মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

এ রায় বিচারের প্রথম স্বাদ

আইসিজে’র সিদ্ধান্তে রোহিঙ্গাদের সন্তুষ্টি

শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার থেকে | প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) রায়কে প্রাথমিক বিজয় মনে করছেন রোহিঙ্গারা। তারা মনে করছেন এ রায় বিচারের প্রথম স্বাদ। তাদের আশা এবার দেশ ফেরার একটা ব্যবস্থা হবে। আসবে নাগরিকত্ব ও মর্যাদা নিয়ে নিজ দেশে বাঁচার সম্ভাবনা। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা গণহত্যাসহ চারটি নির্দেশনা দিয়েছেন হেগের আন্তর্জাতিক আদালত।

সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া প্রায় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। পাশাপাশি এই আদেশের দ্রুত বাস্তবায়ন চান রোহিঙ্গা নেতারা। সেই সাথে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও জোরালোভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা বলেছেন, মিয়ানমার সরকারের তদন্ত কমিটি প্রমাণ না পাওয়ার কথা বললেও ভুক্তভোগী রোহিঙ্গাদের কাছে জোনোসাইডের যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। যা ইতিমধ্যে হেগের আদালতে উত্থাপন করা হয়েছে। এ আদেশের পাশাপাশি নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়া ও দ্রুত দেশে ফেরার আশা করছেন রোহিঙ্গারা। রায় ঘোষণার দিন উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে দোয়া ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। এতে তারা মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায়, গাম্বিয়া ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে বড় কোন সমাবেশের আয়োজনে বাধা থাকায় ক্যাম্পের বিভিন্ন মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রোহিঙ্গারা এই দোয়ার আয়োজন করে। গতকালও বাদ জুমা তারা দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। বিশেষ করে বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং গাম্বিয়াসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তারা কৃতজ্ঞতা জানান।
রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম এ প্রসঙ্গে বলেন, আইসিজের আদেশে রোহিঙ্গাদের বিজয় হয়েছে। এরকম একটি বিজয়ের আশায় ছিল বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার যথেষ্ট প্রমাণ আন্তর্জাতিক আদালতে উত্থাপন করা হয়েছে। মিয়ানমারের সেনারা যুগ যুগ ধরে আমাদের ওপর জেনোসাইড চালিয়ে আসছিল। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টে তা বড় আকারে জনসম্মুখে এসেছে। তিনি বলেন আদালতের আদেশের দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চাই আমরা। পাশাপাশি নিজ দেশে ফিরতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরো সহযোগিতা কামনা করছি।

রোহিঙ্গা নেতা আসহাব উল্লাহ বলেন, গণহত্যার কোন প্রমাণ মেলেনি বলে এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে মিয়ানমারের একটি তদন্ত প্যানেল, তা সর্ম্পূণ মিথ্যা-বানোয়াট ও হঠকারিতা। ১৪০ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে আমাদের মা-বোনদের ওপর পরিচালিত নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনার কোন চিত্র উল্লেখ করা হয়নি। এ প্যানেল সরকারের কথামতো প্রতিবেদন দিয়েছে। এটা আমরা প্রত্যাখান করছি।

আসহাব উল্লাহ আরও বলেন, মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য মিয়ানমার জেনোসাইডের ঘটনা অনেক আগে থেকে ঘটিয়ে আসছিল। মিয়ানমার সরকার জেনোসাইডের ঘটনাকে ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বীকার করছে। যাতে করে সেনাবাহিনীকে রক্ষা করা যায়। এমনকি সরকার সেদেশে শুধু রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা আইন তৈরি করেছে। আইসিজের দেয়া আদেশ তাদের চক্রান্তে বাধা হয়ে দাঁড়ালো। যার জন্য খুশি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী।

রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত ও নানা নির্যাতন করার পরও থেমে নেই মিয়ানমারের অত্যাচার। মিয়ানমারে অবস্থানরত প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গার ওপর এখনো চলছে গণহত্যার উদ্দেশ্যে নির্যাতন। আইসিজের আদেশে রোহিঙ্গাদের বিজয় হয়েছে। আশা করছি সম্মান, নাগরিকত্ব ও মর্যাদা নিয়ে নিজ দেশে ফিরতে পারব। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়সহ রোহিঙ্গারা গাম্বিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞ।

উল্লেখ্য গত ১১ নভেম্বর হেগের আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে রোহিঙ্গাদের পক্ষে এই মামলা করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমার সরকারি বাহিনী মগ দস্যুরা ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে যে খুন-ধর্ষণ ও অত্যাচার-নিপীড়ন চালায় তার উদ্দেশ্য ‘গণহত্যা’ ছিল বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার শুনানির জন্য ১০ ডিসেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারিখ নির্ধারণ করা হয়। প্রথম ধাপে ১০ ডিসেম্বর শুনানি করে গাম্বিয়া। আর ১১ ডিসেম্বর শুনানি করে মিয়ানমার। গত বৃহস্পতিবার এই মামলার প্রথম ধাপের রায় ঘোষণা করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন