শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

বিক্ষোভে গুলি চালানোয় বিশ্বজুড়ে ইরানের নিন্দা

বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় একাধিক গ্রেফতার

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫৫ এএম

ইউক্রেনের বিমানে ক্ষেপনাস্ত্র হামলা থেকে শুরু করে দেশের ভিতরে বৃটিশ রাষ্ট্রদূতকে আটক ও বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালানোর ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে ক্ষুণœ হয়েছে ইরানের ভাবমূর্তি। রোববার তেহরানের আজাদি স্কোয়ারে পুলিশের গুলিবর্ষনের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র। যদিও গুলি চালানোর কথা অস্বীকার করছে ইরান প্রশাসন। এদিকে, বিমান হামলার ঘটনায় বেশ কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছে বলে গতকাল জানিয়েছে ইরানের বিচার বিভাগ।

গতকাল ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি সীমাবদ্ধ করতে ২০১৫ সালে করা চুক্তি ভঙ্গ করার জন্য অভিযুক্ত করেছে। এটি হচ্ছে দেশটির উপরে পূর্বে জাতিসংঘের আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো পুণরায় আরোপের প্রথম পদক্ষেপ। একটি যৌথ বিবৃতিতে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেন, তারা গত ৬ ডিসেম্বর ইরানকে সতর্ক করেছিলেন চুক্তি থেকে বেরিয়ে না আসার জন্য। কিন্তু ইরান সেই চুক্তি উপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়ায় পুণরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকছে না।

এদিকে, গতকালই ইরানের বিচার বিভাগ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইউক্রেনের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তেহরানের বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের মাত্র তিন মিনিটের মাথায় ১৭৬ জন আরোহী নিয়ে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এ বিষয়ে বিচার বিভাগের মুখপাত্র গোলাম হোসেইন ইসমাইল বলেন, ওই ঘটনার তদন্ত চলছে এবং বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় কয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বা তাদের পরিচয় জানানো হয়নি।

গতকাল সকালে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি জানিয়েছেন, ইউক্রেনের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বিশেষ আদালত গঠন করা হবে। তিনি বলেছেন, এই ঘটনায় দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট বলেন, কয়েক ডজন বিচারপতি এবং বিশেষজ্ঞকে নিয়ে একটি বিশেষ আদালত গঠন করবে বিচার বিভাগ। তিনি বলেন, এটা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। সারাবিশ্ব এই আদালতকে দেখবে। এই ঘটনাকে দুঃখজনক এবং ক্ষমার অযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন রুহানি।

বিমানে মিসাইল লাগার কথা ইরান স্বীকার করে নেয়ার পর থেকেই দেশের ভিতরে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। আন্দোলনকারীরা বলছেন, ‘শত্রু বাইরে নয়, দেশের ভিতরেই।’ সেই বিক্ষোভ দমনে পুলিশের গুলি চালানো ও টিয়ার গ্যাসের নিক্ষেপের বেশ কয়েকটি ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু ইরানের প্রশাসন এখনও বলছে, বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালানো হয়নি। তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হচ্ছে না।

বস্তুত, ইরানে সরকার-বিরোধী বিক্ষোভ এই প্রথম নয়। এর আগেও একাধিকবার এমন ঘটনা ঘটেছে। যখনই ঘটেছে কড়া হাতে তা দমন করেছে খামেনির সরকার। বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালানো হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে। এ বারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। এর আগে একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে পুলিশ নির্বিচারে বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালাচ্ছে। চালানো হচ্ছে কাঁদানে গ্যাস। সম্প্রতি নিউ ইয়র্কের একটি সংস্থা বিক্ষোভের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, এক মহিলাকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। আর তাকে ঘিরে থাকা বিক্ষোভকারীরা বলছেন, তার পায়ে গুলি লেগেছে।

এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প আবারো বিক্ষোভকারীদের সমর্থন জানিয়েছেন। টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘নিজের দেশের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ইরান খারাপ ব্যবহার করলে তার ফল ভাল হবে না।’ এর আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘ইরানের সঙ্গে অ্যামেরিকা সমঝোতায় আসতে পারে, যদি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সে দেশের সরকার ভাল ব্যবহার করে।’ জার্মানিও ইরানের বিক্ষোভকারীদের সমর্থন জানিয়েছে। এর আগে গত সোমবার ইরানের সমালোচনা করেছে যুক্তরাজ্য।

যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় ইরানের অন্যতম প্রভাবশালী জেনারেল কাসেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক ক‚টনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, গত কয়েক দিনে যুদ্ধ পরিস্থিতির সম্ভাবনা খানিকটা হলেও কমেছিল। কিন্তু ইরান যে ভাবে আন্দোলন দমন করতে শুরু করেছে, তাতে ফের যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলেই অনেকের অভিমত। সূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
রুবেল শিকদার ১৫ জানুয়ারি, ২০২০, ৩:১৬ এএম says : 0
এই বিক্ষোভের পিছনে আমেরিকার হাত আছে
Total Reply(0)
জাহিদ ১৫ জানুয়ারি, ২০২০, ৩:১৭ এএম says : 0
ইরানের জনগণের উচিত বর্তমান অবস্থা বুঝে আন্দোলন করা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন