বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ভারতের সিএএ প্রভাবিত করছে প্রতিবেশীদেরও

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

ভারতের পার্লামেন্টে গত বছর যে সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট বা সিএএ পাস হয়েছে, সেটার মধ্যে যে সব ত্রæটি রয়েছে, তার একটি হলো নির্যাতিত বিভিন্ন জনগোষ্ঠির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা। আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই এ বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন যে, আফগানিস্তানে শুধু শিখ বা হিন্দুরা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার শিকার হচ্ছে, বরং মুসলিমরা নিজেরাও এর শিকার হচ্ছে। এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি ভারতের কিছু নেতার বক্তব্যের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছেন, যারা বলেছে যে আফগানিস্তানে হিন্দুরা নির্যাতিত হচ্ছে, এর মাধ্যমে এমন ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে, অন্যরা সেখানে মোটেই নির্যাতিত হচ্ছে না। আফগানিস্তানের এই সার্বিক চিত্রটি দেখতে ব্যার্থ হওয়ার অর্থ হলো আপনি খুবই সরল অথবা আপনি রাজনৈতিক খেলা খেলছেন।

কারজাইয়ের মন্তব্যটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ তিনি ভারতের একটি আইনের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যেখানে মানবাধিকারের উচ্চ ভাষা ব্যবহার করে নির্লজ্জভাবে বৈষম্য করা হয়েছে। তাছাড়া সিএএ কৌশলগত ও ক‚টনৈতিক বিবেচনা থেকেও খুব সামান্যই অর্থবহ। কোন দেশের আজকের সরকারের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করার চেয়ে ওই দেশের মানুষের হৃদয় মন জয় করাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সরকার আর তাদের নেতারা আসেন আবার চলে যান, কিন্তু জনগণ চলে যায় না। আফগানিস্তানের জনগণের মধ্যে ভারতের ব্যাপারে যে সুধারণা ছিল, সিএএ সেটা শেষ করে দিয়েছে। আফগান ইস্যুতে বহু দশক ধরে পাকিস্তানের হস্তক্ষেপের যে ভয়াবহ রেকর্ড রয়েছে, সে কারণে স্বাভাবিকভাবেই ভারতের দিকে আকৃষ্ট হয়েছে বহু আফগান। সিএএ সেই সুধারণাকে গুড়িয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশেও একই ধারার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এটা একটা মারাত্মক ভুল, কারণ ঐতিহাসিকভাবে এই দেশটির সাথে ভারতের সঙ্ঘাতহীন সম্পর্ক ছিল, যে দেশটি ১৯৭১ সালের আগে ছিল পূর্ব পাকিস্তান। অনেক বছর ধরেই বাংলাদেশের কট্টর জাতীয়তাবাদীরা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছে যে, সরকার ভারতের দাবির কাছে সবসময় আত্মসমর্পণ করছে। সীমান্তে বেড়া নির্মাণ হোক, সুন্দরবনের কাছে রামপালে বিতর্কিত কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের ব্যাপারে যৌথ তদন্তের ক্ষেত্রে হোক, উলফার তৎপরতা দমনে নয়াদিল্লীকে সহযোগিতার ক্ষেত্রেই হোক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশ সবসময় ভারতের স্বার্থের অনুক‚লেই কাজ করেছে। কিন্তু, ভারত প্রায় তাদের পূর্বের প্রতিবেশী দেশটিকে গ্রাহক রাষ্ট্র বিবেচনা করে এসেছে এবং সে কারণেই ঢাকা যখনই নিজেদের স্বাধীন অবস্থান ব্যক্ত করেছে, তখনই বিস্মিত হয়েছে নয়াদিল্লী। কিন্তু সেই সাথে ৪৯ বছরের একটি দেশকে বোঝার ক্ষেত্রেও অযোগ্যতার পরিচিয় দিয়েছে দিল্লী।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যারা কোন ভ‚মিকা রাখেনি, তাদের হয়তো এই দেশটির ব্যাপারে ঐতিহাসিক বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকতে পারে। আজ বহু রাজনীতিবিদ মনে হচ্ছে ইসলামকি একচোখা দৃষ্টিতে দেখেন এবং বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের বিভ্রান্তিকর ধারণা রয়েছে এবং দেশটিকে তারা অনেকটা পাকিস্তানের মতো মনে করেন। বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদ পাকিস্তানের জাতীয়তাবাদ থেকে আলাদা। পাকিস্তানের মধ্যে বিভিন্ন ভাষা ও জাতের মানুষ রয়েছে এবং তারা একটি বিশ্বাস ও একটি ভাষা উর্দুর ভিত্তিতে একটা অভিন্ন পরিচয় গড়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু দেশটির পূর্বাঞ্চল এই এককেন্দ্রিক সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়াটা মেনে নেয়নি এবং তারা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে। তারা শুধু উর্দুকে প্রত্যাখ্যান করে বাংলাকেই গ্রহণ করেনি, বরং মুক্তিযুদ্ধকালে তাদের অন্যতম সেøাগান ছিল একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতি গঠন করা। দেশটির মূল সংবিধানে এই মূল্যবোধগুলো লেখা আছে।

বাংলাদেশ সাম্প্রতিককালে ভারতের সাথে বেশ কিছু উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক বাতিল করেছে। ঢাকার মধ্যে একটা উদ্বেগ রয়েছে বলে মনে হচ্ছে যে, ভারত যদি বহু মানুষকে রাষ্ট্রহীন ঘোষণা করে এবং তাদেরকে বহিষ্কারের চেষ্টা করে, তাহলে সেটা বাংলাদেশের উপর প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে তারা যদি বাংলাভাষী এবং মুসলিম হয়, তাহলে ধরেই নেয়া হবে যে তারা বাংলাদেশী। বাংলাদেশ যদি তাদের গ্রহণ করতে অস্বীকার করে তাহলে ভারত কি করবে? তাদেরকে বন্দিশিবিরে আটক রাখবে? যেহেতু একটা ত্রæটিপূর্ণ পন্থায় জাতীয়তা যাচাই করা হচ্ছে, তাহলে পুরো ভারতে সেটা করতে গেলে পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে? সূত্র : লাইভ মিন্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন