বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ভাগ্য বদলে দিতে পারে বলসুন্দরী

মো. আশিকুর রহমান, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

সংসারে অভাবের কারণে কবিরুস সোবহান ৮ম শ্রেণী পাশের পর আর এগুতে পারেননি। বাধ্য হয়ে অন্য ভাইদের সাথে নামতে হয়েছে কৃষি কাজে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে পৃথক হয়ে সংসার পাততে হয়েছে তাকে। তখন পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া মাত্র দেড় বিঘা চাষের জমি ছিল সম্বল। সে সময়ে অভাবের তান্ডবে পরের ক্ষেতে কামলার কাজ করতে হয়েছে। কিন্ত কখনও তিনি হতাশ হননি। বরং সংসারকে মনে করেছেন একটি যুদ্ধ ক্ষেত্র। তাই দৃঢ় মনোবলকে পুঁজি করে পরিশ্রমের মাধ্যমে আজ হয়েছেন উপজেলার মধ্যে একজন আদর্শ কৃষক। মাত্র ২০ বছরের ব্যবধানে তিনি মোট ১২ বিঘা জমি কিনেছেন। সুন্দর একটি বসতবাড়ি তৈরি করেছেন। ফল নষ্টের হাত বাঁচাতে ১২ লাখ টাকা খরচ করে মাঠেই নির্মাণ করেছেন একটি কোল্ড স্টোরেজ। বর্তমানে নিজের ও লিজ নেয়া মিলে মোট ২৪ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ফলের চাষ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৭ বিঘা জমিতে বল সুন্দরী ফলের চাষ করে চারপাশে সাড়া ফেলে দিয়েছেন। এমন সফল কৃষক ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের ত্রিলোচনপুর গ্রামের ওয়াহেদুস সোবহানের ছেলে।
সরেজমিনে কবিরুস সোবহানের গ্রামের মাঠে দেখা যায়, মাটির সামান্য একটু ওপর থেকেই সব কুলগাছের ডালপালা চারদিক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিনিটি ডালে প্রচুর পরিমানে কুল ধরে মাটিতে নুয়ে পড়ছে। অবস্থাটা এমন গাছের পাতার চেয়ে কুল বেশি দেখা যাচ্ছে। বাঁশের খুটি দিয়ে ডালপালাগুলো ঠেকানো হয়েছে। এ জাতের কুলগুলো দেখতে ঠিক অস্ট্রেলিয়ান আপেলের মত। কিন্ত আকারে একটু ছোট। ক্ষেতের পাখি ঠেকাতে সারা ক্ষেতের উপর দিয়ে টানানো রশিতে বেধে দেয়া হয়েছে বিশেষ ধরনের বোতল। ক্ষেতের পাহারাদার ক্ষেতের মাঝখানের কুড়ের মধ্য থেকে রশি ধরে খানিক পরপর টানছে আর ছাড়ছেন এতে এক ধরনের শব্দ তৈরি হচ্ছে। এতে কোন পাখিই ক্ষেতের কুল নষ্ট করতে পারছে না। ওই মাঠের একটু দূরে আরেকটি ক্ষেতে রয়েছে একই জাতের কুল। সে ক্ষেতটিতেও একইভাবে চাষ করা হয়েছে বল সুন্দরী জাতের কুল। এ ক্ষেতটিতে কুলের ধরটা আরও বেশি। রঙটাও বেশ আকর্ষণীয়।
ক্ষেতেই দেখা হয় কৃষক কবিরুস সোবহানের সাথে। তিনি জানান, সাংসারিক জীবনে অভাবের তান্ডবে খুব কষ্ট করেছেন। কিন্ত তার বিশ্বাস ছিল পরিশ্রম করেই সফল হবেন। অর্থ না থাকলেও আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে ২০০০ সালে প্রথমে কিছু ধারদেনার মাধ্যমে নিজের দেড় বিঘা জমিতে গাঁদা ফুলের চাষ শুরু করেন। লাভ পেয়ে এ চাষেই জমি বর্গা নিয়ে ফুলচাষ বাড়াতে থাকেন।
এভাবে ১২ বছর ফুলের চাষের মাধ্যমে বেশ সফল হন তিনি। এরপর ফলচাষে আরও সফলতা ধরা দেয়। তিনি বলেন, বর্তমানে তার সাড়ে ৭ বিঘা জমিতে এ এলাকার জন্য প্রথম বল সুন্দরী জাতের কুল, ১০ বিঘা থাই পেয়ারা, ৩ বিঘা জমিতে ড্রাগন, ৩ বিঘা জমিতে বারোমাসী জাতের আমের চাষ রয়েছে।
বল সুন্দরী কুল দেখতে অস্ট্রেলিয়ান ছোট আপেলের চেয়ে একটু ছোট। কিন্ত স্বাদে কড়া মিষ্টি। অন্যান্য জাতের কুল বাজারে অপেক্ষাকৃত কম দাম হলেও বল সুন্দরী কুল স্বাদের জন্যই প্রতিকেজি ৮০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। তার আশা, সাড়ে সাত বিঘা কুল থেকে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা আসবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান, এ এলাকায় যেন ফলের বিপ্লব ঘটে গেছে। কবিরুস সোবহান অনেক পরিশ্রম করে বিভিন্ন ধরনের ফলের চাষ করেছেন। তার মধ্যে বল সুন্দরী কুল যেভাবে গাছে ধরে আছে দেখলে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। এ কুল স্বাদে কড়া মিষ্টি। বেশ লাভ পাবেন কৃষক কবিরুস সোবহান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন