বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

বিচারের দাবিতে নির্যাতিত শিক্ষার্থীর সারারাত অবস্থান

ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি শিক্ষার্থীদের

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০২০, ৯:৫২ এএম | আপডেট : ২:৪৭ পিএম, ২৩ জানুয়ারি, ২০২০

শিবির সন্দেহে ছাত্রলীগের হাতে নির্মমভাবে মারধরের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী মো. মুকিম চৌধুরী বিচারের দাবিতে অবস্থান নিয়েছেন। বুধবার শাহবাগ থানা থেকে ছাড়া পেয়ে বিকেল পাঁচটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান শুরু করেন তিনি। এদিন সারারাত তিনি অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
এদিকে নির্যাতনের বিচার দাবিতে অবস্থানরত শিক্ষার্থীর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছি বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। রাতেই রাজুতে এই শিক্ষার্থীকে দেখতে আসেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজিম উদ্দিন খান ও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রভোস্ট। ওই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলছেন আমার উপর যে নির্যাতন হয়েছে এর বিচারের দাবিতে এখানে বসেছি। কিছু বানোয়াট স্ক্রিনশট দিয়ে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান এ শিক্ষার্থী।
এর আগে বুধবার বিকেল তিনটার দিকে ‘শিবির সন্দেহে’ মারধরের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যোলয়ে (ঢাবি) চার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে পুলিশ। দুপুরে ওই শিক্ষার্থীদের ছাড়াতে থানায় যান ডাকসু ভিপি নুরুল হক। থানা থেকে ছাড়া পেয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রলীগের নির্যাতনের নির্মম বর্ণনা দেন। তিনি জানান, তাকে হাতুড়ি, তার ও স্যান্ডেল দিয়ে ছত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মারধর করেছে।
বুধবার বিকেল পাঁচটায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সংহতি জানাতে এসেছিলেন সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা মঈন হোসেন রাজুর মেজ খালা। সংহতি জানাতে রাজুতে ছুটে আসেন রাজু ভাস্কর্যের নাম যার নামে দেয়া সেই রাজুর খালা আম্বিয়া আহমেদ। আম্বিয়া বর্তমানে লন্ডন প্রবাসী। কয়েকদিন হল তিনি ঢাকায় এসেছেন। গতকাল রাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার খবর শুনে আজ ছুটে আসেন রাজু ভাস্কর্যে।
এদিকে অনশনরত শিক্ষার্থীকে হলে ফিরিয়ে নিতে এসে টোপের মুখে পড়েছেন হল শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন। প্রভোস্টকে নির্যাতিত শিক্ষার্থী বলেন, পুলিশ কেন আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল, হলের কোন আবাসিক কেন নিল না? তার বক্তব্য, ক্যাম্পাসে আমার নিরাপত্তা নেই, হলে যাব কীভাবে?
এ সময় হল প্রোভোস্ট ওই ছাত্রকে হলে ফেরা কিংবা বাসায় যাওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, পরবর্তীতে কোন ধরনের সমস্যা হলে তার দায়-দায়িত্ব আমি নেব। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদিও সুষ্ঠ বিচার না হওয়া পর্যন্ত হলে ফিরতে অস্বীকৃতি জানান ওই ছাত্র। এসময় গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্ন উত্তরে মারধরের ঘটনাকে ‘হইচই’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রভোস্ট। তিনি বলেন, হলের আবাসিক শিক্ষকদের বক্তব্য আপনাদের বক্তব্যের বিপরীত। সেখানে গন্ডগোল বা হইচই হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। পরে তা সমাধানের জন্য আবাসিক শিক্ষক সেখানে যান। এছাড়া ওই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, গতকালের ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের জন্য আবাসিক শিক্ষক ড. মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সমালোচনার মুখে অপরাধের মাত্রা অনু্যায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছেনছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। গণমাধ্যমে তিনি বলেন, শিবির সন্দেহে মারা হোক কিংবা যেভাবেই মারা হোক ছাত্রলীগ কারো গায়ে হাত তোলাকে সমর্থন করে না। এ ঘটনায় কে বা কারা জড়িত আছে তা জানতে আমরা সবাই নিয়ে বসবো। আমাদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জড়িতদের অপরাধের মাত্রার উপর ভিত্তি করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে নির্যাতীত শিক্ষার্থীর সাথে সংহতি জানিয়ে রাজুতে অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার সকালে বিচারের দাবিতে তাদের সেখানে অবস্থান নিতে দেখা যায়। অন্যদিকে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার আগ পর্যন্ত এসব ঘটনার সমাধান হবে না বলে দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। আহসান শুভ নামে মাস্টার্সের এক শিক্ষার্থীর যুক্তি, ছাত্রলীগ চারজন ছাত্রকে রাতভর নির্যাতন করেছে কারন হল তাদের জমিদারী! তাদের যখন যাকে খুশি মারার, নির্যাতন করার অধিকার তারা রাখে। আমাদের পা চাটা ভিসি, প্রক্টর আর দলদাস প্রভোস্ট তাদের চামড়ার সাথে ছাত্রদের জীবনও বন্ধক দিছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রের জীবন কাটে সকালে মধুতে ছাত্রলীগের প্রোগাম করে, আর প্রোগাম না করলে রাতে গেস্টরুমে নির্যাতনের ভয়ে। আর দিন রাত ভয়ে থাকা লাগে যে পান থেকে চুন খসলেই নির্যাতনের স্বীকার হতে হবে। বস্তির মত পরিবেশে হলে এতটুকু থাকার জায়গার জন্য বৈধ ছাত্রদের মেরুদণ্ড বন্ধক দেওয়া লাগে আর ছাত্রলীগের পোস্ট থাকলেই সারাজীবন হলে থাকা যায়। আর ভিসি বলেন, ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্ররা যেন হলে না ওঠে! আগে মিডিয়াতে আসত ঢাবি কেন সেরা ৫০০ র‍্যাংকিং এ নেই আর এখন আসে কেন ১০০০ এর ভিতর ঢাবির নাম পাওয়া যায় না। আর কিছুদিন ছাত্রলীগের জমিদারি থাকলে হয়তো দশ হাজারের ভিতরেও ঢাবির নাম থাকবে না! ছাত্রলীগ কে ঢাবি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করুন, দেখবেন আমার বিশ্ববিদ্যালয় আবার তার পুরনো গৌরব ফিরে পাবে। কারন এই জানোয়াররা যে ক্যাম্পাসে থাকে সেই ক্যাম্পাস আর যাই হোক বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে না। এই ভিসি, প্রক্টর কে শিক্ষক আর এই ছাত্রলীগ গুলো কে সারাজীবন নিজের সহপাঠী হিসেবে পরিচয় দিতে হবে এর থেকে লজ্জার আর মনে হয় না কিছু আছে।

আবিদুল ইসলাম খান নামে মাস্টার্সের আরেক শিক্ষার্থী ফেসবুক স্টাটাসে লিখেন, ওহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ!অন্যায়ের বিচার কার কাছে চাচ্ছো?রাতভর নির্যাতনের পর যে প্রক্টোরিয়াল টিম সন্তানদের হাসপাতালে না নিয়ে থানায় সোপর্দ করে, তাদের কাছে বিচার চাও!?? এই ভিসি, প্রক্টরও নির্যাতনকারীদের অংশ! সুতরাং বিচার নয়,অথর্বদের পদত্যাগ চাই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Md Shahidul Islam ২৩ জানুয়ারি, ২০২০, ১০:৫৫ এএম says : 0
বিচার নয়,অথর্বদের পদত্যাগ চাই
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন