বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রবাসী পুত্রের লাশের জন্য প্রহর গুনছেন মা রাবেয়া

জেদ্দা কনস্যুলেটের গাফলতিতে পাকিস্তানে দাফন সম্পন্ন

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

সয়ম আর কাটছে না। খাওয়া নেই চোখে ঘুমও নেই। কখন ছেলের লাশের কফিন নিয়ে এ্যাম্বুলেন্স আঙ্গিনায় এসে পৌঁছবে। সউদী আরবে মৃত প্রবাসী ছেলে মোহাম্মদ রুহুল আমিনের লাশের জন্য প্রহর গুনছেন বৃদ্ধ মা রাবেয়া খাতুন। সন্তানের লাশ একনজর দেখার জন্য তিনি প্রতিদিন অঝোরে কাঁদছেন। তিন বছর আগেও এই হতভাগী মায়ের কোল খালি করে আরেক ছেলে মকবুল হোসেন দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে।
জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল শ্রম কল্যাণ উইং এর চরম উদাসিনতার দরুণ প্রবাসী কর্মী রুহুল আমিনের লাশ ভুলক্রমে পাকিস্তানে চলে গেছে। আফগানিস্তানের সীমান্ত এলাকায় রুহুল আমিনের লাশ দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। সউদীর তায়েফ থেকে মৃত রুহুল আমিনের ভগ্নিপতি দেলোয়ার হোসেন এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দেশটির প্রবাসী কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং কনস্যুলেট সেবা প্রদানের জন্য ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড চলতি অর্থ বছরে জেদ্দাস্থ কনস্যুলেট জেনারেল শ্রম কল্যাণ উইংকে প্রায় ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এর মধ্যে সউদীতে মৃত প্রবাসী কর্মীদের লাশ দ্রæত দেশে পাঠাতে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জেদ্দাস্থ কনস্যুলেটের আওতায় এখনো ৯জন প্রবাসী কর্মীর লাশ বিভিন্ন হাসপাতাল মর্গে পড়ে রয়েছে। এসব লাশ কবে নাগাদ দেশে পাঠানো হবে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। জেদ্দাস্থ কনস্যুলেটের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তারা কর্মীদের সেবা প্রদানে তৎপর না হলেও প্রতি মাসে বিভিন্ন ট্যুরের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। নতুন সিজি ফয়সাল আহমদকে এসব বিষয় অবহিত করেও প্রবাসী কর্মীরা কোনো সুরাহা পাচ্ছে না। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লার মুরাদনগরের পিরকাশিমপুর গ্রামের মো. দানু মিয়ার ছেলে রুহুল আমিন ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর সউদীর তায়েফে মারা যায়। ভগ্নিপতি দেলোয়ার হোসেন নিজেই রুহুল আমিনের লাশ জেদ্দাস্থ কিং আব্দুল আজিজ হাসপাতালের মর্গে তার লাশ রাখেন। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের যুগ্মসচিব পরিচালক (প্রশাসন ও উন্নয়ন) শোয়াইব আহমাদ খান গত ২২ ডিসেম্বর এক জরুরি বার্তায় জেদ্দাস্থ কনস্যুলেটের কাউন্সেলর (শ্রম) আমিনুল ইসলামকে রুহুল আমিনের লাশ দ্রুত দেশে প্রেরণ, মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ আদায় এবং কফিলের কাছ থেকে বকেয়া বেতন ভাতা আদায় করে দেশে স্ত্রী মিলি আক্তারের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেন। জেদ্দাস্থ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে গত ১ জানুয়ারি মর্গে রক্ষিত দুর্ঘটনায় নিহত পাকিস্তানের অপর এক প্রবাসী কর্মী শেরে খানের লাশের পরিবর্তে বাংলাদেশি কর্মী রুহুল আমিনের লাশ পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়। যথা সময়ে পাকিস্তানের আফগান সীমান্তবর্তী এলাকায় বাংলাদেশি কর্মী রুহুল আমিনের নামাজে জানাজা শেষে তার লাশ দাফন করা হয়। গত ৬ জানুয়ারি মৃত রুহুল আমিনের ভগ্নিপতি তায়েফ থেকে হাসপাতাল মর্গে গিয়ে দেখেন রুহুল আমিনের লাশ পাকিস্তান পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। আর পাকিস্তানের কর্মীর লাশ বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য হাসপাতাল মর্গে পড়ে রয়েছে। জেদ্দাস্থ কনস্যুলেটের কাউন্সেলর শ্রম আমিনুল ইসলাম বাংলাদেশি কর্মী রুহুল আমিনের লাশ পাকিস্তানে চলে যাওয়ার ব্যাপারে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। দেলোয়ার হোসেন পাকিস্তানের মৃত কর্মীর লাশ শনাক্ত করে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। এতে উপস্থিত লোকজন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হতবাক হন। দেলোয়ার হোসেন গত ৮ জানুয়ারী মক্কাস্থ আমীরের মক্তবে লিখিত ভাবে রুহুল আমিনের লাশ পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে পাঠানোর দাবি জানান। সউদী আমীরের মক্তব বাংলাদেশি কর্মী রুহুল আমিনের লাশ কিভাবে পাকিস্তানের চলে গেছে তার বিস্তারিত জানানোর জন্য কিং আব্দুল আজিজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কৈফিয়ত তলব করেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন