বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জনসম্পৃক্ত প্রকল্পেই সুফল

‘স্মার্ট সিটি চট্টগ্রাম’ গোলটেবিলে বিশিষ্টজনেরা

শফিউল আলম ও রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

জনগণকে সম্পৃক্ত রেখেই উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই প্রকল্প থেকে জনগণ সুফল পাবে। উন্নয়নের ধারণা শুধুমাত্র প্রকৌশলী, সিভিল সোসাইটির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে জনগণের অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। আগামী ২০ কিংবা ৫০ বছরের চাহিদা, জনপ্রত্যাশা, আশা-আকাক্সক্ষার বিষয়গুলো পূর্ব-যাচাই না করেই প্রকল্পের পর প্রকল্প অথবা প্রকল্প-নির্ভর উন্নয়ন দ্বারা দেশ অগ্রসর হবে না। বন্দর দিয়েই চট্টগ্রামের পরিচয়। প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ এ নগরী। চট্টগ্রামের উন্নয়ন মানে দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন। সমগ্র দেশে চলমান উন্নয়নের প্রকল্প-মেগা প্রকল্পের ৩৫ শতাংশই চট্টগ্রাম অঞ্চলে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কয়েক লাখ কোটি টাকার এসব প্রকল্প সম্পন্ন হলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু ‘হাব’ হবে চট্টগ্রাম। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, শিল্পায়ন এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে চট্টগ্রাম কতদূর প্রস্তুত? এ লক্ষ্যে স্মার্ট সিটি হিসেবে চট্টগ্রামের যাত্রা সূচনা করতে হবে। এরজন্য সরকারি-বেসরকারি সকল পক্ষ বা অংশীজনদের সমন্বয় প্রয়োজন। সমন্বয়ের অভাবেই চট্টগ্রামের অপরিকল্পিত উন্নয়ন হচ্ছে। এতে করে সাগর, নদ-নদী, পাহাড় টিলা, বন-জঙ্গল, হ্রদ, খাল-ছরাসহ পরিবেশ প্রকৃতি ধ্বংসলীলা চলছে। চোখ-কান-নাক কেটে ফেলে তো স্মার্ট সিটি হয়না!

গতকাল (শনিবার) বন্দরনগরীর আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বঙ্গবন্ধু হলে অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল আলোচনায় বিশিষ্টজনেরা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন। ‘স্মার্ট সিটি চট্টগ্রাম’ শীর্ষক এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডস্ট্রি। আলোচনায় অংশ নেন সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক, নগর পরিকল্পনাবিদ, আইনজীবী, ব্যবসায়ী-শিল্পতিবৃন্দ। আলোচকগণ বলেন, জনআকাক্সক্ষাকে বাদ দিয়ে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। উন্নয়ন প্রকল্প হতে হবে জনস্বার্থে এবং পরিবেশ বান্ধব।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনার দূরদর্শী এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আজ তিনি বিশ্বমানের নেতৃত্বের আসনে আসীন। সরকারে অনেক কিছু নিয়ে কথা আছে, তবে প্রধানমন্ত্রীর ডায়নামিক লিডারশিপ নিয়ে কারো কোন কথা নেই। তিনি বলেন, উন্নয়ন কাজে জনদুর্ভোগ কমাতে সংশ্লিষ্ট সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় জরুরি। তবে বাস্তব কারণে তা হয়ে উঠে না। দেখা যায় বাছ-বিচার ছাড়াই অনেকে প্রকল্প নিয়ে আসছেন। মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের মতো দক্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অভাবও রয়েছে। জনপ্রতিনিধিরা এসব বিষয় তদারক করলে উন্নয়নে জন আঙ্খাকার প্রতিফলন ঘটবে বলেও জানান মন্ত্রী। তাজুল ইসলাম বলেন, সরকার গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানায়। চট্টগ্রামের উন্নয়নে সরকার আন্তরিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের গুরুত্ব অতীতেও ছিল ভবিষ্যতেও থাকবে। উপযুক্ত সমীক্ষা করেই চট্টগ্রামের সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। সবকিছু স্মার্ট হওয়ার জন্য একযোগে কাজ করলেই চট্টগ্রামকে স্মার্ট সিটিতে উন্নীত করা সম্ভব। জাতীয় স্বার্থে চট্টগ্রামের উন্নয়ন দরকার। দীর্ঘ চার বছরেও চট্টগ্রাম নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পোর্ট কানেকটিং রোড ও আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের মেরামত কাজ শেষ হয়নি, অগ্রগতিও তেমন নেই, এতে আমি সন্তুষ্ট নই। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, মরহুম মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের রাস্তাঘাট, ফুটপাতসহ অবকাঠামো উন্নয়নে বলিষ্ঠ ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি বলেন, এ গোলটেবিল আলোচনায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব এসেছে। চট্টগ্রামসহ দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে এসব প্রস্তাব নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে তুলে ধরা হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীকে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ কিভাবে মোকাবেলা করা যায় তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে কিভাবে জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে পারে তা দেখতে হবে। এটি নিশ্চিত করা গেলে মেয়র যেই হোক না কেন জনগণ সেবা পাবে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয় ছাড়া টেকসই এবং অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন সম্ভব নয়।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য চিটাগাং চেম্বারের সাবেক সভাপতি এম এ লতিফ বলেন, অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী কর্ণফুলী পৃথিবীর মধ্যে একটি বিরল নদী। দেশের সাড়ে ৭শ’ নদীর মধ্যে কর্ণফুলীর কোন বিকল্প নেই। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় বর্জ্য আর দখলে কর্ণফুলী বিরান হতে চলেছে। কর্ণফুলীকে বাঁচানো না গেলে দেশের অর্থনীতি বাঁচবে না। চট্টগ্রাম মহানগরীতে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হয়েছে জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা না করে। নগরীতে আমরা তিনজন এমপি কারো সাথে উন্নয়ন কাজ নিয়ে আলোচনারও গরজ মনে করে না। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এসব প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট না হওয়ায় জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, নাগরিকদের ন্যুনতম নাগরিক সুবিধা নেই। অথচ ট্যাক্স আদায়ের জন্য জনগণকে উল্টো হয়রানি করছে। দুঃখ লাগে সিটির নির্বাচিত কাউন্সিলরগণও এমপিদের সাথে উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেন না। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের আমলাতান্ত্রিক মন-মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। আর তা না হলে উন্নয়নের সুফল জনগণ পাবে না। মরহুম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ সহজে কথা বলতে পারতেন। তার বাড়ি ছিল সবার জন্য সরাইখানা। তিনি বলেন, চট্টগ্রামকে পরিকল্পিত স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে হলে আগে ন্যুনতম নাগরিক সুযোগ সুবিধাগুলো নিশ্চিত করতে হবে।

উন্নয়নের ধারণায় নাগরিকমহলকে সম্পৃক্ত করতে হবে- এ এম এম বাহাউদ্দীন
দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, উন্নয়নের ধারণা শুধুমাত্র প্রকৌশলীর মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সিভিল সোসাইটি, ধর্ম-চিন্তাবিদ, কবি-সাহিত্যিক ও নাগরিকমহলকে সম্পৃক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে সোসাইটিকে ঠিক রাখতে হবে। সোসাইটি ঠিক না রেখে শুধু উন্নয়ন করলে কোন সভ্যতা টিকে থাকবে না। জাপানে ইউনিভার্সিটি গলফ কোর্স দিয়েও শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ তারা সোসাইটি হারিয়ে ফেলেছে। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের প্রাচীন ও আধুনিক নগরী। দেশের সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে চট্টগ্রাম পরিণত হবে স্মার্ট সিটিতে। তিনি বলেন, মানুষকে বাদ দিয়ে কোন উন্নয়ন টেকসই হয় না। শুধুমাত্র উন্নয়ন প্রকল্প দিয়ে উন্নত সমাজ ধরে রাখা যায় না। উন্নত বিশ্বের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জাপান এবং ইউরোপের অনেক স্মার্ট শহরে রাস্তায় নামলে এক ডলার-ইউরোতে যানবাহন মিলছে। আধুনিক নগরীতে নাগরিক সুবিধাগুলো নিশ্চিত করতে হবে।

শ্যামল দত্ত
ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ভুটানের থিম্পু নগরীতে গত ১০ বছরে কোন অপরাধ সংঘটিত হয়নি। সেখানে কোন ট্রাফিক জ্যাম নেই। রুয়ান্ডার কিগালি শহরে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ। সে শহরেও নেই কোন ট্রাফিক জ্যাম। সে তুলনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম এখনও অনেক পিছিয়ে। ঢাকায় ফ্লাইওভারে বাতি নেই। মগবাজার ফ্লাইওভারে অন্ধকারে খুনের ঘটনা ঘটেছে। কোন সিটি কর্পোরেশন ফ্লাইওভারের দায়িত্ব নিচ্ছে না। চট্টগ্রামেও একই অবস্থা। ফ্লাইওভারের উপরেও পানি, নিচেও পানি। শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে নগরীর জামালখান যেতে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। এসব উন্নয়ন কতটুকু টেকসই হবে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে জনগণের চাহিদাকে বিবেচনায় নিতে হবে। মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিকে ঘিরে টেকসই উন্নয়ন এগিয়ে নিতে হবে।

মুস্তাফিজ শফি
দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি বলেন, স্মার্ট সিটি বলতে বোঝায় বসবাসযোগ্য এবং ব্যবহারযোগ্য নগরী। তবে রাজধানী ঢাকা এবং চট্টগ্রাম এখন আর পুরোপুরি বাসযোগ্য নয়। পরিকল্পিতভাবে এ দুটি নগরীকে বাসযোগ্য নগরীতে পরিণত করতে হবে। এজন্য দরকার সমন্বিত চিন্তা এবং সিদ্ধান্ত। নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। চট্টগ্রামকে ব্যতিক্রম মহানগরী উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাহাড়-নদী-সমুদ্র এ নগরীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অথচ এসব ধ্বংস হতে চলেছে। পরিকল্পিত নগরী গড়তে মাস্টারপ্ল্যান থাকলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

ইঞ্জি. আলি আহমদ
চিটাগাং চেম্বারের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলি আহমদ বলেন, ১৬৮ বর্গমাইলের এ মহানগরীতে ৬০ লাখ মানুষের বসবাস। এটি এখন বাসযোগ্য নগরী নয়। এ নগরীতে সিটি বাস বলতে গেলে নেই। গণপরিবহন ব্যবস্থা নেই। তিনটি ছোট পোল বানাতে গিয়ে বিমানবন্দর সড়ক ১১ মাস বন্ধ ছিল। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে দুই মাসে সে কাজ শেষ হল। তাহলে বোঝা যায় আমরা চাইলেই দ্রæত প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারি। ১৩৪০ সালে শেরশাহর আমলে এ মহানগরীর গোড়াপত্তন। সেই থেকে এ মহানগরীতে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তবে তার সুফল মানুষ পাচ্ছে না।

মাহবুবুল আলম
স্বাগত বক্তব্যে চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়ন মানে দেশের উন্নয়ন। দেশের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের তিনভাগের একভাগ চট্টগ্রামে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে প্রায় লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক হাব হিসেবে উন্নীত হবে। কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল, ট্রান্স এশীয় হাইওয়ে ও রেললাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রামের সাথে মিয়ানমার এবং চীনের সংযোগ সৃষ্টি হলে চট্টগ্রামের বিনিয়োগ সম্ভাবনা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর এবং মীরসরাই ও আনোয়ারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে এখানে বিনিয়োগের যে বিশাল সম্ভাবনা তা কাজে লাগাতে হলে এখন থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। এ গোলটেবিল আলোচনাকে প্রথম এবং কোয়ালিটি আলোচনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরমাধ্যমে স্মার্ট সিটি এগিয়ে যাবে।

এম আলী আশরাফ
মূল প্রবন্ধে প্রফেসর এম আলী আশরাফ বলেন, স্মার্ট সিটি করতে হলে প্রথমে দরকার স্মার্ট নাগরিক, সেবা, পরিবেশ এবং স্মার্ট গভর্নেন্স। বাস্তবে এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম অনেক পিছিয়ে। তবে স্মার্ট সিটির এ ধারণা নিয়ে আলোচনাই হচ্ছে এক ধরনের অগ্রগতি। এ অগ্রগতি ধরে এগিয়ে গেলে স্মার্ট সিটি বাস্তবায়ন সম্ভব। বাংলাদেশ ২০২৪ সালে মধ্যম আয়ের দেশ হবে। তিনি বলেন, আঞ্চলিক রাজনীতির কারণে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর করা না গেলেও মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। চট্টগ্রাম অঞ্চলকে ঘিরে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে তার সুফল পাওয়া যাবে। তবে বেশিরভাগ উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে জনআকাক্সক্ষা এবং পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকেছে।

জুলফিকার আজিজ
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের মেগাপ্রকল্প বে-টার্মিনাল হয়ে বন্দরমুখী যানবাহন চলাচলের জন্য বিকল্প রাস্তা হচ্ছে। বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে ওই রাস্তা তৈরি হওয়ার পর ২০২২ সালে বন্দর এলাকায় আর কোন যানজট থাকবে না। তখন বিমানবন্দর থেকে ২০ মিনিটে চট্টগ্রাম নগরীতে আসা যাওয়া করা যাবে। চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে বন্দরনগরী উল্লেখ করে তিনি বলেন, বন্দরের উন্নয়ন হলে চট্টগ্রামের উন্নয়ন হবে।

ড. রফিকুল আলম
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও আইইবি চট্টগ্রামের সভাপতি প্রফেসর ড. রফিকুল আলম বলেন, নগরমুখী মানুষের ঢল বাড়ছে। নগরকেন্দ্রিক উন্নয়ন হওয়ায় কৃষি শ্রমিকরা কৃষি বাদ দিয়ে শ্রম দিতে নগরীতে চলে আসছে। এতে করে একদিকে নগরীতে মানুষের চাপ বাড়ছে, অন্যদিকে গ্রামে কৃষি শ্রমিকের সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। নগরমুখী জন স্রোত ঠেকাতে না পাররে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বড় বড় নগরগুলোতে নাগরিক সমস্যা আরও বাড়বে। এজন্য তিনি সারাদেশে সমন্বিত উন্ননের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

ইকবাল হাবিব
স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, উন্নয়ন জনগণের জন্য, কিন্তু জনআকাক্সক্ষা বাদ দিয়ে উন্নয়ন হলে তা টেকসই হবে না। তার সুফলও জনগণ পাবে না। টেকসই উন্নয়নের পুর্বশর্ত হল বৈষম্যহীন, পরিবেশ বান্ধব এবং অর্থনীতির সাথে সম্পর্কিত হওয়া। বেশিরভাগ উন্নয়ন প্রকল্পে এসব শর্ত মানা হচ্ছে না। কোন প্রকল্পই জনবান্ধব হচ্ছে না। চট্টগ্রাম শহর পাহাড় কাটার জন্য বিখ্যাত। স্মার্ট সিটির অর্থ হল তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ নাগরিক সকল সুবিধা সম্বলিত নগর ব্যবস্থা। গণপরিবহন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও হতে হবে স্মার্ট।

চিটাগাং চেম্বারের সাবেক পরিচালক আমিরুল হক বলেন, স্বপ্ন দেখি সিঙ্গাপুর পানির নিচে মুরাদপুর। এটিই এখন চরম বাস্তবতা। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সারাদেশে পণ্যবাহী ট্রাক যাবে অথচ পোর্ট কানেকটিং রোড চার বছর ধরে অচল। বন্দরনগরী হিসেবে এটি আমাদের জন্য লজ্জার। নগরীতে একের পর এক ফ্লাইওভার হচ্ছে। অথচ সারা শহরে ট্রাক চলছে। যানজটে অচল সবকিছু। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে।
চিটাগাং চেম্বারের পরিচালক সাইয়েদ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, মীরসরাই এবং আনোয়ারা অথনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ শুরু হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যাপকহারে দক্ষ জনশক্তির চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। আগামী ১০ বছরে এসব শিল্পাঞ্চলে লাখ লাখ যুবকের কর্মসংস্থান হবে।

চিটাগাং ক্লাবের সাবেক সভাপতি মো. আবদুর রহিম বলেন, নতুন প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য মহানগরী রেখে যোতে হবে। এজন্য দরকার পরিকল্পিত উন্নয়ন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই চট্টগ্রামের উন্নয়ন করতে হবে। গণপরিবহন ব্যবস্থায় দরিদ্র মানুষের সুবিধা রাখতে হবে।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এ কিউ চৌধুরী বলেন, স্মার্ট সিটি করতে হলে সদিচ্ছাই যথেষ্ট। ডিজিটাল বাংলাদেশের সাথে স্মার্ট সিটির সম্পর্ক রয়েছে। আমরা জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছি, স্মার্ট কার্ডও পেয়েছি, ই-পাসপোর্টের যুগে এখন বাংলাদেশ। উন্নয়ন প্রকল্পের পাশপাশি ডিজিটালাইজেশন এবং সেসাথে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। এজন্য শিক্ষা ব্যবস্থার দিকেও নজর দেয়া দরকার।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, স্মার্ট সিটির জন্য স্মার্ট নাগরিক দরকার। আগামী প্রজন্মের মেধা বিকাশের পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য নগরীতে পর্যাপ্ত খেলার মাঠের ব্যবস্থা থাকতে হবে। গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে রুহি মোরশেদ আহমদ বলেন, উন্নত নগরীর জন্য দরকার উন্নত এবং শিক্ষিত নাগরিক। এ মহানগরীকে নারী এবং শিশুদের জন্য নিরাপদ রাখা জরুরি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন