শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ফেনীতে বালুমহালে লুটতরাজ হারিয়ে যাচ্ছে ফসলী জমি-বসতভিটা

মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, ছাগলনাইয়া থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

ফেনীতে বালু মহাল নিয়ে চলছে হরিলুট কান্ড। সরকারি নির্দিষ্ট নীতিমালা অমান্য করে যথেচ্ছা বালু তুলছে এক শ্রেণির প্রভাবশালী মহল। ইজারা করা বালু মহালের সরকারি নির্দিষ্ট সীমারেখার বাইরে গিয়ে বালু তোলায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদী ও এর আশপাশের জনপদ। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে প্রতি বছর নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার একর জমি, বিলীন হচ্ছে বসতভিটা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন অংশ।
ফেনী প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, জেলার চারটি উপজেলায় আটটি বালু মহাল রয়েছে। ছাগলনাইয়া উপজেলায় ফেনী নদী বালু মহালের অংশ। এ মহালটির মোট আয়তন প্রায় ২৪ একর। চলতি বছর ইজারা দেওয়া হয়েছে ১৩ লাখ ২৬ হাজার টাকায়। ইজারাদার মাহি এন্টারপ্রাইজ। ছাগলনাইয়া উপজেলায় ফুলছড়ি বালু মহালের অংশ। ৯ নম্বর দক্ষিণ যশপুর মৌজায় এর অবস্থান। এ মহালটির মোট আয়তন প্রায় ৩ একর ১১ শতাংশ। চলতি বছর ইজারা দেওয়া হয়েছে সাত লাখ টাকায়। ইজারাদার মিজান টিম্বার অ্যান্ড ফার্নিচার। দিয়ারা ১১৭ নম্বর জয়চাঁদপুর মৌজায় এর অবস্থান। এ মহালটির মোট আয়তন প্রায় ১৫ একর। একই উপজেলার ১১১ নম্বর উদয় মহাজনের চর, ১২২ নম্বর তিলকের চর, ১১৩ নম্বর জয়পুর মৌজার বালু মহালগুলো চলতি বছর ইজারা দেওয়া হয়েছে ৪৪ লাখ ১০ হাজার টাকায়। মহালগুলোর ইজারাদাররা হলেন- রওশন আরা এন্টারপ্রাইজ। একই উপজেলার মহামায়া ছড়া বালু মহাল, ৭ নম্বর উত্তর সতর মৌজায় অবস্থিত।
চলতি বছর ইজারা দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। ইজারাদার-এ হক ট্রেডিং এজেন্সি। ছাগলনাইয়া উপজেলার ১২১ নম্বর উদয় মহাজনের চর যাহা শুভপুর ব্রিজের আশপাশের এলাকা।
দরপত্রের শর্তে শুভপুর ব্রিজের আধা কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন করা যাবে না নির্দেশনা থাকলেও, ইজারাদার তা অমান্য করে ব্রিজের আশপাশ থেকে বালু উত্তোলন করায় শত বছরের ঐতিহ্য এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত শুভপুর ব্রিজটি আজ হুমকির মুখে। এর মধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় মহুরী নদীর যে বালু মহালটি রয়েছে তার আয়তনের পরিধি ১০ একর থেকে বেড়ে ১২৯ একর দাঁড়ালেও দীর্ঘ প্রায় ১২ বছরে নেই কোনো ইজারা। অথচ এ বালু মহাল থেকে অবৈধভাবে প্রতি বছর কোটি টাকার বালু উত্তোলন হলেও বিপুল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ১৪২৬ বাংলা বছরের জন্য এ মহালটির ইজারা মূল্য ধরা হয় ৪৪ লাখ টাকা। এতে দেখা যাচ্ছে ইজারা না হওয়ায় গত ১২ বছরে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে প্রায় ৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ মহালটি ইজারার জন্য প্রতি বছর বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও এক শ্রেণির প্রভাবশালী মহল সিন্ডিকেট তৈরি করে নিজেরা যেমন কোনো দরপত্র দাখিল করে না, আবার অন্যদেরও দরপত্র জমা দিতে বাঁধা দেয়। এ সুযোগে বিনা ইজারায় ওই প্রভাবশালী চক্রটি অবৈধভাবে উত্তোলন করে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার বালু। জেলা প্রশাসনের তালিকায় আটটি বালু মহাল থাকলেও প্রায় ৩০/৩৫ স্থান থেকে তোলা হয় বালু। জেলার বৈধ সাতটি বালু মহালের একটি হলো পরশুরামে মুহুরী নদীর বালু মহাল (১ নম্বর অংশ)। এটি ২১ নম্বর বাউরখুমা মৌজায় অবস্থিত। এ মহালটির মোট আয়তন পরিমাণ প্রায় ৩৩ একর। চলতি বছর ইজারা দেওয়া হয়েছে ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। ইজারাদার শাপলা ট্রেডার্স। সোনাগাজীর সোনাপুর বালু মহাল ৭ নম্বর সোনাপুর, ৬৯ নম্বর থাকখোয়াজের লামছি মৌজায় অবস্থিত। চলতি বছর ইজারা দেওয়া হয়েছে ২৭ লাখ টাকায়। ইজারাদার প্রত্যয় এন্টারপ্রাইজ। একই উপজেলায় চর দরবেশ উপজেলার বালু মহাল। ৯২ নম্বর চর দরবেশ মৌজায় অবস্থিত। চলতি বছর ইজারা দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকায়। ইজারাদার মেসার্স সোনাগাজী ট্রেডার্স।
অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে ছাগলনাইয়ার দক্ষিণ লাঙ্গলমোড়া থেকে উত্তর লাঙ্গলমোড়া নুর আহাম্মদ কোম্পানীর বাড়ী পর্যন্ত অসংখ্য বাড়ী ঘর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় ঘোপাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল হক মানিক ও ক্ষতিগ্রস্থ শহিদুল্লাহ আজাদ, শাহ আলম, মিলন ও দ্বীন মোহাম্মদ। অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে জগন্নাথ সোনাপুর, জয়চাঁদপুর ও জয়পুর গ্রামের অসংখ্য মানুষ ভিটে বাড়ী হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। জেলা পুলিশ সুপার খোন্দকার নুরুন্নবী জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বলেন, অবৈধ বালু উত্তোনকারীদের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালনা করা হবে। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের কোনো ছাড় নয় বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ফেনী জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান। নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন