মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

ঢাবিতে ৪ শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতন, ছাত্রলীগ নেতা বললেন ‘শালাদের স্বীকার করাতে পারিনি’

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০২০, ২:৪৬ পিএম | আপডেট : ৩:০৭ পিএম, ২২ জানুয়ারি, ২০২০

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ৪ শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতন করেছে ছাত্রলীগ নেতারা। গতকাল বুধবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের পর আহত শিক্ষার্থীদের হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ও পুলিশের মাধ্যমে শাহবাগ থানায় নেয়া হয়। রাতেই এসব শিক্ষার্থীদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় পুলিশ।

সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে শিবির করে কি না সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য গেস্টরুমে ডেকে আনে। শিবিরের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করতে গালাগালি করা হয়। শিক্ষাথী স্বীকার না করায় পরে মারধর করাস হয়।

এরপর শিক্ষার্থীর মোবাইল নিয়ে তার মেসেঞ্জার চ্যাট লিস্টের আরও তিন বন্ধুকে ডেকে গেস্টরুমে আনা হয়। তাদেরকে শিবির করে স্বীকার করে নিতে চাপ দেয়া হয়। একপর্যায়ে হল শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা, হল সংসদের সহ-সভাপতি সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্তসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতারা এসে রড, লাঠি দিয়ে মারধর শুরু করে। রাতভর নির্যাতন ও মারধরে গুরুতর আহত হয় ওই চার শিক্ষার্থী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ১১টার দিকে জহুরুল হক হলের গেস্টরুমে ছাত্রলীগের নিয়মিত গেস্টরুম চলছিল। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মুকিম চৌধুরীকে শিবির সন্দেহে গেস্টরুমে ডাকা হয়। সেখানে হল শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা তাদের অনুসারীদের দিয়ে মুকিমকে প্রথমে মানসিকভাবে চাপ দেয়। এতে স্বীকার না করায় তাকে লাঠি, স্টাম্প ও রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করতে থাকে। পরে তার ফোনের কললিস্ট দেখে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সানওয়ার হোসেনকে গেস্টরুমে আনা হয়। সেখানে তাকেও বেধড়ক মারধর করে ছাত্রলীগের নেতারা। মারধর সহ্য করতে না পেরে উভয়ই মেঝেতে বসে ও শুয়ে পড়ে। এর একটু পর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিনহাজ উদ্দীন এবং একই বর্ষের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী আফসার উদ্দীনকে ধরে গেস্টরুমে আনা হয়। সেখানে রাত দুটা পর্যন্ত তাদের ওপর নির্যাতন করতে থাকেন ছাত্রলীগ নেতারা। পরে রাত ২টার পর তাদের প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরে পুলিশ তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
নির্যাতনের বিষয়ে ছাত্রলীগের নেতারা দাবি করেছে, আহত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শিবির সংশ্লিষ্ট বই উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তার কোনো নাম অথবা প্রমাণ দিতে পারেনি তারা। এমনকি শিবির সন্দেহে তাদের গেস্টরুমে ডাকা হলেও তাদের কাছে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের নির্যাতনে আহত মুকিম ও সানওয়ারকে রাত দুটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।

নির্যাতনকারী হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা বলেন, আমরা তাদের মারধর করেনি। শুধুমাত্র জিজ্ঞাসা করেছি। তাদের কাছ থেকে শিবিরের দুটি বই উদ্ধার করেছি। তবে এরআগে বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত আমির হামজা আহত শিক্ষার্থীদের শিবির করার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।
এরআগে আমির হামজা ঢাকা মেডিকেলে চাঁদা চেয়ে এক ওষুধ ব্যবসায়ীকে মারধরের কারণে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগ থেকে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল। এর কিছুদিন পর ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাকে হল থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। পরে ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের ছত্রছায়ায় আবার হলে উঠে।
এদিকে শিবির সংশ্লিস্টতা প্রমাণ করতে পারেনি বলে গণমাধ্যম কর্মীদের কাঝে স্বীকার করেন মারধরকারী জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে মুখ ফসকে বলে ফেলেন, শালাদের অনেক মেরেছি। কিন্তু একটাও স্বীকার করেনি। একজনের নামও বলেনি। নির্যাতনকারী আনোয়ার হোসেন ও আমির হামজা দুজনেই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী।

এ বিষয়ে ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, আমরা হল প্রশাসনের মাধ্যমে এ বিষয়ে অবহিত হয়েছি। ইতোমধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যদি ওই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী ও শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়, তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর যদি কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া না যায় তাহলে তাদেরকে কোনো ধরনের হয়রানি করা যাবে না, এটা আমরা বলে দিয়েছি। হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চলমান থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগের নেতারা কিভাবে শিক্ষার্থীদের মারধর করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটাও তো শৃঙ্খলা ভঙ্গ। যে বা যারাই শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, গতকাল রাত আনুমানিক তিনটার দিকে হলে চার শিক্ষার্থীকে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।

শিবির সন্দেহে বা ভিন্নমতের শিক্ষার্থীদের মারধরের অধিকার ছাত্রলীগের নেই বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি (সহ-সভাপতি) নুরুল হক নুর বলেন। নুরুল হক নুর বলেন, ‘ছাত্রলীগ যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করেছে ভিন্ন মতের শিক্ষার্থীদের শিবির সন্দেহে মারার। ছাত্রলীগকে এই অধিকার কে দিয়েছে? তাদের কোন অধিকার নেই। দেশটি আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের নয়।’ তিনি বলেন, ‘ভিপির উপর হামলা করে বলে জামাত-শিবির। এখন তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিলে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমন করার জন্য আমরাও আহবান জানাবো। নিরব থাকলে চলবেনা।’ নিরব থাকলে ছাত্রলীগের হাতে মার খেতেই থাকবে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করে নুর বলেন, ‘ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের উপরে নির্যাতন, নিপীড়ন চালিয়ে একক আধিপত্য বিস্তার করতে চায়।’
এদি‌কে, এ ঘটনার প্রতিবাদ‌ে ক্যাম্পা‌সে বি‌ক্ষো‌ভের ডাক দি‌য়ে‌ছে সন্ত্রস‌বি‌রোধী ছাত্র ঐক্য। বি‌কেল ৩টায় এ বি‌ক্ষোভ কর‌বেন তারা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
nurul alam ২২ জানুয়ারি, ২০২০, ৩:৫৩ পিএম says : 1
ছাত্রলীগ নামের এ নর পিশাচদের পতন কী আমরা দেখবনা ? ওরা এত নৃশংস কেন ? ওরা এত আক্রমণাত্মক কেন ? ওদের রাজনৈতিক দর্শনে কোন ভেজাল আছে মনে হয় ।
Total Reply(0)
nurul alam ২২ জানুয়ারি, ২০২০, ৩:৫৮ পিএম says : 1
আবরারের কান্না এখনো আমাদের কানে ভেসে আসছে । জাতি কখনো সে কথা ভুলবেনা । সেটা ভুলবার নয় । হৃদয় ফেটে চৌচির হয়ে যায় সে কথা ভাবলে । হায়রে আবরার ! আমাদের আবরার ! নতুন প্রজন্মকে বলবো আবরারের হত্যাকারীদের চরিত্রের কথা । তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ের কথা ।
Total Reply(0)
habib ২২ জানুয়ারি, ২০২০, ৪:১৯ পিএম says : 1
Eder hate Bangladesh nirapod nai. era sobai indian agenda basto bayon korche...
Total Reply(0)
Adel ২২ জানুয়ারি, ২০২০, ৫:৫০ পিএম says : 0
Is this a residence of an institution of learning like the University of Dhaka? আওয়ামী লীগ এমন বেয়াড়া প্রজন্ম উপহার করেছে জাতিকে। Hisham ibn Hakim reported: He passed by some people in Syria who had been forced to stand in the sun and had oil poured over their heads. Hisham said, “What is this?” It was said, “They are being punished for not paying taxes.” Hisham said, “I heard the Messenger of Allah, peace and blessings be upon him, say: Verily, Allah will torture those who tortured people in this world.”
Total Reply(0)
md Shohidul Islam ২২ জানুয়ারি, ২০২০, ৭:০৬ পিএম says : 1
এই দুষ্কৃতকারীদের ক্ষমতা সরকারের চেয়েও বেশি যে সরকার ই ক্ষমতায় আসুক এদেরকে ছাড়া দেশ চালাতে পারবে না। তাই এরা সবসময় ই আইনের উর্ধ্বে।
Total Reply(0)
Md Musleh Uddin Sumon ২২ জানুয়ারি, ২০২০, ৭:১৪ পিএম says : 0
Adar Allah Bichar karuk
Total Reply(0)
Md.Shahporan Shah ২২ জানুয়ারি, ২০২০, ৮:৫৩ পিএম says : 0
দুঃখ কারার কিছু নেই কারণ আমরা ১৮ কোটি মানুষ দর্শক হা করে শুধু দেকতে থাকি
Total Reply(0)
চৌধুরী হাটহাজারী ২২ জানুয়ারি, ২০২০, ১০:২৮ পিএম says : 0
আওয়ামী লীগ ঠিক আছে। কিন্তূ এই প্রভোস্ট সবচেয়ে বড় রাজাকার আমার মনে হয়।সেই মানুষটির বিরুদ্ধে যত তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত হবে আমার মনে হয় ভাল হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন