বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

‘চলছে কোটিপতিদের প্রতারণার গণতন্ত্র’

গোলটেবিল আলোচনায় ড. শাহদীন মালিক

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

গরিবের দুঃখকে পুঁজি করে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী কোটিপাতিরা এখন রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক। তিনি বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের বড় দুই দলের মেয়রপ্রার্থীদের একজন ছাড়া কারো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই। তাদের মধ্যে কমন বিষয় হলো তারা কোটিপতি। আমাদের আজকের গণতন্ত্র কোটিপতির গণতন্ত্র। গতকাল এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে সৎ পথে কোটি টাকা আয় করা সম্ভব নয়। অথচ কোটিপতিদের নির্বাচনে গরিবদের দুঃখ নিয়ে কথা বলা অনেক সহজ। কোটিপতিদের প্রতারণামূলক রাজনীতিতে দেশে গণতন্ত্রহীনতা, কর্মহীনতা আরো বাড়ছে।

স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলনের আয়োজনে ‘অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনে বিশ্বব্যাপী ইভিএম প্রত্যাখ্যান এবং বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক এই গোলটেবিল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহার মানা হবে না। তারা বলেন, এই যন্ত্রের মাধ্যমে সহজেই ভোট চুরি করা যাবে। মানুষ মনে করে এটা ভোট চুরির ভেল্কি মেশিন। যা বিশ্বের বহু দেশে ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশেও ইভিএম ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। এই যন্ত্রের ব্যবহারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

সভায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম। অন্যদের মধ্যে সভায় বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলনের উপদেষ্টা ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম প্রমুখ। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন কাজী মনিরুজ্জামান।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যন্ত্র তো মানুষ তৈরি করেছে। সেটার নিয়ন্ত্রণ তো মানুষের কাছে। আপনি কোথায় ভোট দিলেন সেটা তো ভোটাররা জানতে পারবেন না। আমাদের বেহায়া নির্লজ্জ নির্বাচন কমিশনার বলেছেন ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হলে দিনের ভোট নাকি রাতে হবে না। তো আপনি এর আগে কী করেছেন? যে যন্ত্র ব্যবহার করলে বিতর্ক থাকবে না, মামলার সুযোগ নেই, কোথায় ভোট দিলেন জানার সুযোগ নেই তাহলে এর চেয়ে ভোট চুরির বড় মাধ্যম আর কী হতে পারে? ইভিএম মানা যাবে না। এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। ৩০ জানুয়ারি ভোট চুরি হলে পরদিন মাঠে নামতে হবে। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে যে ভোট ডাকাতি হলো তখন যদি আমরা মাঠে নামতাম তাহলে তারা সাহস পেতো না। আসুন তখন যেটা পারিনি ২০২০ সালে সেটা করি। কারণ এটা বিএনপি, গণফোরাম বা অন্য কারো লড়াই নয়। যেখান থেকেই নির্দেশ আসুক মাঠে নামতে হবে। এটা আমাদের ভোটাধিকার রক্ষা ও বাঁচা-মরার লড়াই।

অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ইভিএম আমাদের ভোটাধিকার হরণ করবে। এই যন্ত্রের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ ভোটারদের কাছে থাকবে না। তারা ক্ষমতা দখল করতে যত ধরনের পদ্ধতি আছে সব ব্যাবহার করতে চাচ্ছে। আমাদের আশঙ্কা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল তারা ঠিক করে রেখেছে। এখন শুধু ঘোষণার অপেক্ষায়। তবে আমরা মনে করি এই নতুন বছরের শুরুটা হচ্ছে সরকার পতনের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।

ড. শাহদীন মালিক বলেন, ইভিএম চাচ্ছে কে? সরকার ও নির্বাচন কমিশন। এর পেছনে কোনো সঠিক উদ্দেশ্য নেই। তারা নির্বাচন সামনে এলেই নতুন নতুন পদ্ধতি নিয়ে আসেন। ২০১৪ সালে গোলমাল লাগিয়ে বিনা প্রতিদ্ব›দ্বীতায় ১৫৩ জন এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এখন সিটি নির্বাচনে যদি রাত ৩টা বা ৪ টার দিকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়? ভোট বানচালের জন্যই ইভিএম ব্যবহার করতে চাচ্ছে। এই পদ্ধতি নিয়ে দিন দিন সংশয় বাড়ছে। ফলে সেটা ব্যবহার করা হলে ভোটারদের উপস্থিতি খুব কম হবে। তাহলে প্রতারণা করা সহজ হয়। ভোটাধিকার হরণ ও ভোট দেয়া থেকে বিরত রাখতে ইভিএম ব্যবহার করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন। সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণায় সব ধরনের মানুষের কাছে গিয়ে ভোট চায়। স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলনের উপদেষ্টা ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে নিয়ে যায়, সেখানে ইভিএমে আমাদের ভোট যে চুরি হবে না সেটা কিভাবে বলা যায়? আমাদের গ্রামের সাধারণ মানুষ এখনো ইভিএমে অভ্যস্ত নয়। সুতরাং ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ করা হোক।

মূল প্রবন্ধে ড. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, মূলত বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার চরম নৈরাজ্যকর, অব্যবস্থাপনা সর্বোপরি নির্বাচন কমিশনের লাগাতার প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ বা তাদের প্রতি সীমাহীন অনাস্থার কারণে মানুষের মৌলিক ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য নতুন অনুষঙ্গ ইভিএমকে অনেকেই ভেল্কি মেশিন হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
জন্মভুমি ছাতক ১৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৪৯ এএম says : 0
ঠিক স্যার। সাধারণ মানুষের কোনো মূল্য নেই।
Total Reply(0)
চাদের আলো ১৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৫০ এএম says : 0
জাতির সামগ্রিক মুক্তি পেতে হলে গণতন্ত্র ছাড়তে হবে।
Total Reply(0)
নাসিম ১৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৫০ এএম says : 0
প্রতারণতার গণতন্ত্র থেকে মানুষের মুখ ফিরিয়ে নেয়া উচিত।
Total Reply(0)
কল্যাণমূলক চেতনা ১৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৫১ এএম says : 0
গণতন্ত্র মানেই প্রতারণা।
Total Reply(0)
রিদওয়ান বিবেক ১৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৫২ এএম says : 0
একটি কুফুরি ও শিরকি তন্ত্র।
Total Reply(0)
** হতদরিদ্র দীনমজুর কহে ** ১৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১০:৪৩ এএম says : 0
গোলটেবিল বৈঠকে সমাস্যার সমাধাধ হবেনা।লড়াইয়ে নামতে হবে।স্বাধিনতা পল্টন ময়দানের বক্তৃতার মন্চে হয়নাই।জানবাজ লড়াইকরে যুদ্ধের মাধ্যমে হয়েছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন