শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

বড় ধস শেয়ারবাজারে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০২০, ৮:২৯ পিএম

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দরপতনে সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ধস হয়েছে। মূল্য সূচকের বড় পতনে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক প্রায় পাঁচ বছর আগের অবস্থানে চলে গেছে। শেয়ারবাজারে এমন বড় দরপতন গত সপ্তাহজুড়েই ছিল। ফলে গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচকের ২৬১ পয়েন্ট পতন হয়। তবে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস গত রোববার সূচকের সামান্য উত্থান হয়। কিন্তু পরের কার্যদিবসে সোমবার (১৩ জানুয়ারি) আবারও বড় পতন হলো।

এমন ধারাবাহিক বড় পতনের কবলে ডিএসই’র বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক বেশ আগেই শুরুর অবস্থান থেকেও নিচে নেমে গেছে। সোমবার ইসলামী শরিয়াহ্ভিত্তিক পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচকটিও শুরুর অবস্থানের নিচে চলে গেছে। প্রধান মূল্য সূচক এমন জায়গায় অবস্থান করছে এটিও যেকোনো সময় শুরুর অবস্থানের নিচে চলে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শেয়ারবাজারের এমন ভয়াবহ পতনের কবলে পড়ে প্রতিনিয়ত পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। দিন যত যাচ্ছে তাদের বোবা কান্না ততই বেড়ে চলছে। পুঁজি হারা এসব বিনিয়োগকারী কোনো দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না। অনেকে শেয়ারবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। আবার যারা এখনো শেয়ারবাজারে আছেন তাদের অনেকেই বাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজছেন।

এহেতেশামুজ্জামান নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে এসে অনেকটাই নিঃস্ব হয়ে গেছি। বাজার থেকে বেরিয়ে যাব তারও কোনো পথ পাচ্ছি না। সবাই ২০১০ সালের ধসের কথা বলেন। কিন্তু এখন শেয়ারবাজারের যে অবস্থা তা ২০১০ সালের থেকেও খারাপ। এ বাজারে যত অপেক্ষা করা হচ্ছে লোকসান ততই বাড়ছে।

আব্দুর রহিম নামের আরও এক বিনিয়োগকারী বলেন, বাজারের দায়িত্বশীলরা কেউ নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না। সবাই নিজের পকেট ভরার চেষ্টা করছেন। ক্ষতি যা হওয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হচ্ছে। আমার প্রতিদিন পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছি। বিনিয়োগ করা পুঁজি কীভাবে রক্ষা করব তার কোনো উপায় পাচ্ছি না।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, সোমবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। এ দিন ডিএসইতে মাত্র ২১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩১৩টির। আর দুটি প্রতিষ্ঠানের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৮৮ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ১২৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের দিন এ সূচকটি ১৫ পয়েন্ট বাড়ে। অবশ্য তার আগের পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক কমে ২৬১ পয়েন্ট হয়। এতে শেষ সাত কার্যদিবসে সূচকটি কমল ৩৩৪ পয়েন্ট।

এমন পতনের কবলে পড়ে ডিএসইএক্স ২০১৫ সালের ৭ মে’র পর সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গেছে। সেই সঙ্গে সূচকটি প্রায় শুরুর কাছাকাছি চলে এসেছে। ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক হিসেবে ডিএসইএক্স ৪ হাজার ৫৫ পয়েন্ট নিয়ে যাত্রা শুরু করে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি। এ হিসাবে শুরুর অবস্থান থেকে সূচকটি এখন মাত্র ৬৮ পয়েন্ট বেশি আছে।

প্রধান মূল্য সূচকের থেকেও করুন দশা বিরাজ করছে ডিএসইর অপর সূচকগুলোর। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক ডিএসই-৩০ ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি চালু হয়। সে সময় এ সূচকটি ছিল ১ হাজার ৪৬০ পয়েন্টে। ধারাবাহিক দরপতনের কারণে এ সূচকটি এখন ১ হাজার ৩৮৭ পয়েন্টে নেমে গেছে।

ডিএসই’র আর একটি সূচক ‘ডিএসই শরিয়াহ্’। ইসলামী শরিয়াহ্ ভিত্তিক পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি এ সূচকটি যাত্রা শুরু করে। শুরুতে এ সূচকটি ছিল ৯৪১ পয়েন্টে। বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে সূচকটি ২০ পয়েন্ট কমে ৯২৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে বৃহৎ বা বড় মূলধনের কোম্পানির জন্য চলতি বছরে ‘সিএনআই-ডিএসই সিলেক্ট ইনডেক্স (সিডিএসইটি)’ নামে নতুন সূচক চালু করেছে ডিএসই। বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি থেকে অফিসিয়ালি ডিএসইর ওয়েবসাইটে সূচকটি উন্মুক্ত করা হয়। ৪০টি কোম্পানি নিয়ে শুরু হওয়া সূচকটির ভিত্তি ভ্যালু ধরা হয় ১০০০ পয়েন্ট। তবে এখন সূচকটি ৮৩৩ পয়েন্টে নেমে এসেছে।

সূচকের করুন দশার মধ্যে দেখা দিয়েছে তারল্য সংকটও। গত বছরের ৫ ডিসেম্বরের পর ডিএসইর লেনদেন আর লেনদেন ৪শ’ কোটি টাকার ঘর স্পর্শ করতে পারেনি। বাজারটিতে লেনদেনের পরিমাণ ২শ’ থেকে ৩শ’ কোটি টাকার ঘরে আটকে আছে। সোমবার লেনদেন হয়েছে ২৮৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৬০ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দুরবস্থায় রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজারটির সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৪৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৫৬৩ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেয়া ২৫২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৩০টির, কমেছে ২০৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির দাম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন