রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে এবারের ৫৫ তম বিশ্ব ইজতেমার আসর। আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে মুসুল্লিদের ঢল এখন টঙ্গীর দিকে। মুসুল্লিদের এ ঢল অব্যাহত থাকবে আখেরি মোনাজাতের আগ পযনত।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে অবস্থান করছেন। আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে আরো বিপুল সংখক মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে জড়ো হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। রবিবার বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত হতে পারে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার। ইজতেমার মুরুব্বী মাওলানা সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম জানান, দিল্লীর মাওলানা জমশেদ আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন। লাখো মুসল্লির সমাগম নির্বিঘ্ন করতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিয়েছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ।
ইজতেমা ময়দানে আগত মুসুল্লিরা ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত রয়েছেন। ফজর থেকে এশা পর্যন্ত ঈমান, আমল, আখলাক ও দ্বীনের পথে মেহনতের ওপর আমবয়ান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাবলিগের ৬ উসুলের (মৌলিক বিষয়ে) ওপর শনিবার বাদ ফজর দিল্লীর মাওলানা মুরসালিনের বয়ানের মধ্য দিয়ে শনিবার দ্বিতীয় দিনের বয়ান শুরু হয়। বাদ জোহর বয়ান করেন দিল্লীর মাওলানা আঃ সাত্তার মেওয়াতী, বাদ আসর বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা মোশারফ এবং বাদ মাগরিব বয়ান করেন মাওলানা জমশেদ।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, লিবিয়া, আফ্রিকা, লেবানন, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, ইরাক, সৌদি আরব, ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের ৩৩ টি দেশ থেকে ২ হাজার ২৬২ জন মুসল্লি এ পর্বের ইজতেমা ময়দানের বিদেশীদের খিত্তায় অবস্থান করছেন।
মুসল্লিদের ইজতেমা ময়দানে আসা এবং আখেরি মোনাজাত শেষে মুসল্লিদের বাড়ি ফেরা নির্বিঘ্ন করতে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ টঙ্গীমুখী সড়ক-মহাসড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করবে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো: আনোয়ার হোসেন জানান, ইজতেমায় মুসল্লিদের আসা-যাওয়া নির্বিঘ্ন করতে শনিবার দিবাগত ভোর রাত ৪টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর চৌরাস্তায় এবং ঢাকার মহাখালী থেকে বন্ধ করে দেয়া হবে।
উত্তরবঙ্গ থেকে আসা গাড়ি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ি থেকে বন্ধ করে দেয়া হবে। এ ছাড়া টঙ্গীমুখী সকল শাখা সড়কগুলো বন্ধ থাকবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ ট্রাফিক ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। তিনি আরো বলেন, ইজতেমায় যোগ দেয়া বৃদ্ধ মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য শাটল বাসের ব্যবস্থা থাকবে। তিনি বলেন, বিশ্ব ইজতেমায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও ভাল রয়েছে। আশা করছি বাকি সময়টুকুও সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে।
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় এসে আরো ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এবারের দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নিতে এসে এ পর্যন্ত ৮ জন মুসল্লির মৃত্যু হলো।
পুলিশের প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ও বার্ধক্যজনিত কারণে তারা মারা যান।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কন্ট্রোল রুমের মিডিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মো: মনজুর রহমান জানান, শুক্রবার দিবাগত রাতে ও শনিবার সকালে আরো ৫ মুসল্লীর মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে এবারের ইস্তেমায় ৮ মুসল্লীর মৃত্যু হলো। শনিবার বেলা ১১টার দিকে নোয়াখালি জেলার হাতিয়া থানার পূর্ব আজিমনগর গ্রামের মো: মফিজুল হকের ছেলে মো: মনির হোসেন (৪৮) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাতে ৪ মুসল্লি মৃত্যুবরণ করেন। তারা হলেন, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার উসমানপুর এলাকার হাজী জয়নাল আবেদীনের ছেলে হুমায়ুন কবীর (৬৫), ঝিনাইদহ সদর থানার কালাহাট গোপালপুর গ্রামের আ ফ ম জহুরুল আলম (৬২), ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানার নলভোগ ফজলু মিয়ার ছেলে ইলিয়াস মিয়া (৮৫), গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানার কামালের পাড়া গ্রামের ভিক্ষু হাজীর ছেলে আব্দুস ছোবহান (৬৫)। শনিবার ফজরের নামাজের পর তাদের মধ্যে দুইজনের নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে গত ২দিনে সড়ক দূর্ঘটনা, বার্ধক্যজনিত রোগে সুনামগঞ্জের দোয়ারা বাজার উপজেলার চানপুর এলাকার কাজী আলাউদ্দিন, নরসিংদির বেলাবো উপজেলার সুরুজ মিয়া, গাইবান্দার ফুলছড়ি উপজেলার গোলজার হোসেন নামে আরো ৩ জনের মৃত্যু হয়।
শুক্রবার বাদ ফজর থেকে আ’ম বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়। এ পর্বে মাওলানা সা’দ অনুসারি মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন। এর আগে ইজতেমার প্রথম পর্ব ১২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
২০২১ সালে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব অনুষঠিত হবে ৮, ৯ ও ১০ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ১৫, ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি। এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতের আগে মাইকে এ ঘোষনা দেয়া হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন