সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আবার ধাক্কা খেল ভারত। এই আইনের বিরুদ্ধে এ বার পদক্ষেপ নিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এই আইনকে ‘বৈষম্যমূলক’ এবং ‘ভয়ানক বিভাজনকারী’ চিহ্নিত করে পার্লামেন্টে নিন্দা প্রস্তাব উপস্থাপন করল ইইউ-এর সোশ্যালিস্ট অ্যান্ড ডেমোক্র্যাটস গ্রুপ (এস অ্যান্ড ডি)। ২৪টি দেশের সোশ্যাল অ্যান্ড ডেমোক্র্যাট গ্রুপের ১৫৪ জন সদস্যের সমর্থনে এই প্রস্তাব উপস্থাপতি হয়েছে।
আগামী ২৯ জানুয়ারি এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে ব্রাসেলসে ইইউ-এর পার্লামেন্টে। ভোটাভুটি হবে ৩০ জানুয়ারি। ইইউ-এর সদস্যরা ‘সিএএ’ এবং ‘এনআরসি’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সেই সঙ্গে তারা আশঙ্কাও প্রকাশ করেছে, ভারত সরকারের এই নীতির কারণে বহু মুসলমান নাগরিককে দেশছাড়া হতে হবে। শুধু তাই নয়, সিএএ-র প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে ভারত সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তারও তীব্র নিন্দা করেছে এস অ্যান্ড ডি গ্রুপ।
জাতি-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে সব নাগরিকের অধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক আইন রয়েছে। সেই আইনের কথা যেন ভারত মাথায় রাখে। প্রস্তাবে ভারত সরকারকে এটাও মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন সদস্যরা। শুধু তাই নয়, সূত্র মারফত জানা গেছে, সিএএ-র বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা এবং এ ব্যাপারে তাদের দাবি শোনার জন্য ভারত সরকারকে অনুরোধ জানাতে চলেছে ইইউ। গত ৫ জানুয়ারি জেএনএউতে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে ওই প্রস্তাবে।
প্রস্তাবটিতে বলা হয়েছে, ‘সিএএ সরকারের হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডাকে তুলে ধরে অত্যন্ত বিপজ্জনক একটি নজির তৈরি করছে। এই আইনের প্রকৃতিটাই বিভাজনকামী, কারণ এতে অন্য ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলির যে অধিকার তার থেকে মুসলিমদের ক্ষেত্রে বিভেদ ঘটানো হচ্ছে।’ প্রস্তাবে অভিযোগ করা হয়েছে, সিএএ মানবাধিকার, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার রক্ষা এবং সব ধরনের জাতি বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের প্রতি ভারতের দায়বদ্ধতার পরিপন্থী। জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে নিপীড়িত আখ্যা দিলেও সিএএ-তে কেন তাদের বাদ রাখা হল, তোলা হয়েছে সেই প্রশ্ন। ভারতে বসবাসকারী তামিল উদ্বাস্তু, পাকিস্তানের আহমেদি ও হাজারা, বাংলাদেশের বিহারি মুসলিমদের প্রতিও সিএএ বৈষম্যমূলক বলে অভিমত প্রস্তাবটির।
এস অ্যান্ড ডি গোষ্ঠীর প্রস্তাবে সিএএ-র বিরুদ্ধে ভারত জোড়া প্রতিবাদের প্রসঙ্গও উল্লিখিত হয়েছে। বলা হয়েছে, এই প্রতিবাদের জেরে ২৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, ১৭৫ জন আহত হয়েছেন। গ্রেফতার হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। প্রতিবাদের কণ্ঠরোধ করতে কশ্মীরে ইন্টারনেট বন্ধ করা, কারফিউ জারি এবং বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে পুলিশি অত্যাচারের কথা তুলে ধরে ভারতকে জাতিসংঘের ঘোষিত নীতি মেনে চলতে বলেছেন পার্লামেন্টের সদস্যরা।
ইইউ-এর পাশাপাশি সিএএ নিয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। দেশটির দুই কক্ষেই সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রস্তাব উপস্থাপিত হয়েছে। তবে ভোটাভুটির জন্য সিনেটে বিষয়টি উত্থাপিত হয়নি। এই আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি)-এর সদস্যরাও।
গত কয়েক মাস ধরে প্রথমে কাশ্মীর এবং পরে এনআরসি-সিএএ নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে অস্বস্তি বাড়ছে নরেন্দ্র মোদি সরকারের। দেশের ভিতরে প্রতিবাদ যত বাড়ছে, সেই সঙ্কেত পৌঁছে যাচ্ছে আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশে। কাশ্মীর নিয়ে যাতে জাতিসংঘে ভারতের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনা হয় সে জন্য চেষ্টা করছে বেইজিং। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের ভাবমূর্তি অটুট রাখা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে মোদি সরকারের জন্য। সূত্র : ইন্ডিয়া টুডে, টিওআই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন