয়ে মধ্যপ্রাচ্যের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। কিন্তু জেসমিন বলেন, আমি যখন যোগ দিলাম নিরঙ্কুশ সমর্থন পেয়েছি পিতামাতার। এরপর তিনি স্বামীর সমর্থন পেয়েছেন। তার সঙ্গে তিন মাস আগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন জেসমিন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা অনেকটাই কমে আসে। ইরানের সঙ্গে ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি করেন ওবামা। এতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা অনেকটাই কমে আসে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতার আসার পর ওই চুক্তি প্রত্যহার করে নেন। ফলে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধংদেহী মনোভাব দেখা দিয়েছে।
গত সপ্তাহে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে ইরানি শীর্ষ কমান্ডার কাসেম সোলাইমানিকে ড্রোন হামলায় হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে যেকোনো মুহূর্তে যুদ্ধ লেগে যাওয়ার মতো আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। কিন্তু জেসমিন বলেছেন, তিনি এ সময়ে কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে কোনো সমস্যার মুখোমুখি হন নি। সামরিক মিশনের সময় তিনি সবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বলে দাবি করেন। নাসায় গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানে জেসমিনকে তার ক্লাসমেট জোনি কিম বর্ণনা করেছেন নির্ভরযোগ্য, প্রাণবন্ত এবং যথার্থ একজন ক্রুমেট হিসেবে। জোনি কিম নিজে একজন নেভি সিল এবং জরুরি প্রয়োজনে চিকিৎসক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন