শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

কুড়িগ্রামে আইনজীবী পুত্রসহ দুই শিক্ষার্থীকে অপহরণ : অভিভাবকদের মাঝে আতংক

ঘটনা প্রকাশ করলে জানে মেরে ফেলবো

কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০২০, ৭:১৫ পিএম | আপডেট : ১০:০১ পিএম, ২৫ জানুয়ারি, ২০২০

কুড়িগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফকরুল ইসলামের ছেলেসহ দুই শিক্ষার্থী অপহরণের ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। গত ২১ জানুয়ারি দুপুরে ঢাকার মহাম্মদপুর এলাকা থেকে তাদেরকে অপহরণ করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। পরে তাদের অভিভাবকের কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। অপহৃত দুই শিক্ষার্থী দিবস ও ধ্রুবকে উদ্ধার করা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক সূত্র দাবী করেছে শুক্রবার তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। তবে নিরাপত্তাহীনতার কারণে তাদের অভিভাবকরা এ বিষয়ে কোন কথা বলছেন না।

অপহৃতদের পারিবারিক সূত্র জানায়, ধানমন্ডির ভি এইচ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থী তানজীব আল দিবস ও ঢাকা কলেজের ইংরেজী বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র খালিদ হাসান ধ্রæব গত ২১ জানুয়ারি দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে তাজমহল রোডের মিনার মসজিদ এলাকা থেকে অপহৃত হন। তারা দুজন সম্পর্কে মামা ভাগ্নে। একদল অপহরণকারী অস্ত্রের মুখে তাদেরকে অপহরণ করে একটি প্রাইভেট কারযোগে ঘটনাস্থল থেকে তাদেরকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাদের হাত-পা-মুখ বেঁধে গাড়ির ভেতর ফেলে রাখে। এ সময় গাড়িতে উচ্চস্বরে গান বাজানো হয়। এ নিয়ে কুড়িগ্রামে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়। ঘটনার সর্বশেষ অবস্থা জানতে উদ্বিগ্ন বিভিন্ন পেশার মানুষ খোঁজ নিতে শুরু করে। একই সাথে ঢাকায় পড়াশোনারত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। দিবসের অপহরণের ঘটনা জানার পর থেকে তাঁর মা বারবার মূর্চ্ছা যাচ্ছে। কুড়িগ্রামের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকট আমজাদ হোসেন ও অ্যাডভোকেট শামসুল হক সরকার জানান, অপহরণের ঘটনা শোনার পর থেকে ঢাকায় পড়া তাদের নিজ নিজ সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে তারা শংকিত হয়ে পড়েছেন।

এ ব্যাপারে তেজগাঁও থানায় একটি জিডি করেন অপহৃতদের অভিভাবকরা (জিডি নং-১১৭৮-তারিখ ২১-০১-২০২০)। পরে শুক্রবার মহাম্মদপুর থানায় একটি মামলায় (মামলা নম্বর-৮০-তারিখ ২৪-০১-২০২০) অজ্ঞাত পরিচয় আসামীদের অপহরণে জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়।

দিবসের পারিবারিক সুত্র জানায়, অপহরণের পর অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে অপরহরণকারীরা। কয়েকটি টেলিটক নম্বরে দিবসের বাবা অ্যাডভোকেট ফকরুল ইসলামের কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করা হয়। এছাড়া ‘থানা পুলিশ করলে কিংবা পত্রিকায় প্রকাশ করলে মেরে ফেলা হবে’ মর্মে হুমকিও দেয়া হয় কয়েক দফায়। সে কারণে পুরো পরিবার এখনও আতংকগ্রস্থ হয়ে আছেন। তাই দিবসের সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে তাঁর পরিবার পরিস্কার কোন ধারণা না দিলেও একাধিক সুত্র জানায়, শুক্রবার গভীর রাতে অপহৃতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবশ্য পুলিশ এ ব্যাপারে কোন আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

কুড়িগ্রাম জজকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহীন জানান, রংপুর মিঠাপুকুর এলাকার তার মক্কেল জনৈক দুলু (০১৩০৯৪১১৫৪৩) মোবাইলে জানান, ফকরুল স্যারের পূত্র দিবসকে অপহরণ করেছে মশিউর রহমান পাপ্পুর গ্রæপ। পাপ্পু অপহরণ, প্রতারণাসহ নানা অপকর্মের গড ফাদার। তার নামে কয়েকটি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে কুড়িগ্রাম আদালতে প্রতারণার অভিযোগে দুটি মামলায় গ্রেপ্তারী পরোয়ানা রয়েছে। তার পিতার নাম মতিউর রহমান মন্ডল। গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সাঘাটায়। আর ঢাকায় ১/৪ বøক-এ, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুরে। কথিত দুলু আরো দাবী করেন পাপ্পুর লোকজন ঢাকায় তাকেও অপহরণ করে। ৩৩ দিন অবরুদ্ধ থাকবার পর গত ২০ জানুয়ারি কৌশলে পালিয়ে আসেন। জিম্মি থাকা অবস্থায় পাপ্পুসহ অন্যদের আলোচনা করতে শোনেন পরবর্তী টার্গেট অ্যাডভোকেট ফকরুল ইসলামের পূত্র দিবস।

কুড়িগ্রাম জজকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সেতু জানান, মশিউর রহমান পাপ্পু ডাকাতি, প্রতারণাসহ ৪টি মামলায় কুড়িগ্রামে জেলহাজতে ছিলেন। সিনিয়র অ্যাডভোকেট ফকরুল ইসলাম তাকে জামিন করান। এখনও কুড়িগ্রাম আদালতে জিআর-৩১০/১৮, সিআর-২১২/১৯, সিআর-২০৫/১৯ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এসব মামলায় মশিউরসহ তার বাবা পলাতক আসামী।

ঢাকায় কর্মরত আইনজীবী অ্যাডভোকেট তানজীমুল ইসলাম প্যারিস জানান, দিবস অপহ্নত হওয়ার দিন সকাল ১০টার দিকে কুড়িগ্রামের উলিপুর এলাকার জনৈক নিশান (০১৭১৭৫৪৫৪৬৮) ফোন করে জানান, দিবস যেন আজ বাড়ি থেকে বের না হয়। এরপর থেকে নিশানেরও ফোন বন্ধ রয়েছে।

এ ব্যাপারে অ্যাডভোকেট ফকরুল ইসলাম জানান, এখনও অপহৃতদের উদ্ধার করার কোন খবর তারা পাননি। তিনি জানান, মামলা হয়েছে। পুলিশ এ ব্যাপারে তদন্ত করছে।

এ ব্যাপারে মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (০১৭১৩৩৭৩১৮২) মোবাইলে অপহরণ মামলার সত্যতার কথা স্বীকার করে বলেন দিবস ও দ্রুবকে পুলিশ উদ্ধারের সব ধরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন