শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

মূল আসামি গ্রেফতার

সারওয়ার আলী হত্যাচেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

প্রতিশোধ নিতেই বাসায় ডাকাতির চেষ্টা পিবিআই
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলীকে হত্যাচেষ্টা মামলার মূল আসামি শেখ নাজমুল ইসলামকে (৩০) গ্রেফতার করেছে পিবিআই সদস্যরা। তবে খারাপ আচরনের কারণে ডা. সারওয়ার আলীর বাসায় ডাকাতির চেষ্টা ও হামলা করা হয়েছিল বলে জানান পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।

গতকাল সকালে রাজধানীর পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সে সংবাদ সম্মেলন করে এমন তথ্য জানানো হয়। পিবিআই প্রধান জানান, গত ৫ জানুয়ারি রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে সারওয়ার আলীকে হত্যার উদ্দেশে দুই দুষ্কৃতিকারী তার উত্তরার বাসভবনে ঢোকেন। এ ঘটনায় ৬ জানুয়ারি হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দু’জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় চার-পাঁচজনকে আসামি করে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের করেন সারওয়ার আলী। পরে ১৩ জানুয়ারি মো. ফরহাদ নামের এক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে ঘটনার সঙ্গে সাতজন সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।

তবে এ ঘটনার মূল হোতা সারওয়ার আলীর স্ত্রীর সাবেক গাড়িচালক নাজমুল দাবি করে পিবিআই ওই কর্মকর্তা জানান, সারওয়ার আলী মামলার ঘটনায় মোট পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে নাজমুল ইসলাম প্রধান ছিল। বাকিরা হলেন- শেখ রনি (২৫), মো. মনির হোসেন (২০), মো. ফয়সাল কবির (২৬) ও মো. ফরহাদ (১৮)। এদের মধ্যে ফরহাদকে গত ১৩ জানুয়ারি গ্রেফতার করা হয়। আর বাকিদের গত বুধবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়। তবে ঘটনায় জড়িত আল আমিন মল্লিক ও নূর মোহাম্মদ নামে দু’জন এখনো পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।

বনজ কুমার মজুমদার আরো জানান, নাজমুলের দাবি, গরিব হওয়ার কারণে সারওয়ার আলীর স্ত্রী তার সঙ্গে সঠিক ব্যবহা করেননি। যে কারণে চাকরি ছেড়ে দিয়ে খারাপ আচরণের প্রতিশোধ নিতে পরিকল্পিতভাবে সারওয়ার আলী ও তার মেয়ের বাসায় হামলা চালায় তারা।
পিবিআই প্রধান বলেন, নাজমুল হিন্দি সিনেমার ভক্ত। তিনি ভাবতেন, গরিব হওয়া অপরাধ না। গরিব হওয়ার কারণে সারওয়ার আলীর স্ত্রীর কাছে তিনি সঠিক ব্যবহার পাননি না। এ কারণে চাকরি ছেড়ে দেন এবং পরিকল্পনা করেন, এর একটি প্রতিবাদ হওয়া দরকার। তাই সারওয়ার আলীর পরিবারকে উচিত শিক্ষা দেয়া ও ভয় দেখিয়ে হত্যা ডাকাতির পরিকল্পনা করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগী হিসেবে চাচাতো ভাই রনিকে রাজি করান তিনি এবং ভগ্নিপতি আসামি আল-আমিন, নুর মোহাম্মদ ও ফয়সালকে ডাকাতির কাজে নিয়োগ করেন। এ কারণে রাজধানীর আজমপুর লেবার মার্কেট হতে মনির ও ফরহাদকে দৈনিক ৫০০ টাকা ভিত্তিতে ডাকাতির কাজে নিয়োগ করেন নাজমুল।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, কেউ যেন চিনতে না পারে সেজন্য নাজমুল ৩ মাস ধরে দাড়ি-গোঁফ না কেটে বড় করেন। গত ৫ জানুয়ারি বিকেলে আশকোনা এলাকার হোটেল রোজ ভ্যালির ৩০৩ নম্বর কক্ষে ৭ ডাকাতের সঙ্গে চূড়ান্ত পরিকল্পনা করেন নাজমুল। বাসার পরিবেশ, কক্ষ, পার্কিং প্লেস সম্পর্কে সকলকে অবগত করেন এবং ডাকাতির সময় কার কী ভূমিকা হবে তা বুঝিয়ে দেন। সরওয়ার আলীর বাড়িতে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটের অংশ হিসেবে ডাকাতির পরিকল্পনা হলেও ক্ষোভের বিষয়টি গোপন করেন নাজমুল। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় হোটেল থেকে নাজমুল প্রথমে একা বেরিয়ে যান।

শুধু তাই নয়, নাজমুল একটি ব্যাগে ৭টি চাপাতি ও ৫টি সুইচ গিয়ার ছুরি নিয়ে ঘটনাস্থল এলাকায় এসে রনির হাতে ছুরিগুলো দেন। রনি ঘটনাস্থলে থাকা আসামিদেরকে ছুরিগুলো বিতরণ করেন। নাজমুল রাত ৯টায় পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪ প্যাকেট বিরিয়ানি নিয়ে বাসায় প্রবেশ করে দারোয়ান হাসানকে দেন এবং কৌশলে ঘুমের ঔষধ খাওয়ান। পরে চাপাতিসহ ব্যাগটি গ্যারেজের পাশে রেখে দেন। নাজমুল ও ফয়সাল ২য় তলায় তাদের সেন্ডেল খুলে রেখে ৩য় তলায় গিয়ে সারওয়ার আলীর মেয়ে ড. সায়মা আলীর বাসায় নক করেন।

তাদের অনবরত চিৎকার চেচামেচি শুনে ২য় তলার ভাড়াটিয়া মেজর (অব.) সাহাবুদ্দিন চাকলাদার ও তার ছেলে মোবাশ্বের চাকলাদার ৪র্থ তলায় আসেন। দারোয়ান ঘুমিয়ে না পড়ায় নাজমুলের বাইরে অবস্থানরত সহযোগীরা ফোন পেয়েও ভেতরে ঢুকতে না পারায় নাজমুল হতাশ হয়ে ভয় পেয়ে দ্রুত পালিয়ে যান। পরে অন্যান্যরাও দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরবর্তীতে পুলিশ এসে ঘটনা নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং আসামিদের ফেলে যাওয়া যাবতীয় আলামত উদ্ধার করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন