প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে এটি উদ্বোধন করেন। জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলাবাসী পেলেন নতুন এসি ট্রেন। ‘জামালপুর এক্সপ্রেস’ নামে ট্রেনটি জেলায় দ্বিতীয় এসি ট্রেন হলেও সরিষাবাড়ী উপজেলাবাসী দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে প্রথমবারের মতো নতুন এসি ট্রেন সুবিধা পেল। এছাড়া সরিষাবাড়ী থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু (পূর্ব) স্টেশন হয়ে লিঙ্ক রেলরুটে সরাসরি ঢাকাগামী প্রথম ট্রেন এটি।
ট্রেন উদ্বোধন উপলক্ষে জামালপুর রেলওয়ে জংশন ও সরিষাবাড়ী মতিয়র রহমান তালুকদার রেলওয়ে স্টেশনে পৃথক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মতিয়র রহমান তালুকদার রেলওয়ে স্টেশনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী আলহাজ ডা. মো. মুরাদ হাসান এমপি, এএসপি শিবলি সাদিক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিহাব উদ্দিন আহমেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ ছানোয়ার হোসেন বাদশা, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জেলী আক্তারসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১১.১৩টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ‘জামালপুর এক্সপ্রেস’ ট্রেনসহ কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধন করেন। তারপর ফুলে ফুলে সজ্জিত ট্রেনটি জামালপুর জংশন থেকে দুপুর ১.২০টায় মতিয়র রহমান তালুকদার স্টেশনে পৌঁছে। স্থানীয় এমপি ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান জাতীয় পতাকা হাতে ট্রেনটি স্বাগত জানান। এসময় রেলপথের দুই পাশে হাজার হাজার উৎসুক জনতা করতালি দিয়ে অভ্যর্থনা জানায়।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ৬২০ আসনের ‘জামালপুর এক্সপ্রেস’ ট্রেনে ১১০টি এসি সিট ও ৫১০টি শোভন চেয়ার রয়েছে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সকাল ১০.৩০টায় জামালপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে। ট্রেনটি টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু (পূর্ব) স্টেশন হয়ে সরিষাবাড়ী স্টেশনে বিকাল ৩.১৩টায় ও জামালপুর জংশনে বিকাল ৪.০৫টায় পৌঁছবে। জামালপুর জংশন থেকে বিকাল ৫.৪৫টায় ও সরিষাবাড়ী স্টেশন থেকে সন্ধ্যা ৬.৪৫টায় রওনা করে পুণরায় বঙ্গবন্ধু সেতু (পূর্ব) ও টাঙ্গাইল স্টেশন হয়ে ট্রেনটি রাত ১১.৩০টায় ঢাকায় পৌঁছবে। ঢাকা থেকে জামালপুর ও সরিষাবাড়ী পর্যন্ত প্রতিটি এসি সিট ৩৮৬ টাকা ও শোভন চেয়ার ২০০ টাকা করে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি প্রতি রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে।
জানা গেছে, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু উদ্বোধনের পর জামালপুর-সরিষাবাড়ী তথা ময়মনসিংহ বিভাগের প্রায় দুই কোটি মানুষের উত্তরবঙ্গে সরাসরি যাতায়াত সুবিধার জন্য লিঙ্ক রেলরুট বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেছিলেন তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুজিবনগর সরকারের বিচারপতি এডভোকেট মতিয়র রহমান তালুকদার। পরবর্তীতে এ কমিটির দীর্ঘ আন্দোলনের পর ২১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে তারাকান্দি থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু (পূর্ব) পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করে সরকার। ২০১২ সালের ৩০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ রেলপথ উদ্বোধন করেন। এ রুটে ময়মনসিংহ থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু (পূর্ব) পর্যন্ত তিনটি লোকাল ট্রেন চলাচল থাকলেও কোনো আন্তঃনগর ট্রেন ছিল না। সরিষাবাড়ী থেকে এ রেলপথে বঙ্গবন্ধু সেতু (পূর্ব) স্টেশন হয়ে সরাসরি ঢাকায় যাতায়াতের জন্য আন্তঃনগর ট্রেনের দাবিও জোরালো হয়ে ওঠে। এ দাবি বাস্তবায়ন করা জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনের এমপি ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল।
উল্লেখ্য, জামালপুরের জেলার মধ্যে শুধুমাত্র ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জগামী ‘তিস্তা এক্সপ্রেস’ ট্রেনে কয়েকটি এসি সিট ছিল। ‘জামালপুর এক্সপ্রেস’ ট্রেন চালু হওয়ায় জেলায় দ্বিতীয়বারের মতো এসি ট্রেন যুক্ত ও সরিষাবাড়ীবাসী প্রথম এসি ট্রেনের সুবিধা পাচ্ছে।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন,‘এ রেলপথটি বাস্তবায়নসহ উত্তরবঙ্গ ও ঢাকায় ট্রেন চালুকরণ আমার বাবার লালিত স্বপ্ন ছিল। যা এখন বাস্তবে রূপ লাভ করেছে। নতুন ট্রেন মুজিববর্ষে জামালপুরের ২৬ লাখ মানুষের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার। এ জন্য প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন