শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ভোট ডাকাতি আ.লীগের জেনেটিক্যাল বৈশিষ্ট্য

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

ভোট ডাকাতি আওয়ামী লীগের জেনেটিক্যাল বৈশিষ্ট্য বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর-দক্ষিণের নির্বাচনে ইতোমধ্যে ভোটসন্ত্রাসীর স্বমহিমায় আবির্ভূত হয়েছে বর্তমান মধ্যরাতের সরকার। চূড়ান্ত ভোট ডাকাতির এখন ড্রেসরিহার্সেল চলছে। আওয়ামী আদর্শে রঞ্জিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা নিজের মানসম্মানকে মোটেই তোয়াক্কা করেন না। তাই সবকিছু ধ্বংস করে শুধু শেখ হাসিনার সন্তুষ্টি বিধানের জন্য নৌকাকে বিজয়ী করাকে তিনি তাঁর আদর্শিক কাজ বলে মনে করেন। তবে সরকার নিজেদের পুঞ্জিভূত অনাচার আর অপকীর্তির জন্য নিজেরাই নিজেদের আত্মহত্যার দড়ি একদিন গলায় পরবে। গতকাল (শনিবার) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান ইতিহাসের এমন এক যুগসন্ধিক্ষণে রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছিলেন, যখন দেশে বিরাজমান ছিল ঘোর অমানিশা। স্বাধীনতাত্তোর বিশৃঙ্খলা, লুটপাট, হত্যা, খুন, জখম, মজুদদারী ও চোরাচালানিতে ভরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তৎকালীন ক্ষমতাসীনরা আইনের শাসনের বদলে জমিদারী শাসন কায়েম করেছিল। গণতন্ত্রে স্বীকৃত স্বাধীনতাগুলোকে তারা এক এক করে নিরুদ্দেশ করে দিয়েছিল। আজকের মতো সেদিনও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী মানুষদের গুম, খুন ও কারা-নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংবাদপত্রের ওপর চলেছে দমন-পীড়ণের দৃষ্টান্তহীন পৈশাচিকতা। রক্তশ্রোত স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ক্ষমতাসীনরা স্বার্থলোলুপ গোষ্ঠীতে পরিণত হয়ে গোটা দেশের জন্য হয়ে ওঠে বিপজ্জনক। ‘৭৩ এর নির্বাচনে দেশবাসী প্রথম ভোট লুট ও ভোট সন্ত্রাসের আতঙ্কজনক পরিস্থিতি অবলোকন করেছে। মফঃস্বলের ব্যালট বাক্স হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে এসে তা গণনা করে নিজেদের পচ্ছন্দসই ব্যক্তিকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই অবনতিশীল ছিল যে, তা সামাল দিতে না পেরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নিজেই নিজেদের লোকদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘সবাই পেয়েছে সোনার খনি, আর আমি পেলাম চোরের খনি’।

তিনি বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যারও সুচনা হয় সেই আমলেই। ক্ষমতাসীনদের বিরোধী রাজনৈতিক দলের অনেকেই বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। ভিন্নমতের কারণে মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ সিকদারকে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হতে হয়। এই হত্যাকাÐ নিয়ে অনুশোচনা দুরে থাক, আস্ফালন করা হয়েছে। মানুষ যখন আম-কাঁঠালের পাতা খেয়ে জীবনধারণ করছে, মাছ ধরার জাল পরে লজ্জা নিবারণ করছে, সেই সময় আওয়ামী ক্ষমতাসীনরা ছিলেন বিত্ত-বিলাসে মত্ত। এরপরে শুরু হয় নিহত গণতন্ত্রের চূড়ান্ত অন্তেষ্টিক্রিয়া। এক কলমের খোঁচায় সকল রাজনৈতিক দল বন্ধ করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করা হয়। সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে বাকশাল সমর্থিত চারটি পত্রিকা চালু রাখা হয়। এইগুলো শুধু ইতিহাসের অধ্যায় নয়, আজও মানুষের মনে দু:সহ স্মৃতি হয়ে বিরাজমান। এরপর ‘৭৫ এর ১৫ আগষ্ট হৃদয়বিদারক রক্তাক্ত ঘটনার পর আওয়ামী লীগেরই একটি বড় অংশ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে এবং ‘৭৩ এ গঠিত সেই পার্লামেন্টই কার্যকর থাকে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সেই সরকারের শপথ পাঠ করিয়েছেন। এরপর চলে নানাধরণের নৈরাজ্যকর অবস্থা। এরকম একটি অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে সিপাহী-জনতা রাজপথে এগিয়ে এসে ৭ নভেম্বরের বিপ্লব ঘটায়। আবারও শুরু হয় বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রা। অর্গলমুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে অসংখ্য সংবাদপত্র। মানুষ ফিরে পায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা। দুর্ভিক্ষের হাহাকার থেকে জিয়াউর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয় দেশ। দুর্ভিক্ষের হাত থেকে রক্ষা পায় দেশের কোটি কোটি মানুষ। শুরু হয়-শিল্প ও কৃষি বিপ্লব, জনশক্তি রপ্তানী এবং সূচিত হয় স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি। বিশে^র দরবারে বাংলাদেশ একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কিন্তু দেশী-বিদেশী কুচুক্রী ষড়যন্ত্রকারীরা দেশপ্রেমিক জিয়াকে সহ্য করতে পারেনি। তাদের নিষ্ঠুর ষড়যন্ত্রের পরিণতিতে শহীদ হন তিনি। এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী, গণতন্ত্র-উন্নয়ন-উৎপাদনের রুপকার দেশমাতৃকার এক মহান স্বাপ্নিককে হারিয়েছে দেশবাসী।

১২ বছর ধরে পুনরায় সেই বাকশাল রক্তপিপাসু প্রেতাত্মা হয়ে দেশে আধিপত্য বিরাজ করছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, বাকশালের এই অভিনব নব্য সংস্করণ একইভাবে গণতন্ত্রকে হত্যা করে নির্বাচন, ভোট, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মানুষের নাগরিক অধিকারকে হরণ করে চলেছে। আবারও ফিরিয়ে আনা হয়েছে বিচারবর্হির্ভূত হত্যা, গুম, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় ইত্যাদি। গণতন্ত্রকে মাটিচাপা দেয়ার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করতেই বারবার গণতন্ত্র পুণ:রুদ্ধারের আপোষহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যে হিংসা আর ভোট লুট ছাড়া অন্য কিছু নেই। উত্তেজিত বাতিকগ্রস্তের মতো উদ্ভট উল্লাসে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে পৈশাচিক নিপীড়ণ-নির্যাতনই তাদের ঐতিহ্য। স্বাধীন বিচার বিভাগ ও আওয়ামী লীগ পরস্পরের শত্রু।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন