শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

চীনা প্রেসিডেন্ট শি মিয়ানমার যাচ্ছেন আজ

সফর নিয়ে শঙ্কায় ভারত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

দু’দিনের সফরে আজ মিয়ানমারে যাচ্ছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চীন-মিয়ানমার আর্থিক করিডর প্রকল্পের পথ সুগম করাই শি-র এই সফরের অন্যতম লক্ষ্য। তার এই সফর নিয়ে উৎকন্ঠায় রয়েছে নয়াদিল্লি। কারণ তারা মনে করছে, রাখাইনে কিয়াউকফিউ বন্দরের মাধ্যমে চীন বঙ্গোপসাগরকে ও তার মাধ্যমে সরাসরি ভারত মহাসাগরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যা ও সেখান থেকে ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে বিতাড়নের অভিযোগের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ ও অন্য সব মঞ্চে সাফাই গেয়ে এসেছেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি। যে কারণে বিশ্বে এই নোবেল বিজয়িনীর ভাবমূর্তি নিদারুণ ভাবে ক্ষুণœ হয়েছে। এ কারণে, রাখাইনে বিনিয়োগ করার প্রশ্নে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে সব দেশ। কিন্তু অন্যেরা যেখানে বিনিয়োগ করতে রাজি নয়, সেখানেই পা রাখতে প্রবল আগ্রহ চীনের।

শুধু সড়ক নয়, দ্রæতগামী ট্রেনের মাধ্যমে চীনের জমিঘেরা ইউনান প্রদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের ওই বন্দরকে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের। সামগ্রিক ভাবে দেখলে মায়ানমারে সবচেয়ে বড় বিদেশি বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনের প্রভাব প্রতিষ্ঠা করাই শি-র সফরের মূল লক্ষ্য। এবং সেই লক্ষ্যে সু চি-র সঙ্গে বৈঠক করবেন শি। কথা বলবেন সেনাপ্রধান মিন আউঙ লেইং ও প্রেসিডেন্ট উ উইন মিয়িন্টের সঙ্গে।

ভারতের কাছে চিন্তার বিষয় হচ্ছে, বছর তিনেক আগে ভারত রাখাইনের রাজধানী শহর সিটওয়ে-তে বন্দর তৈরি করেছিল। কালাদান নদী যেখানে সমুদ্রে মিশছে, সেখানেই তৈরি হয়েছে এই বন্দর। অর্থ দিয়েছিল ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। চীনের বন্দর তৈরি হলে সিটওয়ে বন্দর গুরুত্বহীন হয়ে পড়তে পারে। এ বিষয়ে ভরতের সাবেক উচ্চপদস্থ আমলা ও পরিকল্পনা বিশারদ অমিতাভ বলেন, ‘সিটওয়ে বন্দর গুরুত্বহীন হয়ে পরার সম্ভাবনা ষোলআনা আছে। কারণ, ঐ বন্দরের দু’হাত দূরে চীনের বন্দর তৈরি হচ্ছে। এর পাশাপাশি যে বিষয়টা লোকের নজর এড়িয়ে যাচ্ছে, তা হল, বঙ্গোপসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় চীনের প্রভাব বাড়ার ঘটনা।’
ফলে চীনের বন্দর ভারতের কাছে চিন্তার বিষয় হওয়াটা স্বাভাবিক। প্রবীণ সাংবাদিক ও বিদেশ বিশেষজ্ঞ প্রণয় শর্মা মনে করেন, ‘বিষয়টি নির্ভর করছে কে কী ভাবে তা দেখবে তার ওপর। যদি শুধু পণ্য নিয়ে আসার বিষয় থাকে তো তার তাৎপর্য একরকম হবে। যদি সেনা চলে আসার সম্ভাবনা বা সমুদ্রে নজরদারির দিক থেকে এটাকে দেখা হয় তো অন্যরকম হবে।

তিনি জানিয়েছেন, ‘ঘটনা হল, চীনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের সুসম্পর্ক রয়েছে। আর পরিকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে চীন এখন বিশ্বে এক নম্বর। ফলে ভারতের পক্ষে তাদের ঠেকানো সম্ভব নয়। তবে স্বস্তির বিষয় হল, ১৯৯৪ সাল থেকে ভারতের সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে মিয়ানমার। বলা যেতে পারে, মিয়ানমারের কাছে ভারত হল দ্বিতীয় উইন্ডো। ভারতও তার প্রতি নরম মনোভাব নিয়ে চলে।’
এমনিতে মিয়ানমারের সঙ্গে যে চীনের সম্পর্ক মধুর তা নয়। চীনা বিনিয়োগে যে ঋণের ফাঁদে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে মিয়ানমারেরও। তাদের বিদেশি ঋণ যত, তার ৪০ শতাংশই চীনের কাছে। কিয়াউকফিউ বন্দরের উন্নতি ঘটাতে চীন ৭২০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল।

কিন্তু দেনার দায়ে ফাঁদে পড়ে যাওয়ার ভয়েই সেটা ১৩০ কোটি ডলারে নামিয়ে এনেছে সু চি-র দেশ। বন্ধুত্ব রক্ষা করতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের পাশে দাঁড়িয়েছে চীন। তাদের লক্ষ্য, মিয়ানমারে সড়ক ও রেলপথ গড়ে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বাণিজ্যপথের বিস্তার ঘটানো। বিশ্বের বিশাল অংশ জুড়ে চীনের সামরিক দাপটও বাড়বে যার মাধ্যমে।

ইতিমধ্যে চীন-পাক আর্থিক করিডর নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে ভারত। কারণ, ওই সড়কের অনেকটা হওয়ার কথা আজাদ কাশ্মীর দিয়ে, ভারতের প্রতিরক্ষার জন্য যা বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। ফলে ওই সড়ক নিয়ে গোড়া থেকেই জোরালো আপত্তি জানিয়ে যাচ্ছে ভারত। এই পরিস্থিতিতে জিনপিং মিয়ানমার সফর করবেন।
এবার মিয়ানমারে আর্থিক করিডর গড়ার প্রশ্নে চীন-মিয়ানমার সীমান্তে জাতি-সংঘাত, রাখাইন ও অন্যত্র বিদ্রোহীদের ঘাঁটির মতো কিছু সমস্য রয়েছে। তবে বিদ্রোহীদের সঙ্গে চীনা দূত ইতিমধ্যেই কথা বলে রেখেছে, যাতে শি-এর সফরে কোনও রকম বাগড়া না-দেয় তারা। এই প্রথম চীনের কোনও প্রেসিডেন্ট মিয়ানমারে যাচ্ছেন। এর আগে ২০০৯ সালে শি গিয়েছিলেন মিয়ানমারে, ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে। সূত্র : ডয়চে ভেলে, ইন্ডিয়া টুডে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন