বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

পদক্ষেপ নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বিনিয়োগ বাড়বে পুঁজিবাজারে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধিবাড়ানো হয়েছে মুদ্রা সরবরাহ

 নীতি সুদ হারে কোনো পরিবর্তন না এনে অর্থনীতির সার্বিক সরবরাহ পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ বাড়াতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে দেশের পুঁজিবাজারসহ বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে মুদ্রানীতি পলিসি কমিটি (এমপিসি)-এর ৪৫তম সভায় এ সংক্রান্ত দিক নির্দেশনা দেন গভর্নর ফজলে কবির। গভর্নরের সভাপতিত্বে সভায় বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির গতি-প্রকৃতির উপর বিস্তারিত আলোচনা হয়। এতে চলতি অর্থবছরের মুদ্রা ও ঋণ কর্মসূচিতে কিছুটা পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ ও অতিসম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক উৎপাদন প্রবৃদ্ধির শ্লথ গতি সত্তে¡ও বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ শতাংশের কাছাকাছিই থাকবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়। জানা যায়, গত জুনের মুদ্রানীতিতে চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) বেসরকারি খাতের ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। সভায় বছর ভিত্তিক প্রবৃদ্ধি’র হিসাব তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ পরিমিত রেখে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত ঋণ পবাহের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মুদ্রানীতিতে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ঋণ প্রবাহ ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে গৃহীত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে অর্থাৎ বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবদ্ধি ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ থাকবে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধির জন্য বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। এজন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। উদ্যোক্তাদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তাহলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের পাশাপাশি ঋণের চাহিদাও বাড়বে। এমপিসির সভায় বলা হয়, ব্যাংকিং খাতে নীট বৈদেশিক সম্পদ বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যাংক বহির্ভূত খাত (প্রধানতঃ সঞ্চয়পত্র) হতে সরকারের ঋণ সংগ্রহের পরিমাণ হ্রাস পাওয়ায় চলতি অর্থবছরের চলমান মুদ্রা ও ঋণ কর্মসূচিতে সরকারি খাতে গৃহীত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। যার ফলে বেসরকারি খাতে গৃহীত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা অপরিবর্তিত রেখে ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে গত মুদ্রানীতিতে সরকারি খাতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। যা আগের অর্থবছরে ছিল ঋণাত্মক ২ দশমিক ৪ শতাংশ। তবে আগামী ৬ মাসে অর্থাৎ জুন পর্যন্ত এটি আরও বাড়িয়ে নতুন কওে ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর অভ্যন্তরীণ ঋণ বিদ্যমানা কর্মসূচী ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে প্রবৃদ্ধি ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ ধরা হয়েছে। গত মুদ্রানীতিতে ব্যাপক মুদ্রার সরবরাহ ধরা হয় ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী ৬ মাসে অর্থাৎ জুন পর্যন্ত এটি আরও বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ১৩ শতাংশ। একই সঙ্গে রিজার্ভ মানির লক্ষ্য ১২ শতাংশ অপরিবর্তীত রাখা হয়েছে। এছাড়া নীট বৈদেশিক সম্পদ শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৪ দশমিক ২ শতাংশ। তবে কিছুটা কমানো হয়েছে নীট অভ্যন্তরীণ সম্পদের প্রবৃদ্ধি। ১৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, সার্বিক অর্থ ও ঋণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নীতি সুদ হারে কোনো পরিবর্তন না এনে সার্বিক সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি ও দেশের পুঁজি বাজারসহ বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে উল্লিখিত মাত্রায় ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার তুলনায় কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সেবা খাতের শেয়ার বেশি হওয়ায় এবং মূলতঃ রেমিট্যান্সের অন্তর্মুখী প্রবাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির সূত্রে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি মুদ্রানীতিতে প্রক্ষেপিত ৮ দশমিক ২ শতাংশের কাছাকাছিই থাকবে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্যেও কিছুটা ঊর্ধ্বগতি থাকায় গড় সাধারণ মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হলেও অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে পণ্যসামগ্রীর সরবরাহ পরিস্থিতির কাক্ষিত উন্নতির ফলে অর্থবছর শেষে তা লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছিই থাকবে বলে ধারণা করা হয়।

সভায় বলা হয়, রপ্তানি আয় এবং আমদানি ব্যয় হ্রাস পেলেও প্রবাস আয় প্রেরণের ক্ষেত্রে দুই শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়ার সূত্রে রেমিট্যান্সের জোরালো প্রবৃদ্ধির কারণে জুলাই-নভেম্বর, ২০১৯ সময়কালে চলতি হিসাব ও সার্বিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতির পরিমাণ পূর্ববর্তী অর্থবছরের একইসময়ের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। সরকারের নগদ প্রণোদনা নীতি বিদ্যমান থাকায় রেমিট্যান্সের জোরালো প্রবৃদ্ধি নিকট ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। সভায় আরও বলা হয়, সরকারের গৃহীত অবকাঠামোগত বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের সূত্রে বৈদেশিক ঋণের অন্তঃপ্রবাহ ও সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির সূত্রে আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকায় চলতি অর্থবছর শেষে সার্বিক লেনদেন ভারসাম্যে প্রায় ৪১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উদ্বৃত্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে, মুদ্রা ও ঋণ কর্মসূচিতে ব্যাংকিং খাতে নীট বৈদেশিক সম্পদের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি করা সমীচীন হবে বলে সভায় মত প্রকাশ করা হয়। প্রসঙ্গত, গত মুদ্রানীতিতেই বলা হয় অর্থবছরের দুই অর্ধের জন্য দু’বারের বদলে অর্থবছরের শুরুতে গোটা বছরের জন্য একবার ঘোষণা করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
সুমন মিয়া ৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৪:১১ পিএম says : 0
লোন নিব আপনাদের অপিস কোথায়
Total Reply(0)
sabbir Bhuiyan ২৬ মার্চ, ২০২২, ৯:১০ এএম says : 0
আসসালামু আলাইকুম স্যার আমি কুমিল্লা তিতাস থেকে বলছিলাম। আমি সহজ কিস্তিতে লোন নিতে চাই। আপনারা কি কিস্তিতে লোন দেন,যদি দিয়ে থাকেন তাহোলে আমাকে দয়া করে একটু জানাবেন স্যার
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন