বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রকৃতির স্বর্গ সুন্দরবনে এখন শান্তির সুবাতাস

সুন্দরবন থেকে ফিরে সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

সুন্দরবনের মতো এত বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বিশ্বের আর কোথাও নেই। বাংলাদেশের আয়তনের ৪ দশমিক ২ শতাংশ ভ‚মির প্রায় ৪৪ ভাগ এই সুন্দরবন। জোয়ারভাটা, সবুজ বনানী আর বিচিত্র বন্যপ্রাণী সব সময় হাতছানি দেয় মানুষকে।

বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, অনিন্দসুন্দর হরিণ, কুমির, বানরসহ বন্য প্রাণীর পদচারণা রয়েছে বনাঞ্চলজুড়ে। বনের দক্ষিণ কোল ঘেঁষে বঙ্গোপসাগর। নিকটবর্তী সাগরে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্যও নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের অবতারণা করে। আর এখন বিশাল আকারের সুন্দরবনে ঘুরতে গিয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে কোন ধরনের হুমকি নেই। ফলে সুন্দরবনকে ঘিরে পর্যটন শিল্পে রয়েছে অপার সম্ভাবনা।

সুন্দরবন সৌন্দর্য বিস্তারের পাশাপাশি বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলের লাখ লাখ উপক‚লবাসীকে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা করে থাকে। একই সঙ্গে তাদের জীবিকা নির্বাহের অবলম্বনও এই বন। ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা-এই তিন জেলায় সুন্দরবনের বিস্তার। সুন্দরবনে জলদস্যু, বনদস্যু ও ডাকাতসহ পেশাদার অপরাধীমুক্ত থাকায় পর্যটকসহ সকলেই নিরাপদ মনে করছেন।
তবে বনবিভাগের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও সদস্যের বিরুদ্ধে উৎকোচ গ্রহণ করে নিষিদ্ধ জায়গায় মাছ শিকার ও গোলপাতা সংগ্রহ করতে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মো. সারোয়ার-বিন কাশেম ইনকিলাবকে বলেন, ধারাবাহিক অভিযান এবং আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ার কারণে সুন্দরবনে এখন পরিপূর্ণ শান্তি বিরাজ করছে। আর নিয়মিত টহল ও নজরদারি চালানো হচ্ছে। কোন জলদস্যু বা অপরাধী সুন্দরবনে যাওয়ার চেষ্টা কিংবা চাঁদাবাজিসহ কোন অপরাধ কার্যক্রম করার চেষ্টা করলে সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চিত্রল হরিণ, বানর, সুন্দরী গাছ, জলের কুমির, কুকর আর নানা জাতের মাছ ও পাখিই আকর্ষণের মূল কারণ। বনভ‚মি ও বন্যপ্রাণী দেখতে প্রতিনিয়ত সুন্দরবনে ভিড় করছেন পর্যটকরা। প্রকৃৃতির অপরূপ অনাবিল সৌন্দর্যমন্ডিত রহস্যঘেরা এ বনভ‚মি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হলেও সেখানে নেই পর্যাপ্ত পর্যটন সুবিধা।

জানা গেছে, সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও চিত্রল হরিণ ছাড়াও বানর, কুমির, হাঙ্গর, ডলফিন, অজগর ও বনমোরগসহ রয়েছে ৩৩০ প্রজাতির গাছ। ২৭০ প্রজাতির পাখি, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪২ প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও ৩২ প্রজাতির চিংড়িসহ ২১০ প্রজাতির মাছ। এসব বন্যপ্রাণী ও সুন্দরবনের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা প্রতিনিয়ত সেখানে ছুটে যাচ্ছেন। জালের মতো অসংখ্য নদী আর খাল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সুন্দরবনজুড়ে।

সরেজমিন ঘুরে আরো দেখা গেছে, সুন্দরবনের কটকায় চিত্রল হরিণ পর্যটকদের খুব সহজেই আপন করে নেয়। কটকা, মান্দারবাড়িয়া, কচিখালী, নীলকমল, কালিরচর এসব এলাকায় প্রচুর হরিণ খুব কাছে থেকে দেখা যায়। প্রায় সব জায়গাতেই বানর দেখা যায়। বিশেষ করে ভাটার সময় নদী বা খালের পাড়ে খাবারের সন্ধানে এলে বেশি দেখা যায়।

সুন্দরবনে দেখা মিলে লোনাপানির কুমির। ধারণা করা হয়, ১৫০ থেকে ২০০টি কুমির আছে। শীতকালে প্রায়ই নদী বা খালের চরে রোদ পোহাতে দেখা যায়। বছরে তিন মাস মধু সংগ্রহের অনুমতি দেয়া হয়। এ সময় শত শত নৌকাযোগে মৌয়ালরা দল বেঁধে মধু সংগ্রহের উদ্দেশে সুন্দরবনে যাত্রা করে। নদী বা খালের পাড়ে সারি সারি গোলপাতার মনোরম দৃশ্য যে কোনো পর্যটককেই মুগ্ধ করে।

শরণখোলায় গোলপাতা সংগ্রহের স্থানীয় মহাজন মোশারফ হোসেন ভ‚ঁইয়া ইনকিলাবকে বলেন, গত তিন বছর ধরে ডাকাতের আনগোনা নেই। আগে মাঝে মধ্যেই হানা দিতো গামা, কালু, মাস্টার আর হাশেম জুলফির (জুলফিকার) মত বিভিন্ন জলদস্যু বাহিনী। বাপ-দাদার পেশা হওয়ায় মায়া আর ভালোবাসায় বন ছাড়তে পারিনি। জীবন হাতের তালুতে রেখে বনের ভেতর যেতাম। বর্তমানে আর সেই ভয়ানক দিন নেই।
খুলনা নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, বিস্তৃত সমুদ্র তীরবর্তী সুন্দরবন উপক‚লীয় অঞ্চলে নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড নিয়মিত টহল দিচ্ছে। এক লাখ ১৮ হাজার ১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা ও তৎসংলগ্ন নদী এলাকায় নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে নৌবাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বন সংরক্ষক খুলনা সার্কেলের মো. মঈনুদ্দিন খান ইনকিলাবকে বলেন, বনবিভাগের কোন কর্মকর্তা বা সদস্যের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে মাছ ধরতে দেয়া বা অন্য কোন অভিযোগ আমার কাছে নেই। আমরা সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছি। সুনিষ্টি অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন