শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

মার্কিনিদের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাকে হত্যা করছেন ট্রাম্প

প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই মুক্ত বাজার-এর বিপরীতে রক্ষণশীলতার ধারণা প্রচার করে যাচ্ছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার দাবি, অন্য দেশ থেকে সস্তা শ্রম কিনতে গিয়ে মার্কিন ব্যবসায়ীরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা নস্যাৎ করেন। তবে সম্প্রতি জানা গেছে, ট্রাম্প নিজেই এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি সম্পন্ন করেছেন, বিশ্বের ৮৫ দেশ থেকে যারা সস্তা শ্রম কিনে থাকে। আর এ মাসে মার্কিন শ্রমমন্ত্রী প্রমাণ হাজির করেছেন, ট্রাম্পের তৈরি পোশাক ব্যবসার পণ্যে রয়েছে চীনের সস্তা শ্রম। নিজের নামাঙ্কিত পোশাক বাজারজাত করতে মানসম্পন্ন মারচেন্ডাইজিং প্রতিষ্ঠান খুঁজছিলেন ট্রাম্প। এক পর্যায়ে ফিলিপস-ভ্যান হসন নামের একটি পোশাক প্রস্তুতকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন তিনি। পৃথিবীজুড়ে ৮৫টি দেশে এই প্রতিষ্ঠানের কারখানা রয়েছে। জুলাইয়ের ১৮ তারিখ মার্কিন শ্রমমন্ত্রী থমাস পেরেজ দাবি করেন, ট্রাম্পের নামাঙ্কিত পণ্যের মধ্যে চীনা কারখানায় তৈরি পণ্যও রয়েছে। দাবির সপক্ষে প্রমাণও হাজির করেন পেরেজ। তার সরবহাকৃত নমুনা খতিয়ে দেখে ট্রাম্পের চীনা কারখানার সঙ্গের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পায় অনুসন্ধানী মার্কিন মাধ্যম পলিটিফ্যাক্ট। মারচেন্ডাইজিং-লাইসেন্সিং ব্যবস্থায় ২০০১ সালের এক চুক্তিতে ট্রাম্প তার নাম যুক্ত করে পণ্য উৎপাদন শুরু করেন। সেইসব পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত হয় ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিক্রি হয়। এই বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রে আলোড়ন তুলেছে। কেননা বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী ট্রাম্প তার রাজনৈতিক প্রচারণায় অন্যান্য অনেক কোম্পানির বিরুদ্ধে বিদেশি সস্তা শ্রমের সুযোগ নিয়ে মুনাফা করার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি এমনকী ওইসব কোম্পানিকে মার্কিন কর্মসংস্থানের হত্যাকারী বলতেও ছাড়েননি। রাজনৈতিক প্রচারণায় ট্রাম্প মেক্সিকোতে কারখানা চালু করায় ফোর্ড মোটর কোম্পানির সমালোচনা করেন। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের এক ঔষধ কোম্পানির বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তোলেন। ট্রাম্প আরও বলেন, তিনি আর কখনই ওরিও কুকিজ খাবেন না কেননা ওই বিস্কুটের প্রস্তুতকারক নাবিস্কো তাদের কারখানা মেক্সিকোতে সরিয়ে নিয়েছে। এছাড়াও বিদেশে শ্রমের মজুরি অনেক কম থাকে বলেও যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য উৎপাদন জরুরি বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।
গত বছর সিএনএনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সেখানে শ্রমের মজুরি কম, শুধু তাই নয় কর্ম পরিবেশ, শ্রমিকের স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতিও নাজুক। সিএনএন এর সঙ্গে ওই সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে আলোচনায় তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার চেয়ে ভালো কেউ জানে না। আমি একজন ব্যবসায়ী। এইসব হচ্ছে আইন, নীতিমালা, নিয়ম। আমরা এটা করতেই পারি। কিন্তু আমিই একমাত্র যে কিনা জানে কী করে এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। তবে গত মার্চ মাসে ওয়াশিংটন পোস্ট-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে হাজির করা নানা তথ্যপ্রমাণ ও সাক্ষাৎকার থেকে ট্রাম্পের স্ববিরোধিতা স্পষ্ট হয়। বোঝা যায়, ব্যবসায়িক চুক্তি সম্পন্ন করার সময় পণ্য কোথায় উৎপাদন করা হবে সে সম্পর্কে ট্রাম্পের কোন মাথাব্যথা ছিল না। ট্রাম্পের নিয়োগকৃত মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেফ ড্যানজার বলেন, তিনি সবচেয়ে বড় ও দক্ষ প্রতিষ্ঠান দিয়ে কাজ করাতে চেয়েছেন। পণ্য অ্যামেরিকায় তৈরি হতে হবে এমন কোন পক্ষপাত তার কখনও ছিল না। এখান থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায় যে, ট্রাম্প নিজেও সস্তা শ্রম ব্যবহার করেন। এ ঘটনায় তার রাজনৈতিক অবস্থানের স্ববিরোধিতা সামনে চলে আসে।
বর্তমানে ডোনাল্ড জে ট্রাম্প নাম খোদাই করা শার্ট শুধু নয়, চশমা, সুগন্ধী ইত্যাদিও পাওয়া যায় বাজারে। এ সব পণ্য তৈরি হয় বাংলাদেশ, চীন, হন্ডুরাসসহ নানা দেশে যেখানে শ্রম সস্তা। ট্রাম্পের কন্যা ইভানকা তার কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেন ও তার রাজনৈতিক প্রচারণারও অংশীদার। ইভানকা পোশাক ও অলঙ্কার বাজারজাত করেন যার বেশিরভাগই তৈরি হয় চীনে। প্রায় এক দশক আগে ট্রাম্প যখন লাইসেন্সিং চুক্তি সীমিত করে আনতে চেয়েছিলেন তখন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ উভয়পক্ষই দাবি করেছে মুক্ত বাজার ও বিদেশি শ্রম সব পক্ষের জন্যই উপকারী- এতে দারিদ্র দূরীকরণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবিত্তের নাগালে পণ্য সরবরাহ করার সুযোগ তৈরি হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকানদের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হাজির হওয়ার পর ট্রাম্প দাবি করেন, পণ্য উৎপাদনে বৈদেশিক শ্রম ব্যবহার করায় যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তার এই পরস্পরবিরোধী অবস্থানকে বিরোধী ও সমালোচকরা কপটতা বলে আখ্যায়িত করেছেন। বিদেশি শ্রম ব্যবহার করে মুনাফা করার ব্যবসায়ী অবস্থান ও দেশের কর্মসংস্থান নিয়ে সচেতনতামূলক রাজনৈতিক অবস্থান পরস্পরের সম্পূর্ণ বিপরীত হওয়ায় ট্রাম্পের শ্রমনীতি বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সময়ের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা লরেন্স বলেন, তিনি ও তার কন্যা যা যা করেন তাতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি অন্য কোম্পানির বিরুদ্ধে অনৈতিকতার অভিযোগ করছেন ও কারখানা সরিয়ে নেওয়ার নিন্দা জানাচ্ছেন যা মানানসই নয়। লরেন্স বলেন, ট্রাম্পের প্রস্তাব তার নিজের ব্যবসাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কেননা তিনি আউটসোর্স করা কোম্পানিগুলোকে ১৫ শতাংশ ও বাইরে থেকে আসা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ করারোপ করার প্রস্তাব দিয়েছেন যা কিনা তার নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্যও প্রযোজ্য হবে। ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এ প্রসঙ্গে কোন মন্তব্য করেননি। তার মেয়ে ইভানকা ট্রাম্পের মুখপাত্রও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবে মধ্যস্ততাকারী প্রতিষ্ঠান ফিলিপস-ভ্যান হসনের প্রধান নির্বাহী মার্ক ওয়েবার জানান, আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শ্রম ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন করলেও এই প্রতিষ্ঠান কোথাও শিশুশ্রম ব্যবহার করে না। তিনি ট্রাম্পকে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যবসায়ী বলেও অভিহিত করেন, কেননা ট্রাম্প জানেন কোন ব্র্যান্ডটি ব্যবসাসফল হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। ওয়াশিংটন পোস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন